গত বছর আমার মা বিশ্বেশ্বরী পঞ্চাধ্যায়ীকে সম্বর্ধনা দিল জয়া মিত্র সম্পাদিত পত্রিকা ভূমধ্যসাগর। জয়াদি থাকেন আসানসোলে। তাই আমার ভূমধ্যসাগর আসানসোলেই।
সেই পত্রিকায় ২০০৮ সাল থেকে আমার মা লিখছেন আত্মজীবনী 'ঘরের কথা'। না আমার মা বিন্দুমাত্র বিখ্যাত মহিয়সী নারী নন। লেখক তো এক্কেবারেই নন। সারা জীবন ছাত্র-ছাত্রী ঠেঙিয়েছেন আর মেদিনীপুরের ঘাড়কেঁদোদের মত করে একবগগাভাবে সংসার সামলেছেন, রাজনীতি করেছেন, জেল খেটেছেন। কিন্তু তার ছোট্ট শরীর দিয়ে আগলে রেখেছেন আমাদের, আজও।
জয়াদির আগ্রহে শুরু করলেন তাঁর জীবন লেখা কিন্তু কিন্তু করে, কিন্তু ব্যতিক্রমীভাবে তাঁর মায়ের জীবন দিয়ে। দেখতে দেখতে প্রায় ১০ বছর ধরে ভূমধ্যসাগরে একটু একটু করে লিখে চলেছেন আমার অ-লেখিকা মা।
জয়াদির ভাষায় বিশ্বের আত্মজীবনী সাহিত্য যত লেখা হয়েছে, সেরাগুলির মধ্যে থাকবে এটি। হয়ত একজন সম্পাদকই একজন অলেখকের মনের মধ্যে থেকে টেনে বের করে আনতে পারেন তাঁর সাহিত্যিক সত্ত্বা।
জয়াদির প্রকাশনী লোকনদী থেকে এই বইটা প্রকাশ করার ঘোষণাও তিনি করে দিয়েছেন, তাঁর বিজ্ঞাপন আর সঙ্গে মায়ের লেখার পাতা আর ভূমধ্যসাগরের প্রথম পাতা।
এই ফেবু লেখায় সাধারণত ব্যক্তিগত কোন তথ্য দেওয়ার থেকে বিরত থাকি। ক্ষমা করবেন।
জয়াদিদির উত্তর
বিশ্বেন্দুর এই লেখাটার কাছে আমি কী যে কৃতজ্ঞ ! আমি নিজে নিজের পত্রিকার লেখা নিয়ে হয়ত এত গুছিয়ে লিখতে পারতাম না। তাছাড়া এই মহিলার লেখা আমাকে এত মুগ্ধ, আপ্লুত করেছে যে সহজ ভাবে বলে ওঠা মুশকিল। আর সবকিছু বাদ দিয়ে এটুকু বলতে পারি- ভূমধ্যসাগরে একটা নতুন লিখনধারা তৈরি করে দিয়েছেন শ্রীমতী বিশ্বেশ্বরী পঞ্চাধ্যায়ী। তাঁর লেখা চলতে চলতে ছয় বছর পর একটি তরুণী সম্পাদককে বলে ,'জানেন, আমারও মনে পড়ে নিজের ছোটবেলার কথা। আমাদের ভারি সুন্দর গ্রাম ছিল। ইসকুল, রাস্তা, মহুয়া গাছের জঙ্গল পুকুর। সব ওই কোলিয়ারির খাদের মাটির নিচে চাপা পড়ে গেছে। আমাদের সেই হাঁসডিহা গ্রামটা না পৃথিবীতে আর কোথাও নেই'। বিশ্বেশ্বরীর উত্তরকন্যা লিখলেন 'গ্রামের নাম হাঁসডিহা'। আজ একবছর ধরে এই সামান্য পত্রিকার পাতায় যেন আত্মকথনের, স্মৃতিচারণের এক উৎসব চলেছে। কত ধরণের মানুষ কত রকমের স্মৃতি খুঁজে আনছেন। মেলে ধরছেন। আর তৈরি হয়ে উঠছে একটি অঞ্চলের সামাজিক ইতিহাসের এক অন্তরঙ্গ বুনন। এই বুননের গোড়ার বাঁধন ধরে দিয়েছেন বিশ্বেশ্বরী তাঁর অকল্পনীয় লেখনী দিয়ে। আত্মকরুণার লেশ বর্জিত একটি কঠিন জীবন যে কী স্বচ্ছ সরল ভাষায় বিবৃত করা যায়, তাঁর ঘরের কথা তার একটা উদাহরন। আমার ধারণা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আত্মজিবনীগুলোর মধ্যে গণ্য হবার গুণ আছে এই লেখাটির মধ্যে।
No comments:
Post a Comment