চন্দ্র ভান ব্রাহ্মণের সময় আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ নতুন ইতিহাস লেখার কাজে। গবেষকদের ভাষায় 'মৌলবাদীদের হাতে চলে যাওয়া' মুঘল প্রশাসনে বিপুল ব্যপ্ত অমুসলমান প্রতিনিধত্ব তাঁর লেখা সূত্রেই উঠে আসে।বাবা ধরম দাস ষোড়শ শতকে পাঞ্জাবেরই লাহোরে পারসি শিখে স্থানীয় প্রশাসনে চাকরি করেছেন, অসামান্য দক্ষতায়(নাওয়িসান্দাই করদানি বুদ) প্রশাসনিক কাজ করে মনসবদারও হয়েছেন। পারসি শেখা, ব্রাহ্মণ হয়ে মুঘল দরবারে কাজ নেওয়া নিয়ে বাবার কিন্তু কিন্তু থাকলেও চন্দ্র ভান নিজের সামাজিক শ্রেণী(তাইফা) পদমর্যাদা বজায় রেখেই নিঃশঙ্ক চিত্তে সারা জীবন কাজ করেছেন।
চন্দ্র ভান জানিয়েছেন তাঁর ভাইএরা শুধু পারসি সাহিত্যেই দক্ষ ছিলেন না, প্রশাসনিক নানান কাজে অসামান্য যোগ্যতা প্রদর্শন করেছিলেন। এক ভাই রায় ভান শেষ পর্যন্ত সন্ন্যাসী হয়ে যান। তৃতীয় ভাই উদয় ভান প্রশাসনিক কাজে নিজেকে দক্ষ করে তোলেন(সরগ্রমই নাশায়ি রোজগার শুদ) প্রখ্যাত অভিজাত আকল খাঁ(শিরাজি)এর সঙ্গ করে।
চন্দ্র ভান, পুত্র তেজ ভানকেও পারসি সাহিত্য এবং প্রশাসনিক কাজে দক্ষ করে তোলেন। তেজ ভান ১৬৬০এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ঔরঙ্গজেবের প্রশাসনের মাঝারি গোছের রাজস্ব কর্তা থাকা ছাড়া তাঁর সম্বন্ধে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
চাহর চমনে তিনি লিখছেন, এই ফকির প্রতাপ রায় কায়স্থের পুত্র, বিদ্বান (বাকামালই মাকুলিয়ত ওয়া ফাহ্মিদাগি আরাস্তা অস্ত) কোষাগার আধিকারিক(মুশরিফ) বনারসি দাসের কাছে তালিক অক্ষরে পারদর্শী হন। তাঁর শিক্ষকের আরেক ভাই সুন্দর দাস মির্জা মুহম্মদ হুসেইনের অনুসারী ভাঙা অক্ষর(খতই শিকস্তা) লেখায় দক্ষতা অর্জন করেন।
চন্দ্র ভানের লেখায় রাজস্ব দপ্তরে বিপুল সংখ্যক শূদ্র আধিকারিকের নাম পাচ্ছি। যৌবনে চন্দ্র ভান ভাঙা অক্ষরে(খতই শিকস্তা) শিক্ষা নেন বুদ্ধিজীবি (আজ কাফাসই জিসমানি বর আমাদা বা আলমই রুহানি খিরামিদা) জাত(ট?)মল শূদ্রের অধীনে। তাঁর ভাই নিসবত রাওএর সাহিত্য চেতনা (মাতানতই কলম)ও গভীর ছিল। ছিলেন তালিক আর শিকস্তা অক্ষরে মাহির গোপীচাঁদ শূদ্র। শূদ্র সমাজে(আওয়াম)র প্রখ্যাতরা ছিলেন ভগবন্ত রায়, নারায়ণ দাস।
চন্দ্র ভানের চিঠিপত্রে তাঁর সময়ের বেশ কিছু অমুসলমান অভিজাত - রাজা মাখম সিং, রাজা ঢোকল সিং, রাজা নাজব সিং, রায় মোহন লাল, রায় ঠাকুর দাস, রায় গোবিন্দ দাসের নাম পাওয়া গিয়েছে। বিপুল সংখ্যক চিঠিতে সমসাময়িক বন্ধুদের মুঘল দরবারে চাকরিতে সুপারিশ করেন। ভাই উদয় ভানকে সম্বোধন করে লেখা চিঠিতে বেরিলির ফৌজদার জনৈক বিহারী দাসের সাহিত্যিক যোগ্যতা সম্বন্ধে লেখেন। একই সঙ্গে উজির ইসলাম খাঁএর দপ্তরেও আরেকটি সুপারিশ লেখেন বিহারীর যোগ্যতা বিষয়ে - মর্দএ শুকানফাহম (ওয়া) মুদ্দাআআনবিশ (ওয়া) খুশসুবত অস্ত।
চন্দ্র ভানের চিঠিতে উল্লখিত বিহারী দাস ছাড়াও মুঘল ইতিহাসে যাঁরা সূত্র রেখে গিয়েছেন, তাদেরও নাম পাওয়া যায়, এদের মধ্যে ছিলেন শঙ্কর দাস, সুরত সিং, প্রাণ নাথ, খ্বাজা সাগর মল ইত্যাদি। এদের মধ্যে অনেকেই চন্দ্র ভানের সাহিত্যিক ক্ষমতার কাছাকাছি ছিলেন।
No comments:
Post a Comment