সম্রাট রাজ্ঞীর ক্ষত দেখাশোনা করে সারিয়ে তোলার জন্য মুঘল সাম্রাজ্যের ভিষগদের দরবারে আসার জন্যে ডাক দিলেন। রাজদরবারে আসা ভিষগদের নিয়ে তিনি একটি দলও তৈরি করলেন। এঁদের মধ্যে বিশেষ করে তিনি হাকিম মনিমার নাম উল্লেখ করে বলছেন তিনি চিকিৎসাবিদ্যার উদ্ভাবনকুশলতায়(হিকমত ওয়া হাজাকত medical ingenuity) অনন্য ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন হাকিম ফাত আল্লা, হাকিম সালেহ এবং হাকিম আবদ অল রহিম। এছাড়াও দুজন চিকিতসককে আলাদা করে ডাকা হয় হাকিম মাসি অল জামান এবং মুকারব খান। মুকরব খান আইন আল শিফা(সুস্থতার নিধি) নামক চিকিৎসা শাস্ত্র লেখেন, যার ভিত্তি ছিল সিকন্দর শাকে উতসর্গীকৃত মিঞা ভুয়ার(মৃত্যু ১৫১৯) শাস্ত্র মাদান আল শিফায়ি সিকন্দর শাহি(সিকন্দর শাহের চিকিৎসার খনি)। চন্দ্র ভান লিখছেন, সারা দেশ থেকে আগত ভিষগ, বৈদ্য, বৈজ্ঞানিকদের সম্মিলন ঘটল এই উপলক্ষ্যে।
এর থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট হয় যে মুঘল সাম্রাজ্যে অতীত থেকেই ভিষগ পেশাদারদের একটা শৃঙ্খল জ্ঞানচর্চাকারী দল তৈরিই ছিল, যাদের মধ্যে অনেকেই নিজের নামে বিখ্যাতও ছিলেন। প্রত্যেকে পেশাদার হিসেবে আলাদা আলাদা ক্ষেত্রে মাহির ছিলেন, যদিও প্রত্যেককে হাকিম নাম দেওয়া হচ্ছে।
অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ গ্রিকো-হেলেনিয় জ্ঞানচর্চায় যা ভারত-পারস্যিক জ্ঞানচর্চায় য়ুনানি চিকিতসাবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন, যাদের শেকড় আমরা হয়ত খুঁজে পাই এরিস্টটল বা গ্যালেনের সময় থেকেই।তবুও তার পরে শতাব্দের পর শতাব্দ জুড়ে আবু বকর মহম্মদ ইবন জাকারিয়া অল রিজভি (৮৪৫-৯২৫), আবু অল-কাসিম অল হুসেইন ইবন সিনা(ওরফে আবিসিন্না মৃ ১০৩৭) প্রভৃতি প্রখ্যাত চিকিৎসক জ্ঞানী আরবি ফার্সি চিকিতসা শাস্ত্রকে বার বার নবনির্মান করেছেন।
গ্যালেনিয় চিকিৎসা শাস্ত্র ভারতে এসে নতুন ধরণের জীবন লাভ করে ভারত-পারসিক বৈজ্ঞানিকদের হাত ধরে। বিশেষ করে ত্রয়োদশ শতে দিল্লির সুলতানেরা এই জ্ঞানচর্চার সঙ্গে আয়ুর্বেদিয় জ্ঞানচর্চাকে মেশানোর উদ্যম গ্রহণ করার পর থেকে। চন্দ্রভান যখন আমাদের জানাচ্ছেন জাহানারাকে সুস্থ করে তোলার শ্রেয় দেওয়া হছে ইরাণ থেকে মুঘল দরবারে আগত অভিবাসী চিকিৎসক হাকিম মহম্মদ দাউদকে, এটা মনে রাখা দরকার, তিনি তাঁর সময় গ্যালেন(জালিনুস অল জামান) হিসেবে নন্দিত ছিলেন।
এই সময়ের যে বর্ণনা চন্দ্র ভান চাহার চমনে লিখেছেন, সেটা ভারতীয় জ্ঞানচর্চার ইতিহাসে খুব গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছিল, বিশেষ করে চিকিৎসা শাস্ত্রে।আধুনিকপূর্ব ইন্দো-পারসিক চিকিৎসকেদের আজও ধ্রুপদী গ্রিক বা প্রাচীন ভারতীয় বৈজ্ঞানিক পরম্পরার অনুসারী হিসেবেই দ্যাখা হয়। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তাঁরা শুধু ধ্রুপদী শেকড়েই আঁকড়ে বসে ছিলেন, বরং সেই প্রাচীন জ্ঞানকে কালোপযোগী করে তোলার চেষ্টার যে অভাব ছিল না তার বড় প্রমান চন্দ্র ভানের চাহার চমন।
No comments:
Post a Comment