এক ব্রাহ্মণ আর এক 'ধর্মান্ধ'
ঐতিহাসিক মহম্মদ সালিহ কাম্বু, শাহজাহানের সময় চন্দ্র ভানকে ছাড়া মাত্র অন্য তিন জনকে গদ্য আর পদ্য উভয়ে আঙ্গিকেই মাহির বলেছেন। সালিহর সঙ্গে চন্দ্র ভানের চিঠি আদান প্রদান হত তার প্রমান সালিহ'র চিঠি সংকলন বাহারইসুখানে চন্দ্র ভানকে জুবায়ি নুক্তা তারাজানই দৌরাণ মুনসিয়ি অল জামানি চন্দর ভান(the cream of discerning intellects of the times, the secretary of the age)রূপে উক্তি করেন। তিনি চন্দ্র ভানের সম্বন্ধে অসম্ভব উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন। চন্দ্র ভানের লেখার অঙ্গিকের সঙ্গে প্রখ্যাত আবুল ফজলের লেখার তুলনা করছেন, যা অসাধারণ তুলনা বললে কম বলা হয়।
সালিহ চন্দ্র ভানকে শাহ জাহান এবং ঔরঙ্গজেবের সময়ের প্রখ্যাততম প্রাশানিকদের সমপর্যায় বলে মনে করতেন। কিন্তু প্রশাসনিক মুন্সি পদে অমুসলমান চন্দ্র ভান একা ছিলেন না। কিছু নাম চন্দ্র ভানের লেখায় পেয়েছি, কিছু নাম অন্য সূত্র থেকে। তেমনি একজন দয়ানত রায়। ১৬৩৯ সালে আফজল খাঁয়ের মৃত্যুর পর একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে তিনি গোটা রাষ্ট্রের আর্থ দপ্তর, দেওয়ানি, সামলেছেন।
অধিকাংশ ইতিহাস বই থেকে প্রায় অদৃশ্য হয়ে যাওয়া আরেক অমুসলমান উচ্চপদ প্রশাসক রাজা রঘুনাথ রায় কায়স্থ(মৃ ১৬৬৪) ১৬৫৬ সালে প্রখ্যাত উজির সাদ আল্লা খানের মৃত্যুর পর প্রায় এক বছর দেওয়ানি সামলেছেন। রঘুনাথ সাদ আল্লা খানের ঘনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছেন। চন্দ্র ভান লিখছেন তার আগে যেমন দয়ানত রায়, তেমনি তার সময়ে রাজা রঘুনাথ। তিনি বলছেন, মীর জুমলা উজির পদাধিকারী হলেও, বাস্তবে কার্যকরী উজির হিসেবে কাজ করেছেন রঘুনাথ। চন্দ্র ভান এবং অন্যান্য আমলা রঘুনাথকে দৈনন্দিনের কাজে সাহায্য করতেন।১৬৫৮ সালে ঔরঙ্গজেব ক্ষমতায় আসার পর, উজির হলেন বিশ্বস্ত মীর জুমলা। তার পরে উজির হিসেবে এলেন জাফর খাঁ, চন্দ্র ভানের চিঠিবন্ধু। জাফর খাঁ মালওয়ার সুবাদার হিসেবে গেলে আবার উজিরাতের কাজ দেখাশোনার কাজ সামলাতে হল রঘুনাথকে।
এবং স্বাভাবিকভাবেই অনেকেরই মনে হতে পারে ঔরঙ্গজেবের মত ধর্মান্ধ সম্রাট ক্ষমতায় আসার পর মুঘল ফরবারি রাজনীতিতে রঘুনাথের মত অমুসলমান ক্ষমতাচ্যুত হন। ঘটল উল্টোটাই। ঔরঙ্গজেব রঘুনাথকে রাজা উপাধি দিলেন এবং জাফর খানের বদলে তাঁকেই উজিরের পদ দেন। রঘুনাথ ঔরঙ্গজেবের সিঙ্ঘাসনের লড়াইতে যেমন সমর্থন করেছেন তেমনি দারার বিরুদ্ধে যুদ্ধও করেছেন। ঔরঙ্গজেবের সিংহাসনে আরোহনের পর রঘুনাথই উজির ছিলেন দীর্ঘ পাঁচ বছর। ঔরঙ্গজেবের সাম্রাজ্যের ষষ্ঠ বছরে মৃত্যু পর্যন্ত। তার মৃত্যুর বহু পরেও ঔরঙ্গজেব নানান চিঠিতে বহুবার রঘুনাথকে অন্যতম প্রধান, গুরুত্বপূর্ণ, দিগদর্শক প্রশাসক আখ্যা দিয়েছেন।
No comments:
Post a Comment