(ছোট্ট আরও কিছু তথ্য যোগ হল)
গত দিন আলোচনা করেছিলাম কাঠ-ধাতুর সেরপাই। আজ শুধু ধাতুর।
বাংলায় পরম্পরার মাপন দ্রব্য তৈরি হত যে অঞ্চলে যে সব দ্রব্য পাওয়া যায় সেগুলি দিয়ে। যেমন কাঠ, যেমন বেত, যেমন বাঁশ, যেমন ধাতু, যেমন মিশ্র দ্রব্য।
বাংলার নানান উতপাদক এই উপাদানগুলি থেকে অনিন্দ্যসুন্দর নানান পরিমাপক বস্তু তৈরি করে দিয়েছিলেন বাংলার মায়েদের জন্য। তাঁরা এই মাপযন্ত্রগুলি নিয়ে অন্তঃপুর সামলাতেন।
নিচের যে মাপন যন্ত্রের ছবি দেখা যাচ্ছে, সেটি ডোকরা পদ্ধতিতে তৈরি প্যাঁচা আকারের। দুটি অংশ। একটি মাথা - যেটি ঢাকনা দেওয়া হয়। অন্যটি তার ধারক বা পেট, যেখানে নানান রমমের দ্রব্য থাকে এবং মাপন করে দেওয়া হয়। গত দিনের সেরপাই প্রকাশনায় জয়াদি যে পাদপূরণ করেছিলেন, সেটি খুব জরুরি মনে করে তুলে দেওয়া গেল। তারপর আবার মূল আলোচনায় ফেরত আসা যাবে। 'অথচ এই সেরপাই, তথাকথিত 'সিউড়ি বোলস' দুই দশক আগেও পুরুলিয়া,বাঁকুড়া মেদিনীপুরের গ্রামে এবং শহরেও নিত্য প্রচলিত ছিল। বেত, সাধারণ কাঠ, দস্তা ইত্যাদি দিয়ে তৈরি হত নিত্যব্যবহার্য্য সেরপাই। পাঁচছ' বছর আগেও পুরুলিয়া শহরের হাটের মোড়ে বিক্রি হতে দেখেছি। বাজারে চলতি সের তরাজুর বদলে অল্প পরিমাণ ধান-চাল, মুড়ি চিড়েমাপার ঘরোয়া কাজে এইসব মাপপাত্রগুলিওই বেশি জনপ্রিয় ছিল, বিশেষত মেয়েদের কাছে। হাট থেকে এগুলির প্রধান ক্রেতা ছিলেন তাঁরাই। মেয়েদের নিজস্ব বেচাকেনা ব্যবস্থায় সের আর পাই নামে এই তিন কিম্বা চারটি এককের সেটই অন্যান্য মাপন একক হিসাবে বেশি জনপ্রিয় ছিল। অবসর সময়ে বসে মেয়েরাই এগুলো তইরিও করতেন।'
ডোকরা পদ্ধতির উতপাদকেরা ছিলেন সাধারণত যাযাবর - আজ তাঁদের এই চরিত্র পালটে দেওয়া হয়েছে সরকারি উদ্যোগে। সেই পরিবর্তনের ছায়া পড়েছে তাঁদের উতপাদন প্রক্রিয়া এবং তাঁদের উতপাদিত বস্তুর গড়নে। সে আলোচনা আজকের বিষয় নয়, সেগুলি বারান্তরে কখোনো করা যাবে। তো এই পরিযায়ী ডোকরা উতপাদকেরা যারা মোমছাঁচ গলানো পদ্ধতিতে ধাতুর নানান দ্রব্য উতপাদন করতেন, তাঁরা যখন কোনো গ্রামের সীমানার বাইরে তাঁদের ভ্রাম্যমান গলন চুল্লি নিয়ে পৌছোতেন কয়েক দিনের জন্য, তখন গ্রামীণদের মধ্যতে তাড়া আসত তাঁদের অকেজো বা ভেঙ্গে যাওয়া নানান ধাতু দ্রব্য থেকে বাড়ির নানান কাজের তৈজসপত্র বানিয়ে নেওয়ার।
এটি ধারণ পাত্র হিসেবেও ব্যবহার হয়।
{জয়াদিদির একটা মন্তব্য জুড়লাম...
Joya Mitra একটা কথা বেশ কিছুদিন ধরে ভাবি। আজ এই ছোট্ট পরিসরে যতোজন সাড়া দিলেন, যতোমনের স্মৃতি আর ভালোবাসা উথলে উঠল তা থেকে আবার ইচ্ছে হচ্ছে সেই সাধটা প্রকাশ করে বলতে। আমাদের ঘর-গেরস্তির চেহারা পালটে যাচ্ছে খুব দ্রুত। দেখাদেখি বদলে যাচ্ছে বহুদুর অবধি গ্রামেরও গৃহস্থালী। অথচ আমাদের অনেকেরই স্মৃতিতে এখনও কতো যে মধুর স্বাদ। সেই ঘরসংসার কিন্তু তৈরি হয়ে উঠত নানা ছোটবড় গৃহস্থালী উপাদানে।রান্নাঘর আর ভাঁড়ারঘরে ব্যবহৃত জিনিসপত্র ছিল তার ভারি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কতোবিচিত্র উপাদানে তৈরি কতোরকম তৈজস...কতো বা তাদের নাম ! বিশ্ববাজারের আর শপিংমলের ধাক্কায় তারা হারিয়ে যেতে বসেছে। অথচ এইসব গৃহস্থালি বাসন, আসবাব অল্পদিন আগেও আমাদের জীবনযাপনের অংশ ছিল। যেমন বসবার কাঠের পিঁড়ি, প্রদীপের পিলসুজ, আটা মাখার পিতলের পরাত, পূজোর ফল কেটে রাখবার বারকোশ, নানামাপের নানারকম নামের থালাবাটি, হাঁড়ি বোগনো বেড়ি...। ভাবছিলাম যদি খুব আস্তেয়াস্তে শুরু করা যেত নিজেদের স্মৃতি হাঁটকে, বাড়িতে এখনও যাঁরা আছেন সেই বড়দের কাছ থেকে শুনে...নানাভাবে এ সব হারাতে বসা ঘরসংসারের জিনিসের তালিকা, তারপর কোষগ্রন্থ সংকলনের দিকে এগোন যায় না? ভেবে দেখা যাকনা যার যতোটা সাধ্য নিজেদের ইতিহাস আবিষ্কারের এই কাজটা করা যায় কিনা ! সে তো বেশ দিনের শেষে একটা সম্মেলক খেলাঘর আসার মতোও হবে...। নতুন বন্ধুরাও আসতে থাকবেন। হতে পারে না?
এর উত্তরে Debabrata Chakrabarti লিখলান...
নিশ্চয় হয়৷ অশোক মুখোপাধ্যায়ের সমার্থ শব্দকোষে এই ধরণের একটা প্রচেষ্টা আছে, কিন্তু এই অভিধানে যেহেতু কোনও ছবি নেই, তাই জিনিসগুলি দেখতে কেমন তার ধারণা পাওয়া যায় না৷ একটি অভি্জ্ঞতার কথা বলি৷ কতরকমের চাল আমাদের বাংলায় আছে তা নিয়ে একবার আবদুল জব্বার সাহেবের সঙ্গে কথা বলে আনার মাথায় এল একটা তালিকা করবার৷ দেখলাম আবদুল জব্বার তাঁর বাংলার চালচিত্র - দেশ পত্রিকায় একসময় বেরোত - রচনায় মাত্র তিরিশটি চালের নাম উল্লেখ করেছিলেন৷ দক্ষিণ ২৪ পরগণার একজন চাষীর সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সে বলল সে ১০০ রকমের চালের নাম জানে৷ যখন লিখতে বললাম, সে খুব বেশী দূর এগোতে পারল না৷ পরে অ্যাংলো বেঙ্গলি ডিকশনারি ঘাঁটতে গিয়ে পেলাম প্রায় তিনটি পাতা জুড়ে চালের নাম৷ অসংখ্য অজস্র৷ নগেন্দ্রনাথ দত্ত-র - ১৮৮১-১৯৬৫ - আজীবন প্রচেষ্টা অনুকরণ করবার মত মানসিকতা এ যুগের বাঙালির হয়তো নেই৷}
{জয়াদিদির একটা মন্তব্য জুড়লাম...
Joya Mitra একটা কথা বেশ কিছুদিন ধরে ভাবি। আজ এই ছোট্ট পরিসরে যতোজন সাড়া দিলেন, যতোমনের স্মৃতি আর ভালোবাসা উথলে উঠল তা থেকে আবার ইচ্ছে হচ্ছে সেই সাধটা প্রকাশ করে বলতে। আমাদের ঘর-গেরস্তির চেহারা পালটে যাচ্ছে খুব দ্রুত। দেখাদেখি বদলে যাচ্ছে বহুদুর অবধি গ্রামেরও গৃহস্থালী। অথচ আমাদের অনেকেরই স্মৃতিতে এখনও কতো যে মধুর স্বাদ। সেই ঘরসংসার কিন্তু তৈরি হয়ে উঠত নানা ছোটবড় গৃহস্থালী উপাদানে।রান্নাঘর আর ভাঁড়ারঘরে ব্যবহৃত জিনিসপত্র ছিল তার ভারি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কতোবিচিত্র উপাদানে তৈরি কতোরকম তৈজস...কতো বা তাদের নাম ! বিশ্ববাজারের আর শপিংমলের ধাক্কায় তারা হারিয়ে যেতে বসেছে। অথচ এইসব গৃহস্থালি বাসন, আসবাব অল্পদিন আগেও আমাদের জীবনযাপনের অংশ ছিল। যেমন বসবার কাঠের পিঁড়ি, প্রদীপের পিলসুজ, আটা মাখার পিতলের পরাত, পূজোর ফল কেটে রাখবার বারকোশ, নানামাপের নানারকম নামের থালাবাটি, হাঁড়ি বোগনো বেড়ি...। ভাবছিলাম যদি খুব আস্তেয়াস্তে শুরু করা যেত নিজেদের স্মৃতি হাঁটকে, বাড়িতে এখনও যাঁরা আছেন সেই বড়দের কাছ থেকে শুনে...নানাভাবে এ সব হারাতে বসা ঘরসংসারের জিনিসের তালিকা, তারপর কোষগ্রন্থ সংকলনের দিকে এগোন যায় না? ভেবে দেখা যাকনা যার যতোটা সাধ্য নিজেদের ইতিহাস আবিষ্কারের এই কাজটা করা যায় কিনা ! সে তো বেশ দিনের শেষে একটা সম্মেলক খেলাঘর আসার মতোও হবে...। নতুন বন্ধুরাও আসতে থাকবেন। হতে পারে না?
এর উত্তরে Debabrata Chakrabarti লিখলান...
নিশ্চয় হয়৷ অশোক মুখোপাধ্যায়ের সমার্থ শব্দকোষে এই ধরণের একটা প্রচেষ্টা আছে, কিন্তু এই অভিধানে যেহেতু কোনও ছবি নেই, তাই জিনিসগুলি দেখতে কেমন তার ধারণা পাওয়া যায় না৷ একটি অভি্জ্ঞতার কথা বলি৷ কতরকমের চাল আমাদের বাংলায় আছে তা নিয়ে একবার আবদুল জব্বার সাহেবের সঙ্গে কথা বলে আনার মাথায় এল একটা তালিকা করবার৷ দেখলাম আবদুল জব্বার তাঁর বাংলার চালচিত্র - দেশ পত্রিকায় একসময় বেরোত - রচনায় মাত্র তিরিশটি চালের নাম উল্লেখ করেছিলেন৷ দক্ষিণ ২৪ পরগণার একজন চাষীর সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সে বলল সে ১০০ রকমের চালের নাম জানে৷ যখন লিখতে বললাম, সে খুব বেশী দূর এগোতে পারল না৷ পরে অ্যাংলো বেঙ্গলি ডিকশনারি ঘাঁটতে গিয়ে পেলাম প্রায় তিনটি পাতা জুড়ে চালের নাম৷ অসংখ্য অজস্র৷ নগেন্দ্রনাথ দত্ত-র - ১৮৮১-১৯৬৫ - আজীবন প্রচেষ্টা অনুকরণ করবার মত মানসিকতা এ যুগের বাঙালির হয়তো নেই৷}
No comments:
Post a Comment