একই গল্প শুনতে পাওয়া যায় নতুনবাজারের কংসবণিকদের সমাজে – যেটি কাঁসা উৎপাদনের
অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এখানে অত্যাচারী পরশুরাম নয়, মুর্শিদাবাদের শাসক।
শাসক তাকে বলে ধাতুর আয়না বানিয়ে দেওয়ার জন্যে। কিন্তু কারিগর ধাতুর আয়না বানাবার
পদ্ধতি জানত না। অত্যাচারের ভয়ে তারা পালিয়ে যায়। কয়েকজন কলকাতার আশেপাশে বসতি
করে। কেউ কেউ পালিয়ে গিয়ে মাঠের উঁচু ঘাসের আড়ালে আশ্রয় নেয়। তারা শক্তির দেবী
কালির উপাসনা শুরু করে। কালী আবির্ভূত হয়ে কারিগরদের ধাতুর আয়না তৈরির কারিগরি
শিখিয়ে দেয়। এই ঘটনাটি ৫০০ বছর আগে ঘটেছিল বলে জানায়।
বাংলায় তামা নিয়ে কাজ করা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জাতি কর্মকার।
কর্মকারদের বসতির খুব গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হল বিষ্ণুপুর। তামা এবং কাঁসা উভয়
ধাতুতেই তাদের কারিগরি দক্ষতা। আশ্চর্যের বিষয়, কোন এক সময়ে এখানে ৪ হাজার পরিবার
ছিল, কিন্তু তাদের ওপর কংসবণিকদের প্রভাব দেখা যায় না। বিষ্ণুপুরের কর্মকারেরা
একটি অঞ্চলেই বাস করে এবং তারা মনে করে তারা সেই অঞ্চলের আদি বাসিন্দা।
বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের সূত্রে জানতে পারছি তামা আর কাংস কারিগরদের এই শহরে
নিয়ে আসা হয় নয়শ বছর আগে।
তবে কর্মকার হল বাংলার কামারের সংস্কৃত সংস্করণমাত্র, যারা আদতে লোহার কারিগর।
বাংলার মহিষাদলে কর্মকারেরা লোহা আর কাংস উভয় ধাতুতেই কাজ করে।
বিষ্ণুপুরের কর্মকারেরা চারটি জাতিতে বিভক্ত। কিন্তু একটিমাত্র জাতির সঙ্গে মামুদপুর
স্থান নাম যুক্ত। আমরা আগে দেখেছি এই জাতভাগটা কংসবণিকদের মধ্যেও আছে।
বিষ্ণুপুর কর্মকারদের অন্য তিনটি জাতির নাম শুনে মনে হয় তারা আলাদা ধরণের
কারিগর ছিল, পরে তারা কর্মকারদের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। যেমন অষ্টলেই অধিজাতি শুধু
তামার কাজেই দক্ষ নয়, তারা কাঁসা, সোনা আর রূপোরও কাজ করে। মাথায় রাখা দরকার
প্রতিমা তৈরির জন্য বাংলায় প্রচীন কাল থেকে যে ধাতু ব্যবহার হত তাঁর নাম অষ্টলৌহ(বা
অষ্টধাতু - অনুবাদক) আটটি ধাতু। অষ্ট লৌহ হল সোনা, রূপো, তামা, টিন, দস্তা, পারদ,
লোহা এবং কিছু কিছু সময় সীসাও। এটাও হতে পারে, অষ্টলৌহ কর্মকারেরা এমন কিছু
কর্মকারের উত্তরাধিকার বহন করছে, যারা একসময় সব ধরণের ধাতুর কাজের অভিজ্ঞতা ও
জ্ঞান সম্পন্ন ছিল।
আরেকটি জাতি হল বীরালেই। এরা সরাসরি রাজার পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে জানিয়েছে।
তাদের বক্তব্য মল্লরাজারা তাদের সমাজে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দিয়েছে। তারা
ব্রাহ্মণদের মত আচার আচরণ পালন করে। রাজা তাদের উপাধি পণ্ডিত দিয়েছে, সাধারণত পণ্ডিত
উপাধি ব্রাহ্মণেদের হয়।
পাত্রসায়রের কর্মকারদের বক্তব্য সেখানকার জমিদারেরা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে।
তাদের মতে করমকার জাতি সম্প্রতির সৃষ্টি।
No comments:
Post a Comment