সাম্রাজ্যে আসফ খাঁএর পদমর্যাদা এত বেশি ছিল যে তাঁর উচ্চপদস্থ মুন্সি সাধারণ কর্মচারী হিসেবে কাজ করত না। তাঁর সময়ে তিনি বৈজ্ঞানিক, বুদ্ধিজীবীদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। মারা যাওয়ার সময় তাঁর সম্পত্তির পরিমান ছিল আড়াই কোটি টাকা। এই বিপুল সম্পত্তি তিনি শুধু চাকরি করে করেন নি, বরং নিজের ব্যবসা এবং ইওরোপিয়দের সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবসা করে অর্জন করেছেন। পদমর্যাদা কাজে লাগিয়ে তিনি পূর্বতন আদিলিশাহী জ্যোতির্বিদ ফারিদ অল দিন মাসুদ ইবন ইব্রাহিম দিহলাভি(মৃ ১৬২৯)কে বরাত দেন শাহ জাহানের সময়ের শুরু থেকে একটি পঞ্জিকা তৈরি করতে।
পঞ্জিকাটি তৈমুরী শাসক-বিজ্ঞানী উলুঘ বেগের(মৃ ১৪৪৯) গণনা নির্ভর করে তৈরি হয়, নাম হয় জিজইশাহজাহানি। কিন্তু আসফ খাঁএর উদ্দেশ্য ছিল উলুঘি আধুনিক পঞ্জিকা(জিজইজাদিদ)র সমসাময়িকীকরণ। সম্রাট সিংহাসনে আরোহন করলে নতুন পঞ্জিকাটি উপহার দেন । নিজ ব্যয়ে দিল্লির সংস্কৃতজ্ঞ ব্রাহ্মণ পণ্ডিত নিত্যানন্দকে দিয়ে অনুবাদ করান। এটির নাম হয় সিদ্ধান্তসিন্ধু এবং সারা দেশের মুসলমান, অমুসলমান সব ধরণের রাজা এবং অভিজাতর সঙ্গী হয়।
প্রায় একশ বছর পরে রাজপুত শাসক-জ্যোতির্বিদ সোয়াই জয় সিং (১৬৮৮-১৭৪৩) মুঘল সম্রাট মহম্মদ শাহের(১৭১৯-৪৮) সম্মানে এই পঞ্জিকা বা জিজ পুণর্নবীকরণ করে বলেন এটি প্রত্যেকটি পঞ্জিকার(এমন কি ইওরোপিয়) তুলনায় সব থেকে সাম্প্রতিক।
আসফ খাঁ শুধু দেশিয় বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা করেন তাই নয়, তিনি সংস্কৃত সাহিত্যেরও সমঝদার ছিলেন। তাঁর এই অনুরাগের প্রতিদান হিসেবে ষষ্ঠদশ শতকের প্রখ্যাত সংস্কৃতিজ্ঞ জগন্নাথ পণ্ডিতরাজা তাঁর নামে আসফবিলাস (আসফ প্রশস্তি) নামে একটি প্রশস্তি লেখেন। জগন্নাথ জাহাঙ্গিরের সময় তেলেঙ্গা প্রদেশ থেকে দিল্লি আসেন। পদ্য প্রকরণ হিসেবে তাঁর লেখা রসগঙ্গাধর বিপুল সম্মান লাভ করে। শাহ জাহান তাঁকে পণ্ডিতরাজা উপাধি দেন এবং আসফবিলাসে তাঁর সম্বন্ধেও সর্বভূম(যা শাহ জাহানত নামের সংস্কৃত অনুবাদ) জগন্নাথ প্রশস্তি লিখেছেন।
আমরা জানি না সে সময় চন্দ্র ভান জগন্নাথ বা অন্যান্য সংস্কৃতজ্ঞ বা হিন্দি পণ্ডিতের সঙ্গ করেছিলেন কি না। তবে বিভিন্ন দরবারি উৎসব অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া হিন্দি গায়ক ও নর্তকদের সঙ্গে দরবার বা আসফ খাঁএর মত নানান অভিজাত, যারা এঁদের পৃষ্ঠপোষণা করতেন, বিশদ সম্বন্ধ বর্ননা করেছেন। সম্প্রতি Allison Busch এবং Katherine Butler Schofield চন্দ্র ভান এবং এবং অন্যান্য সূত্র ধরে দেখিয়েছেন এই লেখাগুলি সপ্তদশ শতকের মুঘল দরবারের সম্পূর্ণ চিত্র উপস্থাপন করে না।
No comments:
Post a Comment