আমরা যদি সাম্প্রতিক দশকগুলির ঘটনাবলীর দিকে নজর পেশ করি, তাহলে বুঝব উন্নয়ন
আর বিজ্ঞান ঘোড়ার সঙ্গে গাড়ি জোতার মত করে ঘনিষ্ঠভাবে এগিয়ে চলেছে। বিজ্ঞানের
সঙ্গে উন্নয়নের অঙ্গাঙ্গী সম্পর্কের জন্যই আমাদের মত অপশ্চিমি সমাজে উন্নয়নের
চাহিদা তৈরি হল। আমাদের বলে দেওয়া হল উন্নয়নের আগে আমরা ছিলাম এক্কেবারে
প্রাকৃতিক, একটা অপশ্চিমি জড় বস্তু এবং আমরা যুক্তিবাদী তো ছিলামই না বা বৈজ্ঞানিক
মনোভাবাপন্নও ছিলাম না আর পশ্চিমি বিজ্ঞানের মত চতুরও(slickness) ছিলাম না। জনগণ, সমাজ এবং প্রকৃতির সঙ্গে এই চরিত্রগুলো
জোড়া ছিল না বলেই তারা এমনিতেই পিছিয়ে পড়া ছিল। বড় বড় কারখানা নেই বলেই গোটা
এলাকাকেই পরিকল্পকেরা পিছিয়ে পড়া দাগিয়ে দিলেন(এবং আজও বিপুল বিশাল কারখানা আদতে
বিজ্ঞানের নবতম উন্নয়নের চরিত্র হিসেবে চিহ্নিত হল)। বলা হল এই পিছিয়েপড়াটা
প্রতিস্থাপিত হবে উন্নয়নের ঠেলায়। এটা নাকি গত কয়েক দশকে বিজ্ঞান বিশাল গভীর
অভিজ্ঞতার ভণ্ডার আধুনিকতম বৈজ্ঞানিকতা ব্যবহার করে, মানুষ আর প্রকৃতিকে আরও
ভালোভাবে ব্যবস্থাপনার নজির দেখাবে।
বিজ্ঞান আকাঙ্ক্ষিত কারণ এটি উন্নয়নকে সহনসাধ্য বানায়। যদি কেউ তার সঙ্গে
অঙ্গীভূত দক্ষতার উন্নয়ন ঘটায়, তাহলে উন্নয়নের কোন সীমা থাকবে না এবং ধনী হয়ে
উঠবে। বিজ্ঞান আর উন্নয়ন পারস্পরিক যৌথতার সম্পর্ককে নিশ্চিত করল; বৃত্তীয়ভাবে একে
অপরের গ্রহণযোগ্যতাকে বৈধতা দান করল এমনভাবে যাতে, ‘তুমি আমার পিঠ চাপড়ে দিলে,
আমিও তোমার পিঠ চাপড়াই’।
বিজ্ঞানের সঙ্গে উন্নয়নের শুধু পারস্পরিক সম্পর্কই বর্তমান নয়, এদের মধ্যে
সম্পর্ক আদতে জন্মগত। এই জন্মের সম্পর্কটার শেকড় আমরা শিল্পবিপ্লবের আঁতুড়ঘরে খোঁজ
করতে পারি, যখন প্রথম বিজ্ঞানের সঙ্গে শিল্পের মেলবন্ধন ঘটল। আশাকরি এই তথ্যটা
পাঠককে হতবাক করে দেবে না। শিল্পের অভিজ্ঞতা থেকে বেশ কিছু বৈজ্ঞানিকতার মূল
সূত্রগুলির উতসার হয়েছে। তাপগতিবিদ্যার(Thermodynamics) দ্বিতীয়
সূত্রটির উদ্ভব ঘটেছে বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের কর্মকুশলতা বৃদ্ধি এবং শিল্প বিকাশের
ধারণার চেষ্টা থেকে।
সি ভি শেষাদ্রি Development and Thermodynamics গবেষণায় জানিয়েছেন ঐতিহাসিকভাবে কোন সূত্রে শিল্প আর
বিজ্ঞানের মিলন ঘটল। শেষাদ্রির মতে তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রটি
গোষ্ঠীকেন্দ্রিক(ethnocentric)। তার অভিযোগ এটি
যেহেতু শিল্প বিপ্লবের আঁতুড়ঘরে জন্ম, তাই এই দ্বিতীয় সূত্রটি অতিরিক্ত সম্পদের
বন্টন বিষয়ে, বড় পুঁজির শিল্পের স্বার্থানুযায়ী, শক্তির সংজ্ঞা নির্ধারণ করে(এবং
এটি ছোট পরম্পরার উৎপাদনের স্বার্থের পরিপন্থী)। শেষাদ্রি, বালাজীর সঙ্গে আরেকটি
প্রবন্ধে লেখেন, The law of
entropy, backed by its authority, provides a criterion for utilization of energy available
from various resources. This criterion, known as the concept of efficiency, is a
corollary to the law of entropy and came into existence along with the law.
The efficiency criterion stipulates that the loss of available energy in a
conversion becomes smaller as the temperature at which the conversion is
effected is higher above the ambient. Therefore, high temperatures are of high
value and so are resources such as petroleum, coal, etc., which can help achieve
such temperatures. In this sense, the law of entropy provides a guideline
for the extraction of resources and their utilization.(সূত্র C.V. Seshadri and V. Balaji, Towards a New Science of
Agriculture, Madras:
MCRC, n.d., p. .)।
ওপরে দক্ষতার সংজ্ঞা করা হয়েছে প্রযুক্তি এবং উৎপাদনশীল কাজের
চরিত্রায়নের উদ্দেশ্য। আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গীতে দক্ষাতাকে বিচার করা হয় আরও
আরও বেশি বেশি উন্নয়নের প্রেক্ষিতে। আধুনিক বিজ্ঞানের মৌল উদ্দেশ্যই হল একটি বিশেষ
ধরণের সম্পদ ব্যবহারের প্রক্রিয়াকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া।
এই বিজ্ঞানের সঙ্গে জুড়ে থাকা বিজ্ঞান, নিজেই নিজেকে
চরিত্রায়িত করে বৈধতা দানের উদেশ্যে। একই সঙ্গে এই কারণেই আধুনিক বিজ্ঞানের বাইরে,
তার ধারণা, জ্ঞানের বাইরে যে সব সম্পদ অবস্থান করছে, সেগুলির দখল নেওয়ার
উদ্দেশ্যকেও সে বৈধতা দান করে। ঠিক যেভাবে অর্থনীতি তার আওতার বাইরে থাকা অভাবের
ধারণাটি তৈরি করেছে, ঠিক সেভাবে তাপগতিবিদ্যা প্রতিযোগিতা উছেদের জন্য thermodynamic efficiency তত্ত্ব বিকাশ ঘটিয়েছে।
(ক্রমশঃ)
উলফগাং শ্যাকস সম্পাদিত দ্য ডেভেলাপমেন্ট ডিক্সনারি, আ গাইড টু নলেজ এজ পাওয়ার
থেকে
No comments:
Post a Comment