Tuesday, January 16, 2018

উপনিবেশর্পূব ব্যবসা - পূর্ব উপকূলের বন্দর১ - ওম প্রকাশ

ভারতের পূর্ব উপকূলে দুটি প্রধান বন্দর এলাকা বাংলা আর কমন্ডল। করমণ্ডল উপকূলের ব্যপ্তি ছিল গোদাবরী পয়েন্ট থেকে মান্নারের দ্বীপ পর্যন্ত এবং দক্ষিণে ফিশারী পয়েন্ট পর্যন্ত। বাংলার বন্দরগুলির মধ্যে পিপলি আর বালেশ্বর বন্দরও ছিল। দুটি অঞ্চলের বন্দরের মধ্যে বিপুল পরিমানে পণ্য বিকিকিনি চলত। সে ব্যবসায় বাংলার বণিকদের প্রাধান্য ছিল অবিসংবাদী। ষোড়শ শতকের শুরুতে আমরা পুলিকট বন্দরের প্রাধান্যের ইঙ্গিত পাচ্ছি যা দাক্ষিণাত্যের দুটি প্রধান অঞ্চল একটি তিরুপতি, অন্যটি পেনুকোণ্ডা মার্ফৎ যুক্ত ছিল উতরপশ্চিমের বর্ধিষ্ণু রাজ্য বিজয়নগরের সঙ্গে। তার পরের গুরুত্বপূর্ণ বন্দরটির নাম ছিল দক্ষিণ করমণ্ডল উপকূলের নাগপট্টিনাম, যার আরও দুটি ছোট বন্দর কুঞ্জিমেডু এবং নাগুরু ছিল। উত্তর করমণ্ডলের মছলিপত্তনম এ সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে নি।

বাংলার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ছিল চট্টগ্রাম, তার মূল যোগ ছিল বাংলার ব্যবসাকেন্দ্র এবং রাজধানী গৌড়ের সঙ্গে। ১৫৮০র দিকে সাতগাঁও গুরুত্বের দিক থেকে চট্টগ্রামের পরে। সাতগাঁর পরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে হুগলী। এ অঞ্চলের আরও দুটি বন্দর ছিল পিপলি আর বালেশ্বর।

পুলিকট থেকে সমুদ্র বাণিজ্য দুটি প্রান্তে যেত, একদিকে দক্ষিণ বর্মার মারগুই এবং ইরাবতীর বদ্বীপ এবং পূর্ব দিকে মালাক্কা এবং আরও পূর্বের দ্বীপসমূহে। তবে পেগু আর নিম্ন বার্মার মার্টাবান এবং কসমিন বন্দরের সঙ্গে যে পরিমান বাণিজ্য হত, মারগুইএর সঙ্গে তত বেশি বাণিজ্য হত না। পুলিকটের মূল রপ্তানি ছিল করমণ্ডল উপকূলের নানান ধরণের বস্ত্র এবং কৃষ্ণা বদ্বীপের লাল সুতা। করমণ্ডল আমদানি করত সোনা, রুবি, কাঠ, টিন, হাতির দাঁত এবং তামা। মার্টাবানের পর্তুগিজ কুঠিয়াল এন্টোনিও ডিনিস ১৫১৬ লিখছেন কসমিন আর করমণ্ডলের মধ্যে বছরে একটা বড় এবং পাঁচটা ছোট জাহাজ পণ্য ফেরি করত। ষোড়শ শতকে পুলিকট থেকে মালাক্কায় বাৎসরিক গড় বস্ত্র রপ্তানির পরিমান ছিল ১৭৫০০০ ক্রুজাদো। এছাড়া বছরে একটি জাহাজ উত্তরের সুমাত্রার পিডি বন্দরে এবং একটি পাসাই থেকে করমণ্ডলের দিকে রওনা হত। পুলিকটের আমদানি ছিল ইন্দোনেশিয় মশলা, বিভিন্ন কাঠ, সোনা এবং অন্যান্য অদামি ধাতু যেমন টিন, তামা, quicksilver এবং সিঁদুর(vermilion)।

পুলিকটের গুরুত্বপূর্ণ বণিকেরা উপকূলীয় দক্ষিণপূর্ব ভারতের মুসলমান যাদের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় চুলিয়া(Chulias) এবং করমণ্ডলে এদের মারাক্কায়ার(Marakkayar) বলা হত। এছাড়াও ছিল বাকিজা অঞ্চলের তেলুগু ভাষী চেট্টি আর কোমাতি সমাজ আর আরমেনিয়রা। মালাক্কার দিকে ব্যবসা করত তামিল আর তেলুগু অরিজিনের তথাকথিত কেলিং ব্যবসায়ী যাদের নাম ছিল নিনা চাটু এবং নিনা সূর্যদেব। মালাক্কার সুলতানও নিজেরা এই ব্যবসায় অংশ নিত।
(European commercial enterprise in pre-colonial India থেকে)
(চলবে)

No comments: