Tuesday, January 23, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - কৃষ্টিশীলতার আগ্রাসন - বাঙালি, বাংলা আর হিন্দি

লেখাটা একটুই বড় হবে। কিন্তু বাংলায় আসা বাঙালিদের কলকাতার হিন্দিভাষীদের লীলা ক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে, এই জাতীয় ব্যাঙ্গার্থক কথার উত্তর দেওয়া জরুরি। এটা যেহেতু দু দেশের মধ্যেকার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়, তাই কঠিন শব্দ ব্যবহার করার থেকে বিরত থাকলাম।
---
মূল কলকাতায় - কলকাতার প্রশাসনিক এলাকায় কলকাতার পৌর সংস্থার ১৪৩টা ওয়ার্ডের মধ্যে ১০০টি ওয়ার্ডে বাঙ্গালিরা সংখ্যালঘু।এটা ঐতিহাসিক সত্য - একদা বাঙালি সংখ্যালঘু মুর্শিদাবাদ শহরের পতনের পর ঔপনিবেশিক কলকাতার পত্তন হয়, তখন থেকেই - পুরনো কলকাতা সুতানুটি গোবিন্দপুর বাদ দিয়ে মূলত অবাংলা ভাষী। আদি কলকাতার শ্বেতাঙ্গ অশ্বেতাঙ্গ অহিন্দিভাষী এলাকায় ব্যাপারটা আলাদা - মনে রাখতে হবে এই অঞ্চলে অবস্থিত ফোর্ট উইলিয়াম কলেজেই কিন্তু হিন্দি ভাষার গোড়াপত্তন ঔপনিবেশিক প্রখ্যাত বাঙালি শিক্ষকদের হাত ধরে।
কলকাতার অবাঙ্গালি বাসিন্দাদের মধ্যে কোন আদি বাসিন্দারই মাতৃভাষা হিন্দি নয় - পাশের বাড়ি ভোজপুর, ওডিসা থেকে রাজস্থানী মাড়োয়াড় থেকে আগতদের প্রত্যেককেই টিভিতে চলা কৃত্রিম হিন্দি গিলে খেয়েছে - আজ প্রত্যেকে ভাষা শুমারিতে হিন্দিভাষী বলে পরিচিত।
গত এক হাজারের বেশি সময় ধরে চাকরিজীবি মধ্যবিত্ত বাঙালি মূলত কখোনো সংস্কৃত, কখোনো ফার্সি কখোনো ইংরেজি, আজ হিন্দির চাকরি করে।
কলকাতা খুঁজতে হবে বৃহত্তর কলকাতায়।
শপিং মল মূলত হিন্দিভাষীদের লীলাক্ষেত্র।
ট্যাক্সি চালকেরা মূলত পাশের ঝাড়খণ্ড বা বিহার থেকে আসা - এদের কারোর মাতৃভাষা হিন্দি নয়।
হ্যাঁ অবশ্যই নানান কারণে কলকাতা নিম্ন আয়ের মানুষের শহর, বহুকাল থেকেই। এটা শ্লাঘার বিষয়। আমরা মনে করি না কলকাতা দিল্লি বা মুম্বইএর মত মূলত ধনীদের শহর। কলকাতা মূলত অহন্দিভাষীদের শহর, যাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিয়েছে হিন্দি আগ্রাসন। পূর্ব ভারতের উচ্ছেদ হওয়া, কাজ না পাওয়া, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া নিম্নবিত্ত গাঁইয়া কলকাতা আর তার আশেপাশের অঞ্চলে কাজ খুঁজতে আসে।
সারা বিশ্বেই কর্পোরেটদের দ্বারা লালিত পালিত সংখ্যাগুরুর মানুষের ভাষা সঙ্খ্যালঘুর ভাষিকদের ওপরে আক্রমণ চালিয়ে এসেছে। বাংলা ভাগের আগে অহমিয়া আর ওডিয়াকে বাঙ্গালিরা বাংলার উপভাষা বলে চালিয়ে এসেছে সে সময়কার শিক্ষিত ঔপনিবেশিক বাঙালি - এখন ক্ষমতা তাদের পক্ষে নয় বলে সেখানকার সঙ্খ্যাগুরুরা তাদের কৃষ্টি চাপিয়ে দিচ্ছে বাঙালিদের ওপরে। আজও এই দুদশক আগেও বাংলার রাজবংশীদের ভাষাকে বাহে ভাষা বলেছিলেন ভাষা সাহিত্যের ইতিহাসের নামী বাঙালি অধ্যাপক অসিতবাবু, এই সেদিনও একে বাংলার উপভাষা বলেছিলেন ভাষা বিজ্ঞানী নির্মল দাস। এগুলো চোখে দেখতে না পাওয়া আগ্রাসন।
গর্গের আন্দোলনে শ্রদ্ধা আছে অবশ্যই। কিন্তু সাধারণ বাঙালি ভাষা জাতীয়তাবাদী নয় বলেই সে কোন আগ্রাসনের বিরোধিতা করে। আমার জাতির আগ্রাসনেও চুপ করে বসে থাকি না।
ভারত একটা বহুভাষিক দেশ। এখানে নানান সময় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার হয়েছেন নানান কৃষ্টির মানুষ।
এ লড়াই আছে থাকবে।
---
টিভিতে কাজ করা প্রখ্যাত বন্ধু-দাদা বলেন বাংলাদেশে হিন্দি চ্যানেলগুলো রমরম করে চলে, ফলে টেলিভিশনে চলা আমার প্রিয় বাংলা নাট্যের অবস্থাও খুব সুখদ নয়।
আমার দুই প্রিয় নায়ক চঞ্চল আর মোশারফ করিমকে আরও বেশি বেশি করে দেখতে চাই।।

No comments: