ভোটের ঢাকে কাঠি পড়েগ্যাছে।
মমতার হেজাব, সুমনের টুপি, বাংলার চপ শিল্প ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে মাসকয়েক বাংলা গরম হবে, হবেই। সব ছেড়ে বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কারিগরি চপ শিল্প নিয়ে যাঁরা বাঁকা বাক্য ব্যয় করছেন তাঁদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত হল কিছু কথা--
কি বিপুল টার্ন ওভার বাংলা জোড়া সব চপ ভাজা দোকানগুলির, স্রেফ কল্পনা করা যায় না। শুধু বৃহত্তর কলকাতাতেই যদি ১ লক্ষর আশেপাশে চপের দোকান থাকে(একটা হাতে গরম সমীক্ষা বলি - শুধু বড়িশা চৌরাস্তার মোড়ে ১০০ হাতের মধ্যে ৭খানা চপের দোকান, গত দস বছর ধরে রমরমিয়ে চলছে, তারমধ্যে একজন আমার এক কেলাসের দোস্ত) তারা যদি দিনে মাত্র ২০০ টাকা বাড়ি আনতে চান তাহলে অন্তত ১০০০ টাকার(অনেকে অনেক বেশিই করেন) মোট ব্যবসা করতে হবে।শুধু কলকাতা জুড়ে রোজ ১০ কোটি টাকার রোজগার করেন, শুধু মানুষকে স্বাদু খাবার খাইয়ে।
এবার সারা বাংলার কথা ভাবুন। কলেস্ট্রিটের কালিকার কথা ভাবুন আর হেদোর লক্ষ্মীনারায়ণের কথা ভাবুন। কলকাতা জোড়া ১০কোটির এই টার্ন ওভারে অন্তত সরাসরি ৩ থেকে ৪ লক্ষ মানুষের গ্রাসাচ্ছাদন হয় - পরোক্ষে কত হয় সেটা হিসেব করার যোগ্যতা নেই আমাদের।
আমাদের বন্ধু মানসভাই একটি মেলায় কচুরির দোকান দিয়েছিলেন, দিয়ে শেষ করতে পারেন নি, পাবলিক লেপ্টেলুপ্টে খেয়েছে।
চপের ব্যবসা করেন বাংলার তথাকথিত অভদ্র মানুষেরা, যারা কোনদিন সরকার বা ব্যাঙ্ক বা রাজনৈতিক নেতাদের কাছে হত্যে দেন নি ধারের জন্যে, চাকরিও চাননি, প্রধানমন্ত্রীর নামের ধার কোম্পানি বা বাংলা সরকারের আত্মসম্মান নামক প্রকল্পেও নাম লেখান নি। এঁরা কেউ শিক্ষিত বেকারের দলে নাম লেখান নি। কেন চাকরি নেই এই হাহুতাশ দাবিতে সরকার বিরোধী হত্যে দেন নি।
এরা নিজেদের পুঁজি নিজেরাই জোগাড় করেছেন, ব্যবসার যায়গা নিজেরাই খুঁজে নিয়েছেন(এর পেছনে কত মেহনত, কত চক্কর আর কত বুদ্ধি, মানুষকে প্রভাবিত আর নিজেকে প্রতিমুহূর্তে প্রয়োগ করার দক্ষতা থাকে তা রাস্তার পাশে চপের ব্যাসনের খামি নিয়ে বসা কোন দক্ষ কারিগরের সঙ্গে এক ছিলিম কথা বললেই মালুম হয়) নিজেদের দক্ষতা নিজেরাই তৈরি করেছেন।
কেউ সারা দিন(মূলত গোটা রাঢ বাংলায় - হাওড়া, হুগলি, দুই বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুল্যে, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ) ধরে, কেউ শুধু বিকেলটা কোনরকমে রাস্তার পাশে অস্থায়ীভাবে বসে, রোদে পুড়ে জলে ভিজে রাস্তার গাড়ির ধুঁয়ো খেয়ে নিজের শরীর নষ্ট করে পরম্পরার, জ্ঞান, দক্ষতা অবলম্বন করে পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদন করেন - রাজ্যের অর্থনীতির জোর বাড়ান। নিজের উতপাদন নিজে করে, জনগণকে খাইয়ে, সন্তুষ্ট করে রোজগারের পথ খুঁজে নিয়েছেন।
এ নিয়ে বিপুল প্রবন্ধ ফাঁদা যায়।
এখন থাক।
খিস্তি-খাস্তা চলুক।
No comments:
Post a Comment