অধ্যায় ৩
আইন এবং ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র
ধর্মতাত্ত্বিক(আইনের আরেক নাম ধর্ম - অনুবাদক) শাসনে ভারতঃ ভারত রাষ্ট্রের
ধ্রুপদী মডেল
হেস্টিংসের হিন্দু আইন প্রণয়নের যুক্তি ছিল এটির প্রাচীনতা এবং দেওয়ানি বিচার
বিভাগের আসনে বসা ব্রিটিশদের সেই আইন আয়ত্ত্বে থাকা, যারা এটি অবলম্বন করে
সম্পত্তি, নানান ধার সংক্রান্ত দাবিদাওয়া, হিসাব সংক্রান্ত বিবাদ, অংশিদারি এবং
ভাড়া সংক্রান্ত বিবাদের বিচার করতে পারবেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জেলা আদালতে এই
আইনের প্রামাণিকতা এবং কর্তৃত্বকে চালান করার পদ্ধতিটিকে হেস্টিংসকে বার করা দরকার
হয়ে পড়েছিল। এই উদ্দেশ্যে হেস্টিংস একটা চাল চাললেন, ১১জন বিখ্যাততম এবং সম্মানিত
হিন্দুকে নিয়ে হিন্দু আইনের একটি সংহিতা বানাবার উদ্যম নিলেন, যার ইংরেজি অনুবাদ বিচারকেদের
হাতে পৌঁছে যাবে। সে সময় কলকাতায় কোন ইওরোপিয়ই সংস্কৃত জানত না। ফলে পণ্ডিতেরা সে
সঙ্কলনটি তৈরি করবেন সেটি সরাসরি সংস্কৃততে অনুবাদ করা যাবে না যেহেতু তাই ঘুরিয়ে
কাজটা করতে হবে। এই দলে একজন সংস্কৃত জানা মুসলমান রাখা হল, যিনি পণ্ডিতদের সঙ্গে
আলাপআলোচনা করে সংস্কৃত আইন ফার্সি ভাষায় রূপান্তরিত করবেন। এই ফার্সি অনুবাদকে
যুবা সিভিল সার্জেন ন্যাথানিয়েল বি হ্যালহেদ ইংরেজিতে অনুদিত করবেন। ১৭৭৬ সালে
প্রকাশিত হল হ্যালহেডের অনুবাদে আ কোড অব
জেন্টু ল’জ; অর অর্ডিনেশনস অব দ্য পান্ডিতস। মুখবন্ধে অনুবাদক লিখলেন কিভাবে কাজটা
হয়েছে – দ্য প্রফেসরস অব দ্য অর্ডিন্যান্সেস হিয়ার কালেক্টেড স্টিল স্পিক দ্য
অরিজিনাল ল্যাঙ্গুয়েজ ইন হুইচ দে আর কম্পোজড, এন্ড হুইচ ইজ এনটায়ারলি আনোন টু দ্য
বাল্ক অব পিপল, হু হ্যাভ সেটলড আপন দোজ প্রফেসরস সেভারেল গ্রেট এন্ডাওমেন্টস এন্ড
বেনিফিকেশনস ইন অল পার্টস অব হিন্দোস্তান, এন্ড পে দেম বিসাইডস আ ডিগ্রি অব
পার্সোনাল রেসপেক্ট লিটল শর্ট অব আইডলট্রি, ইন রিটার্ন ফর দ্য এডভান্টেজেস সাপোসড
টু বি ডিরাইভড ফ্রম দেয়ার স্টাডিজ। আ সেট অব দ্য মোস্ট এক্সপিরিয়েন্সড অব দিজ ল’য়ার্স
ওয়াজ সিলেক্টেড ফ্রম এভরি পার্ট অব বেঙ্গল ফর দ্য পারপাস অব কম্পাইলিং দ্য
প্রেজেন্ট ওয়ার্ক, হুইচ দে পিকড আউট সেন্টেন্স বাই সেনটেন্স ফ্রম ভেরিয়াস অরিজিনাল
ইন দ্য সাংস্কৃট(সিক) ল্যাঙ্গুয়েজ, নায়দার এডিং টু, নর ডিমিনিশিং এনি পার্ট অব দ্য
এন্সিয়েন্ট টেক্সট। দ্য আর্টিকলস দাস কালেক্টেড অয়ার নেক্সট ট্রান্সলেটেড লিটারালি
ইন্টু পার্সিয়ান, আন্ডার দ্য ইন্সপেকশন অব ওয়ান অব দেয়ার ওন বডি; এন্ড ফ্রম দ্যাট
ট্রান্সলেশন অয়ার রেন্ডার্ড ইন্টু ইংলিশ উইথ এন ইকুয়াল এটেনশন টু দ্য ক্লোজনেস
এন্ড ফাইডেলিটি অব দ্য ভারসানস।
সংস্কৃত সঙ্কলনটির নাম হল বিবাদর্ণবসেতু – বিবাদ সমুদ্রের মাঝে যোজক (আইনের)
সেতু – উনবিংশ শতকের প্রথমপাদে এটির সংস্কৃত, ফারসি এবং ইংরেজি অনুবাদ কোম্পানির আদালতগুলোতে
বিতরণ করা হল। এই আইন বিষয়ে দুজন প্রধান বিশেষজ্ঞ অষ্টাদশ শতকের বাংলার আইনি
পরম্পরা বিষয়ে একমত হতে পারেন নি। ডুরেট বলছেন সে সব বিষয় এখানে সঙ্কলিত হয়েছে –
ধার, উত্তরাধিকার, দেওয়ানি পদ্ধতি, জমা, অজানা মানুষের সম্পত্তি বিক্রি, অংশিদারি,
দাস(স্লেভারি), দাসবৃত্তি, মালিক ভৃত্য সম্পর্ক, ভাড়া এবং মজুরি, সীমারেখা, জমি
চাষের অংশিদারি, শহর ও নগর বিষয়, ফসলের ক্ষতির ক্ষতিপূরণ, মানহানি, লাঞ্ছনা, চুরি,
হিংসা, ব্যাভিচার, মহিলাদের দায় – এগুলি হেস্টিংস মনে করেছিলেন জেলা আদালতে
বিচারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট কার্যকর হবে। তিনি আরও বলেছিলেন যে ক্রমানুযায়ী এই অধ্যায়গুলি
সঙ্কলিত হয়েছে তার সঙ্গে শাস্ত্রীয় বিধানের কোন সম্পর্ক নেই, হেস্টিংস যে তালিকা
তৈরি করে দিয়েছিলেন পণ্ডিতেরা সেইগুলির ওপরে কাজ করেছেন।
হ্যালেদের চাকরিজীবন নিয়ে আলোচনায় রোজানে রোসার বলছেন
এই সঙ্কলনটা পারম্পরিক নিবন্ধ আকারে – বিভিন্ন প্রামাণিক সূত্র থেকে টিকা সহকারে
সঙ্কলিত হয়েছিল। তাঁর আর ডুরেটসএর ব্যাখ্যার পার্থক্য বোঝাতে গিয়ে তিনি বললেন, তার
কাজটা হল আইনের ইংরেজি সংস্করণের ভিত্তি। হ্যালহেদের অনুবাদের খুব একটা প্রভাব
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আইনি ব্যবস্থা বিকাশে যতটা না প্রভাব ফেলেছে, তার অনেক
বেশি প্রভাব ফেলেছে ইওরোপের প্রাচ্যবিদ্যা আলোচনায়, যেখানে রহস্যময় হিন্দুদের
জানতে তার কাজগুলি মূল ইংরেজিতে এবং ফরাসী আর জার্মান অনুবাদে পড়া এবং আলোচিত হয়।
No comments:
Post a Comment