স্থপতি করিমের অধীনে কিছু দিন কাজ করেই চন্দ্র ভান আফজল খাঁ শিরাজীর প্রশাসনে কাজ করতে শুরু করেন এবং ১৬২৯ সালে শাহ জাহানের রাজত্বের শুরুর এক বছরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী(উজির) হওয়ার সময়েও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। এর পরের তিন দশক ধরে আমাদের আলোচ্য মুন্সি কখোনো সরাসরি সম্রাট শাহ জাহান, কখোনো শাহ জাহানের অধীনস্থ উজিরের সঙ্গে কাজ করেছেন।
এই সময় চন্দ্র ভান সম্রাটের ব্যক্তিগত সচিব এবং তাঁর ব্যক্তিগত দিনলিপিকার(ওয়াকিয়ানবিশ) হিসেবে সম্রাটের ব্যক্তিগত কাজকর্ম(খিদমতই তাসতিরই খাসা)র কাগজপত্র খসড়া লিখতেন এবং সাম্রাজ্যের প্রখ্যাত অভিজাত আমলাদের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়ে সাম্রাজ্যের পঞ্জিকায়(ডায়রি) বিভিন্ন এলাকার গাছ গাছালি এবং স্থানীয়দের সম্বন্ধে তথ্য লিপিবদ্ধ করেন।
তার কাজের একটা বড় সময় অর্থ দপ্তরে(দেওয়ানি)র মুন্সি হিসেবে আফজল খাঁ(মৃ ১৬৩৯) এবং পরে ইসলাম খাঁ মাশাদি(মৃ ১৬৪৭), সাদ আল্লা খান(মৃ ১৬৫৬), মীর মহম্মদ সঈদ আরদাস্তানি মুয়াজ্জম খাঁ(মীর জুমলা নামে খ্যাত ১৫৯১-১৬৬৩) এবং জাফর খাঁ(মৃ ১৬৬৭০) মত নানান উজিরেরে অধীনে কাজ করেছেন। তবে প্রশাসনিক দর্শন বুঝতে তাঁকে সব থেকে বেশি প্রভাবিত করেছেন আফজল খাঁ এবং সাদ আল্লা খান।
এত সব বর্ণনা করছি এই কারণে, মুঘল সময়ের বিশেষজ্ঞরা সে সময় বর্ণনা করতে গিয়ে ধর্মান্ধ ইসলাম চর্চার কারণে যে সামাজিক বিভাজন তৈরি হয়েছিল এমন একটা বর্ণনা দেন social division and cultural insularity created by the revival of a strident and uncompromising Islam। এই বর্ণনার ছিটে ফোঁটা উদাহরণ অন্তত চন্দ্র ভান বা তার সময় বর্ননায় আমরা পাচ্ছি না।
রাজীব লিখছেন, যে সব অভিজাতর অধীনে চন্দ্র ভান কাজ করেছেন, তাঁরা তাঁকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেন নি। বরং তাঁর লেখা থেকে স্পষ্ট শাহ জাহান থেকে ঔরঙ্গজেবের সময়ে অন্তত দরবার বা প্রশাসনে সাধারণ সৌজন্যের সভ্য প্রভাবশালী পেশাদারি মিথষ্ক্রিয়ার পরিবেশ বজায় ছিল।
No comments:
Post a Comment