অধ্যায় ৪
উনবিংশ শতকে, বস্তুকে হস্তশিল্প, পুরাকীর্তি আর শিল্পে
রূপান্তর
রাষ্ট্র এবং অতীত ভারত সমীক্ষা
উইলসন মূলত ম্যাকেঞ্জির ১৩টি ভাষায় ১৯টি লিপিতে লেখা ১৫৬৮টি
পুথি, যাকে তিনি সাহিত্য বলে দাগিয়ে দিয়েছিলেন – সংগ্রহের ম্যাকেঞ্জিকৃত
শ্রেণীবিন্যাসের ধারাটি অনুসরণ করেছেন। প্রায় ২৬৪টি খণ্ডে উইলসনের ভাষায় স্থানীয়
বিষয়(লোক্যাল ট্রাক্টস) ছিল যেগুলো মূলত ম্যাকেঞ্জি তার সাথীদের দিয়ে মৌখিক
জ্ঞানগুলি লিপিবদ্ধ করিয়েছিলেন যা আদতে নির্দিষ্ট মন্দির, রাজ্য-রাজধানী, পরিবার
এবং জাতি বিষয়ের তথ্য। এছাড়ও ৭৭টা খণ্ডে ছিল মন্দিরগুলির তথ্য, তাম্রলেখ, নানান
দানপত্র, ৭৫টা খণ্ডে ছিল অনুবাদ, ৭৯টা খণ্ডে ছিল ছকা পরিকল্পনা, ২৬৩০টা আঁকা,
১০৬টা ছবি ৪০টা প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তু।
বোরিয়ার মৃত্যুর পরে ম্যাকেঞ্জি বোরিয়ার ছোট ভাই লছমিয়াকে
প্রধান সহকারীরূপে নিয়োগ করেন, যিনি তার অন্যান্য সহকারী কিভাবে তথ্য পাওয়া এবং
সংগ্রহ করতে হয় তা শিখিয়ে ছিলেন। তার লেখা ১৮০৪ সালের মাসিক রিপোর্ট পড়ে আমরা
বুঝতে পারি কিভাবে নানান ধরণের বস্তু সংগ্রহের কাজটা এগোচ্ছিল। লেখাটা লছমিয়ার
নিজের হাতের, ব্যকরণ আর কালে ভুল থাকলেও বোঝা যায় কি বলতে চাইছেন। সমীক্ষায় তিনি
লিখেছেন কোথায় তিনি আর অন্যান্য দলের লোকেরা গিয়েছিলেন, কাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন
ইত্যাদি। কখোনো কখোনো তিনি নিজেই কথাবার্তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ লিখেছেন। বই সংগ্রহ
আর তার দামের উল্লেখ আছে। বিভিন্ন ভাষার ম্যাকেঞ্জির অনুবাদগুলির ভূমিকা লিখছেন।
সূত্রগুলি কিভাবে সংগ্রহ করছেন তারও বর্ণনা আছে। তিনি হয়ত কোন বিশেষ জমিদারির
ইতিহাস জানতে, জমিদারিতে যে উকিল(বকিল) হিসেব রাখে তাকে সময় চেয়ে লিখলেন। তিনি
লিখলেন উকিল তাকে অসীম শ্রদ্ধায় কথা বলেছেন, কারণ তিনি লছমিয়ার ব্রিটিশ যোগাযোগ
বিষয়ে জানতেন। প্রথম বৈঠকটা তিন বা চার ঘন্টা ধরে চলত। উকিল জ্যোতিষশাস্ত্র নিয়ে
তার জ্ঞান উজাড় করে দেন। লছমাইয়া ম্যাকেঞ্জিকে জানালেন প্রথম বৈঠকেই তিনি সেই
জমিদারির ইতিহাস জানতে চাইলেন না, সেটা পরের বৈঠকটির জন্য তুলে রাখছেন।
জ্যোতিষবিদ্যার জ্ঞান জানতে তিনি উকিলের দেওয়া সূত্র ধরে মাদ্রাজে একজন জ্যোতিষীর
কাছে যান, উকিলের মতে সর্বশ্রেষ্ঠ জ্যোতিষী। তিনি খবর সংগ্রহ করে জানলেন যে
জ্যোতিষের বিপুল পুঁথি সংগ্রহ আছে, যার মধ্যে সেই জমিদারের জীবনীও রয়েছে। তিনি
জ্যোতিষীর সঙ্গে দেখা করে তার দক্ষতা কাজে লাগাবার চেষ্টা করলেন। এছাড়াও প্রতিদিন
তিনি ম্যাকেঞ্জির কি কি চিঠি পাচ্ছেন এবং কাদের কি কি বিষয়ে চিঠি পাঠাচ্ছেন তার
বিশদ বিবরণ দিয়েছেন।
উইলসন বইতে ‘বাবু রাওয়ের পাঠানো সমীক্ষা’ শীর্ষকে লিখছেন
কিভাবে ম্যাকেঞ্জির মারাঠা অনুবাদক বাবু রাও করমণ্ডল উপকূলে ঘুরে ঘুরে নানান ধরণের
ঐতিহাসিক তথ্য এবং মুদ্রা সংগ্রহ করেছেন। দিনের পর দিন তিনি লিখে গিয়েছেন কোথায়
গিয়েছেন এবং কার সঙ্গে দ্যাখা করেছেন। বহু ব্রিটিশ কর্মকর্তা তাকে অনুরোধ করেছিলেন
মহাবলীপুরমে নতুন আবিষ্কৃত মন্দিরটি দেখাতে নিয়ে যাওয়ার এবং তাদের পথপ্রদর্শক
হওয়ার জন্যে। তিনি যাতে তার কর্মদাতার কাছে সৎ থাকেন তাই তিনি চার স্টার প্যাগোডা(দক্ষিনী
মুদ্রা) ঘুষের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। বাবু রাও যেখানেই গিয়েছেন সবার আগে
তিনি সেখানকার ব্রিটিশ আধিকারকের সঙ্গে দ্যাখা করে ম্যাকেঞ্জি প্রদত্ত পরিচিতি
পত্র দেখাতেন। তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল প্রাচীন বই জোগাড় করা। না পেলে তিনি
স্থানীয় বৃদ্ধ, পুজারী, স্থানীয় প্রশাসক, জ্ঞানীদের চোল আর বৌদ্ধদের বিষয়ে প্রশ্ন করতেন।
No comments:
Post a Comment