Sunday, April 8, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা৪৯ - ঔপনিবেশিকতাবাদ এবং তার জ্ঞানচর্চার আঙ্গিক - সাম্রাজ্যের মন ও মান ।। বারনার্ড কোহন

অধ্যায়
আইন এবং ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র
ধর্মতাত্ত্বিক(আইনের আরেক নাম ধর্ম - অনুবাদক) শাসনে ভারতঃ ভারত রাষ্ট্রের ধ্রুপদী মডেল
জেন্টু ল’... অনুবাদের মুখবন্ধে হ্যালহেড স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এই প্রকল্পে তার আগ্রহ মূলত আইনি ক্ষেত্রে যতটা নয় তার থেকে অনেক বেশি হিন্দু ধর্ম, ভাবনা এবং প্রথাগুলি নিয়ে বিশেষ করে ভারত দখলের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সহিষ্ণুতা নীতির প্রকল্প তৈরি করতে। হ্যালহেড দখলদারি বিষয়ে রোমানদের মডেল সামনে আনলেন, হু নট অনলি এলাউড টু দেয়ার ফরেন সাবজেক্টস দ্য ফ্রি এক্সিস্টেন্স অব দেয়ার ওন রেলিজিয়ান এন্ড দ্য এডমিনিস্ট্রেশন অব দেয়ার ওন সিভিল জুরিডিকশন, বাট সামটাইমস, বাই আ পলিসি স্টিল মোর ফ্ল্যাটারিং, ইভন ন্যাচুরালাইজড পার্টস অব দ্য মিথোলজি অব দ্য কনকার্ড, এজ ওয়ার ইন এনি রেস্পেক্ট কম্পিটেবল উইথ দেয়ার ওন সিস্টেম। হ্যালহেদের রোমান সাম্রাজ্যনীতির উল্লেখ এই পূর্বাভাষ দেয় যে পরের স্তরে ব্রিটিশেরা হিন্দু পারিবারিক আইন খোঁজার কাজ শুরু করে দিয়েছে, যেটা দায়িত্ব নিয়ে করবেন প্রাচ্যবিদ উইলিয়াম জোনস।
জোনস ধ্রুপদী জ্ঞানী, অক্সফোর্ডে ফারসি আর আরবি পড়েছেন এবং উকিলও বটে, ১৭৮৩ সালে কলকাতার ক্রাউন কোর্টে প্রধান বিচারপতির পদ পাওয়ার আগে বহু অনুবাদ করেছেন এবং আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গীতে ফারসি ব্যকরণও তৈরি করেছেন। এছাড়াও তিনি সক্রিয় রাজনীতিও করেছেন এবং সেই সময় বুদ্ধিজীবি হিসেবে তার বেশ খ্যাতিও ছিল। জোনস তার পৃষ্ঠপোষক মার্ফত ভারতের বিচারপতি পদের জন্যে বহুকাল তদ্বির চালাচ্ছিলেন, যা দিয়ে তার আর্থিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হয় এবং প্রাচ্যতত্ত্ব নিয়ে আরও বেশি করে এগোতে পারেন। প্রাথমিকভাবে তার বয়স হয়েছে বলে সংস্কৃত না শেখবার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ভারতে এসে বিচার ব্যবস্থায় ঢুকে দেখলেন হ্যালহেদের অনুবাদ কাজের হলেও বিচার ব্যবস্থা চালাবার জন্যে যথেষ্ট নয়। সংস্কৃত আইনি পুথির কিছু ফারসি অনুবাদ আছে বটে কিন্তু জোনসের মনে হল এগুলোয় প্রচুর গলতি আছে। অন্যদিকে সংস্কৃত না জানায় অন্যান্য বিচারপতির মতই তাকেও দেশিয় আইনজ্ঞদের হাতের পুতুল হয়ে থাকতে হচ্ছে। ফলে তিনি সম্মানীয় এবং উতসাহব্যাঞ্জক ভাষা সংস্কৃত শেখবার সিদ্ধান্ত নিলেন যার মাধ্যমে তিনি শুদ্ধ হিন্দু আইন জানতে এবং রক্ষা করতে পারেন। ১৭৮৬ সালে মোটামুটি কাজ চালানো গোছের সংস্কৃত শিখে ঠিককরে নিলেন বিভিন্ন পণ্ডিতের মতামত এবং মূল ভাষ্যটা পড়িয়ে বুঝতে পারবেন কার ভাষ্যটা মূলের খুব কাছাকাছি।

ভারতে(বলা দরকার বাংলায়) পৌঁছোবার কিছু দিনের মধ্যেই জোনস, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রশাসনিক কর্মপদ্ধতির কঠোর সমালোচক এডমন্ড বার্ককে ভারতীয় বিচারব্যবস্থার ব্যবহার্য ব্যবস্থাপনাটা পাঠালেন। তিনি বার্ককে লিখলেন ব্রিটিশ আইন ভারতের আইন হিসেবে কার্যকর হতে পারে না, কারণ সেটি ভারতের প্রত্যেক স্তরের আইনি পরিকাঠামোয় খাপ খাবে না। জোনস বিশ্বাস করতেন ভারতীয় আইনের তুলনায় ব্রিটিশ আইন অনেক উচ্চস্তরের, কিন্তু তার মনে হয়েছিল বিপরীত অভ্যেসের মানুষের ওপর যদি অন্য ধরণের স্বাধীনতা চাপিয়ে দেওয়া যায়, সেটা স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় পর্যবসিত হবে। তিনি মত প্রকাশ করে বললেন, মুঘল আমলের সংবিধানই বাংলার দেশিয় মানুষদের যোগ্য বিচার ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য হোক। কোম্পানির আদালতে হিন্দু আর মুসলমান আইনের কানুনগো আর মৌলভিদের করা সঙ্কলন ভিত্তি করে বিচার করা দরকার। এই দুই পেশাদারদের সে সময় জোনস এবং অন্যান্য ব্রিটিশ শিক্ষিতরা আইন বিশেষজ্ঞ এবং উকিল হিসেবে গণ্য করতেন। তিনি বললেন কোম্পানির আদালতগুলিতে দেশিয় যোগ্য বেশি বেতনের অনুবাদক দক্ষতা সততা ইত্যাদই বিচার করে বেছে বেছে নিয়োগ করা দরকার যাতে তারা যে কোন প্ররোচনার উর্ধ্বে থাকতে পারে। ব্রিটিশ বিচারকেদেরও দেশিয় অনুবাদকদের মাথয় চেপে বসা দরকার আছে। এটা সম্ভব হবে ব্রিটিশ বিচারকেদের নিয়মিত শিক্ষা গ্রহণ আর নজরদারির মাধ্যমে। দেশিয়দের আইনকে অপরিবর্তনীয় করে তুলতে হবে আর আদালতের রায় হিন্দু আর মুসলমান প্রজাদের মনোমত হতে হবে।  

No comments: