অধ্যায় ৩
আইন এবং ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র
ধর্মতাত্ত্বিক(আইনের আরেক নাম ধর্ম - অনুবাদক) শাসনে ভারতঃ ভারত রাষ্ট্রের ধ্রুপদী মডেল
জোনস যে বিচারের ব্যবস্থাটা তৈরি করতে চাইলেন, সেটাকে যদি সফল করতে হয়, তাহলে নানা ধরণের জ্ঞানকে সংহিতাবদ্ধ হতে হবে এবং সেগুলি প্রকাশিতও হতে হবে। জোনস আর তার অনুগামীরা বিশ্বাস করতেন ব্রিটিশ বিচারকেদের বিচারের জন্যে যে হিন্দু আর মুসলমান আইনের সংহিতা দরকার সেই সংহিতাটা আপাতত পণ্ডিত আর মৌলভিদের মাথায় স্মৃতি হিসেবে সঞ্চিত আছে। ঠিক হল হিন্দু আর মুসলমানদের নির্দিষ্ট আইনি সাহিত্যকে নির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করা দরকার এবং জ্ঞানের পারম্পর্য বহন করে নিয়ে এক্কেবারে পবিত্র পুথি থেকে শুরু করে সরলরৈখিকভাবে জ্ঞানের নিষ্কর্ষ বার করে নিচের স্তরে ক্ষমতাহীনের কাছে পৌঁছে দেওয়া দরকার।
জোনস আর তার তত্ত্বে বিশ্বাসীরা মনে করত ভারতে ফিক্সড বডি অব ল আছে, বিস্তৃতভাবে আইনের রীতিনীতিতে লেখা আছে কিভাবে আইন প্রযুক্ত হবে তাও বর্ণিত আছে। কিন্তু সময় প্রবাহে তাদের উত্তরাধিকারীরা আইনের ধারাগুলোয় দুর্নীতি প্রবেশ করিয়েছে, তাই ধারাগুলি ভুল ভাবে ব্যখ্যাত ও প্রযুক্ত হচ্ছে। তারা আরও মনে করত আইন বাড়ার এবং সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুদ্ধ নীতিগুলি বিকৃত হয়ে আজকে বিকৃত রূপে আইনজ্ঞদেরে দ্বারা প্রযুক্ত হচ্ছে। আজ সেই পুরোনো হিন্দু মুসলমানের আইনের সংহিতা যদি তৈরি করা যায়, তাহলে দুর্ণীতিপূর্ণ পণ্ডিত আর মৌলভিদের কবল থেকে আইনকে মুক্ত করা যাবে। অথচ সেই কাজ করতে তাদের সাহায্য নেওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই, কেননা অবিশ্বাসী পণ্ডিত আর মৌলভীরা আজও আইনের একচ্ছত্র দখল রেখেছে। ভারতে আসার আগেই জোনস ভারতীয় আইন বিষয়ক পণ্ডিতদের ব্যাখ্যাকে চরমতমভাবে অবিশ্বাস করতেন। ভারতে এসে এই অবিশ্বাস আরও বাড়ল। ১৭৮৮ সালে তিনি গভর্নর জেনারেল কর্নওয়ালিসকে লিখলেন, তিনি পণ্ডিতদের লিখিত কোন নিদানে বিশ্বাস করেন না, কারণ তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য থাকে আদালতকে বিপথগামী করার। জোনস ভারতে ব্রিটিশ আদালতীয় ক্রাউন কোর্ট ব্যবস্থায় সম্রাটকে বসাতে চাইতেন যাতে আদালত হিন্দু আইনের শুদ্ধ সংস্করণ নিয়ে কাজ করতে পারে, পণ্ডিত আর মৌলভিদের প্রভাব মুক্ত হয়েই।
জোনস এক্কেবারে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আদালতের দুর্নীতিবাজ, ভণ্ড, মিথ্যাচারী পণ্ডিত আর মৌলভিদের হাতে নষ্ট হতে বসা হিন্দু আর মুসলমান আইনকে উদ্ধার করার উদ্যোগ নিয়ে ভারতে এলে এই প্রকল্পটি আরও বড়, আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে দাঁড়াল – এটি রূপায়িত হয়ে দাঁরাল হিন্দু আর মুসলমান আইনের সংহিতা তৈরির প্রকল্পে। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন গভর্নর-জেনারেলকে এই প্রস্তাব দিয়ে বললেন লন্ডনের কর্তারা তার এই প্রস্তাব জানলে তিনি যে ভারতের জাস্টিনিয়ান হতে চাইছেন এমন একটা অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে উঠবে। ১৭৮৭ সালে বিচার ব্যবস্থা তৈরির একটি পরিকল্পনা এঁচে ফেলেন জোনস, যা তাঁর মতে ভারতের চিরকালীন বিচার ব্যবস্থার অনুরূপ। তার উদ্দেশ্য হিন্দু মুসলমান সমাজের বহুবৈচিত্র্যনিদানওয়ালা পণ্ডিত আর মৌলভিদের নিয়ন্ত্রণ করে একটি শুদ্ধ সংহিতা নির্মান। তার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল চুক্তি আর উত্তরাধিকার বিষয়ে সংহিতা নির্মান। এই কাজে তিনি দুজন পণ্ডিত এবং দুজন মৌলভিকে ২০০ টাকা করে মাস মাইনেয় নিযুক্ত করতে চাইলেন – সঙ্গে একজন সংস্কৃত আর আরবি করণিক ১০০ টাকা মাস মাইনেয়। কর্মপদ্ধতিটি হল যেভাবে ট্রিবোনিয়ান, জাস্টিনিয়ান আইন তৈরি করেছিল – সেরকমভাবে ভারতীয় সংহিতাটি তৌরি হবে মূল টেক্সট থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নির্ভর করে। যে টেক্সটের অনুবাদ এবং সংক্ষিপ্তকরণের পদ্ধতি নিয়ে জোনস লিখলেন, আই উড বিগান উইথ গিভিং দেম আ প্ল্যান ডিভাইডেড ইন্টু বুকস, চ্যাপটার্স, এন্ড সেকসানস; এন্ড উড অর্ডার দেম টু কালেক্ট দ্য মোস্ট এপ্রুভড টেক্সটস আন্ডার ইচ হেড, উইথ দ্য নেম অব দ্য অথার্স, এন্ড দেয়ার ওয়ার্ক্স, এন্ড উইথ দ্য চ্যাপটার্স এন্ড ভারসেস অব দেম। হোয়েন দিস কম্পাইলেশন ওয়াজ ফেয়ারলি এন্ড একিউরেটলি ট্রান্সক্রাইবড, আই উড রাইট দ্য ট্রান্সলেশন অন দ্য অপোজিট পেজেস আফটার অল ইনপেক্ট দ্য ফরমেশন অব আ পারফেক্ট ইন্ডেক্স। দ্য মেটিরিয়ালস উড বি দিজ; সিক্স অর সেভেন ল’ বুকস বিলিভড টু বি ডিভাইন উইথ আ কমেন্টারি অন ইচ অব নিয়ার্লি ইকুয়াল অথরিটি; দিজ আর এনালোগাস টু আওয়ার লিটলটন, এন্ড কোক।
No comments:
Post a Comment