অধ্যায় ৪
উনবিংশ শতকে, বস্তুকে হস্তশিল্প, পুরাকীর্তি আর শিল্পে
রূপান্তর
কর্নেল ম্যাকেঞ্জি এবং অমরাবতীর মার্বেল পাথরের স্থাপত্য
ভারতের প্রথম ইওরোপিয়
পন্থার প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের সংস্কৃতজ্ঞ বিদ্বান রাজেন্দ্রলাল মিত্র কিন্তু
ভারতের স্থাপত্যবিদ্যার আবির্ভাব বিষয়ে ফারগুসনের তত্ত্বের বিরোধিতা করেছেন
এশিয়াটিক সোসাইটিতে প্রকাশিত এনটিকুইটি অব ওডিসা নামক প্রবন্ধে, ১৮৭৫ এবং ১৮৮০
সালে দুটি খণ্ডে প্রকাশিত বইতে এবং বুদ্ধ গয়াঃ দ্য হার্মিটেজ অব শাক্যমুনিতে। তিনি
সরাসরি ফারগুসনের মত ইওরোপিয়দের মত – যে ভারতের শিল্প আর স্থাপত্যের কোন মৌলিকত্ব
এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতা নেই, এবং এইগুলি গ্রিক আর রোমিয়দের দ্বারা প্রভাবিত এই মনগড়া
তত্ত্বর বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে লাগেন। রাজেন্দ্রলাল ঐতিহাসিকতার দৃষ্টিভঙ্গী থেকে
ভারতীয় স্থাপত্যকলা বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন। এর সঙ্গে জোড়েন নানান সংশ্লিষ্ট
লেখমালা সাহিত্য এবং স্থাপত্যের আঙ্গিক এবং তার অন্তর্নিহিত অর্থ এবং ভারতীয়
শিল্পকৃতির বিকাশকে।
ফারগুসন এই অ-প্রশিক্ষিত
এবং বেহায়া ভারতীয়র বিরুদ্ধে খোলা ব্যক্তিগত আক্রমনের পথ বেছে নিয়ে প্রশ্ন তুললেন,
ভারতীয় স্থাপত্যের নানান আঙ্গিক এবং তত্ত্ব বোঝার এবং বিশ্লেষণের ক্ষমতা কি করে
একজন ভারতীয়র জন্মায়। তিনি তার রণনীতি সাজালেন ভারতের প্রতি তার অন্তর্নিহিত
ভালবাসা প্রকাশের মধ্যে দিয়ে, যেখানে তিনি বললেন কিভাবে তিনি আনন্দ করে সারা
হিন্দুস্থান ঘুরে স্থাপত্যের বর্তমান খণ্ডহরের নানান নিদর্শন দেখেছেন। তিনি
নিশ্চিতভাবে বললেন, ভারতীয়দের সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব মনোহরা এবং সন্তোষজনক। তিনি
মধ্য ভারতের রাজাদের আতিথ্য গ্রহণ করেছেন, যেদিন তিনি ভারতে পদার্পণ করেন সেদিন
থেকে নানান চাকরবাকর তাকে আস্থাসহকারে, সাধুতার সঙ্গে তাঁর সেবা করে গিয়েছে।
১৮৩৫ থেকে ১৮৪২ পর্যন্ত
ফারগুসন ভারতে ছিলেন, যে সময়কে তিনি ব্রিটিশদের স্বর্ণযুগ হিসেবে দেখেন, তারপরে
কিছু উন্মার্গগামী দেশি ইওরোপিয় সভ্যতার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে নিজেদের খারাপ করে
ফেলে। এই যে পরিবর্তন এল সেটা হল ভারতীয়রা ব্রিটিশদের সমকক্ষ হয়ে ওঠার চেষ্টার
জন্যেই, যা ফারগুসনের মতে ঠিক নয় কারণ দুই সভ্যতা কখোনো মিশ খায় না।
ফারগুসন বললেন বাঙালি
রাজেন্দ্রলাল মিত্র এর একটা উল্লেখযোগ্য নিদর্শন – কি সুন্দর তিনি আমাদের ভাষা
আয়ত্ত্ব করেছেন, কিন্তু তার তাবৎ ইওরোপিয় বৈজ্ঞানিক এবং সাহিত্যিক সখ্যতা তৈরি
হয়েছে ওপরওপরই, ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন নি। ভারতীয়দের যোগ্যতা বিপুল বিশাল বিষয়
এবং নানান ধরণের বৈজ্ঞানিক সত্য মনে রাখার। ইওরোপিয়রা যে ভাবে দীর্ঘ দিন ধরে সতর্ক
কাটাছেঁড়া করে বৈজ্ঞানিক সত্যের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করেছে, তার কাছে এটা কিছুই
নয়। তার আরও অভিযোগ, বাবু(রাজেন্দ্রলাল) জার্মান পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন, যা কোনো
দিন কোন ব্রিটিশ ছুঁয়েও দেখবে না। ফলে ফারগুসনকে আক্রমন করার উদ্দেশ্যই হল ভারতীয়
হিসেবে নিজের অবস্থানটাকে আরও একটু উজ্জ্বল করা মাত্র। আদতে রাজেন্দ্রলাল নিজেকে
দেশভক্ত প্রমান করে বলতে চাইছেন যে অজ্ঞ এক বিদেশি ভারতীয়দের শিল্পকলা নিয়ে কুতসা
করছে। আদতে তিনি যে রাজেন্দ্রলালের বিরুদ্ধাচরণ করছেন, সেটা শুধু ভারতীয় স্থাপত্য
আর শিল্পকলা বিষয়ে বিরোধিতার থেকেও অনেক বেশি। তার এই লেখার সঙ্গে যুক্ত করলেন
ইলবার্ট বিলের বিষয়টি যেখানে ইওরোপিয়রা ফৌদারি মামলায় দেশিয় বিচারকদের কাছে বিচার
পাওয়া নিয়ে বিতর্ক উঠছে।
ফারগুসন লিখলেন, হোয়াই দ্য
ইউওরোপিয়ান রেসিডেন্ট ইন দ্য কান্ট্রি, এন্ড নোয়িং দ্য ক্যারেক্টার অব দ্য পিপল
এমং হুম দে আর লিভিং, শুড হ্যাভ স্রাঙ্ক ইন্সটিঙ্কটিভলি, উইথ পিওরলি প্যাট্রিয়টিক
মোটিভস, ফ্রম দ্য ফ্রাচুইটি অব দ্য ইলবার্ট বিল। ইট মে হাউএভার ইউজফুল টু দোজ হু
রিসাইড এট আ ডিস্ট্যান্স, এন্ড হু হ্যাভ নো লিগ্যাল এক্সপিরিয়েন্স, টু হ্যাভ
এক্সপ্লেইনড টু দেম বাই স্ট্রাইকিং লিভিং এক্সামপ্ল, হয়ারইন দ্য স্ট্রেংথ এন্ড
উইকনেস অব দ্য কজ রিসাইডস এন্ড ফর দ্যাট পারপাস আই ডু নট নো এনি এক্সামপ্ল দ্যাট
ক্যানবি মোর এপ্রোপ্রিয়েট দ্যান দ্যাট বাবু রাজেন্দ্রলাল মিত্র। ইফ আফটার রিডিং
দ্য ফলোয়িং পেজেস, এনি ইওরোপিয়ান ফিলস দ্যাট হি উড লাইক টু বি সাবজেক্টেড টু হিজ
জুরিসডিকশন, ইন ক্রিমিনাল কেসেস, হি মাস্ট হ্যাভ আ কারেজ পজেসড বাই ফিউ; অর ইফ হি
থিঙ্কস হি কুড ডিপেন্ড অন হিজ নলেজ, অর ইম্পার্শিয়ালিটি, টু ডু হিম জাস্টিস, এজ হি
কুড অন অয়ান অব হিজ ওউন কান্ট্রিমেন, হি মাস্ট স্ট্রেঞ্জলি কন্সটিটিউটেড ইন
মাইন্ড, বডি এন্ড এস্টেট।
No comments:
Post a Comment