বঙ্গজ রেনেসাঁর মূল চক্করটাই ছিল ইওরোপিয়রা(আদতে সাম্রাজ্যবাদী খ্রিষ্টবাদীরা) কত আধুনিক, কত জ্ঞানী, কত প্রগতিশীল, কত সুভদ্র, কত সভ্য(এখনও কথায় কথায় ইওরোপ আমেরিকা(নিদেন পক্ষে জাপান, বর্তমানে এই ই লাইন্মে চিনও ঢুকেছে) সভ্য দেশ বলে তুলে ধরা হয় - 'সভ্য দেশ হলে এই সব ঘটনা ঘটত না', বা 'সভ্যদেশে এ সব হয় না' ইত্যাদি)। ফলে যে সব অমুসলিম সুলতানি, উঘল, নাবাবি আমলে উচ্চপদে আসীন ছিল, তারা সাদা চামড়ায় পরিত্রাণের আশা করল। লগে লগে পলাশীর পরের লুঠের বখরার কিছু ছিটেফোঁটা আসতে লাগল লুঠেরা খুনি, অত্যাচারী সাম্রাজ্যের ছোট শরিক ভদ্রলোক বাঙালিদের ঘরে - পরিকল্পনা করে এদের হাত করে পরম্পরার গাঁইয়া বাঙালির ব্যবসা দখল, গণহত্যা ঘটানো, জমির মালিকানায় পরিবর্তন ঘটানো, বিশ্ববাজারে কর্পোরেট রমরমার জন্য গাঁইয়াদের বিশ্ব বাজারের সুতো ছিঁড়ে দেওয়া হল সবলে।
লুঠের কাজে প্রথম বাদ সাধল ফকির-সন্ন্যাসীরা - তারা ১৭৬৩/১১৭০ থেকেই এই লুঠের বিরোধিতা করছেন - তার পর থেকেই বাংলা/ভারতে খ্রিষ্ট সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে মুসলমান, পরম্পরার সমাজ অন্যান্যরা হাতে অস্ত্র তুলে নিলেন।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রধান ও শেষ বেনিফিসিয়ারি ভদ্রলোকেদেরা। তাই যে গ্রাম বাংলা/ভারত লুঠের সম্পদে সভ্য অগ্রসর ইওরোপ এবং বঙ্গজ ভদ্রলোক আর তাদের আশেপাশের ভাইবেরাদরিরা সাজছিল, সেই সাজুগুজুতে যারা বাধা দেয় তারা পিছিয়ে পড়া ছাড়া আর কিছু হতেই পারে না - সমগ্র মুসলমান, দেশের পরম্পরা আর শূদ্র সমাজকে পিছিয়ে পড়া দেগে দিয়ে তাদের উন্নয়ন করতে প্রচুর প্রকল্প সাহিত্য প্রবন্ধ রাজনীতি রচনা হল। বাল্যে রামমোহন আরবি-ফার্সি শিখেও ডিগবির দেওয়ানি করতে গিয়ে ইংরেজি শিখলেন, একেশ্বরবাদে শরণ নিলেন এবং কলোনিয়াল আন্দোলনে সুসভ্য ব্রিটিশদের ভারতে এনে বসাবার উদ্যোগ নিলেন তার পৌত্তলিক শিষ্য দ্বারকানাথকে সঙ্গে নিয়ে - এর জন্য লন্ডনেও দরবার করতে গিয়েছিলেন কিন্তু দুজনের তাদের আরাধ্য দেশে প্রাণ হারাণ - বিনিয়োগকারী রথসচাইল্ডের টাকা শুধতে পেরে, এই আন্দোলনের ফলে ১৮৩৩এর দাস প্রথা বিলুপ্তির সনদে যত ওয়েস্ট ইন্ডিজের 'সুসভ্য' ব্রিটিশ আখ চাষী, দাস ব্যবসায়ী বেকার হল, তাদের সমাদরে ভারতে জমি কেনার সুযোগ করে দেওয়া হল - না হলে ভারত সুসভ্য হয় না - এবং নীলচাষে দাস ব্যবসা সম পরিবেশও তৈরি হয় না।
ইওরোপীয় = সভ্য = জ্ঞানী = আধুনিক এই রসায়নে আজও ইংরেজি শিক্ষিত বাঙ্গালিরা মজে - তাই ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয় এগিয়ে থাকা আর মাদ্রাসা বা টোল পিছিয়ে থাকা - এবং জেলায় জেলায় এক দিকে রামকৃষ্ণমিশন ও অন্য দিকে হালে আলআমিন ইত্যাদিরা মুসলমানদের আধুনিক করার যে ব্রত নিয়েছে সেটা রেনেসাঁর সভ্য হওয়ার যুক্তিরই আজকের রূপ - কর্পোরেট লুঠেরা বিরোধী মুসলমান সমাজকে তাত্ত্বিক দর্শনে ইওরোপিয় ধাঁচে গড়ে তোলার উদ্যম।
তো এই ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার বহন করছি ভদ্রলোকেরা। ম্যাক্ষ্যমূলর বলেছিলেন ব্রাহ্মরা চার্চ অব ইংলন্ডের সদস্য হয়ে গেলেই তো পারে - কেন হচ্ছে না তাই নিয়ে মাথা ফাটাফাটি করেছিলেরন রাণীর সাম্রাজ্যের প্রথম যুগে বসে। আমরা ভদ্রলোকেরা যারা সুভদ্র সুসংস্কৃত ব্রাহ্মদের উত্তরাধিকার বহন করছি, তারা স্বাভাবিকভাবেই মেরি খ্রিষ্ট মাস তো বলব, কেন ইদমুবারক বলব? সেটা তো ঐতিহাসিকভাবে চরিত্র আর দর্শনের সঙ্গে যায় না।
শিক্ষিত বাঙালি একদা ছিল শাসক সংস্কৃতর দাস, পরে হল তুর্কি আরবি-ফারসির দাস, আর বর্তমানে খ্রিষ্ট ইংরেজির দাস।
দাসের আবার বাছবিচার! প্রভুর পদপল্লব যার অভিষ্ট সাধনা - তার আবার স্বাধীন হওয়ার ভাবনা।
ছুঁচোর আবার স্বপ্ন দোষ, আরশোলার হল অণ্ডকোষ!
No comments:
Post a Comment