অধ্যায় ৪
উনবিংশ শতকে, বস্তুকে হস্তশিল্প, পুরাকীর্তি আর শিল্পে
রূপান্তর
রাষ্ট্র এবং অতীত ভারত সমীক্ষা
লুকোনো সম্পদ উদ্ধারের জন্য নানান গল্প, মাটির পাত্র,
খণ্ডহর, ভাষ্কর্যশিল্প বাবু রাও মেপেজুপে দেখতেন। বাবুকে বলা হল চার মাস আসে এক
চাষী চাষ করতে গিয়ে বুদ্ধের একটাচকচকে মূর্তি পেয়েছেন। তিনি সেটি সোনার মূর্তি
আন্দাজ করে গোপনে এক মন্দিরের ব্যবস্থাপককে সেটি সংগ্রহ করতে বললেন, শেষে দেখা গেল
সেটি গিলটি করা চকচকে পিতলের মূর্তি। আট থেকে দশ প্যাগোডা মুদ্রা মূর্তিটির গায়ে
ঘসার পরে মন্দির ব্যবস্থাপক সেটি গলিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলেন, যাতে এই মূর্তিটির
চরিত্র প্রকাশ না হয় এবং সরকারের লোকেদের হাতে না পড়ে। এটা শুনেই রাও ব্যবস্থাপকের
কাছে গেলে ব্যবস্থাপক এই মূর্তিটার অস্তিত্ব অস্বীকার করেন প্রথমে, কিন্তু একটু
চাপ দিতেই সেটি বেরিয়ে পড়ে। ষোল থেকে কুড়ি স্টার প্যাগোডায় এটি কিনতে চাইলেন রাও,
কিন্তু ব্যবস্থাপক এটি হাজার টাকার বিনিময়েও হাত বদলে অস্বীকার করেন। ক্ষুব্ধ রাও
তার কর্তার আদেশের অপেক্ষায় থেকে থেকে যে জমিতে এটা পাওয়া গিয়েছিল সেখানে গিয়ে আরও
একটা পাথরের বুদ্ধ মূর্তি এবং দুটো ভর্তি কুঁয়ো দেখতে পান।
কুম্ভকোনামে রাও শঙ্কর আচারি মঠে গিয়ে পুরোহিতকে চারটে মুদ্রা
দিয়ে মঠে রাখা তামালেখটি হাত বদল করতে বলেন। পুরোহিত রাজি হয়ে গেলেও মঠের
ব্যবস্থাপক(কায়স্থালু) জোর দিয়ে অস্বীকার করে বলেন মঠে এধরণের কোন লেখ নেই। পরে
জানা গেল মূল লেখটি তাদের বিভিন্ন যুদ্ধের সময় বাঁচিয়েছে এবং তাঁদের ভয় হচ্ছিল মূল
লেখটি হাত বদল হলে তাদের যে অধিকার দেওয়া হয়েছে সেটি বিপর্যস্ত হয়ে যেতে পারে। রাও
বললেন তারা সেটির নকল চান। ব্যবস্থাপক এই শর্তে রাজি হলেন যে, বাবু রাও
ম্যাকেঞ্জিকে বলবেন যে জাগিরের অধিকার তাদের থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে ব্রিটিশ
সাম্রাজ্যে, তা যেন তাদের আবার ফেরত দেওয়া হয়। রাও রাজি হন। পুরোহিত এতই প্রীত হল
যে রাওকে তিনি চোলেন, চেরান এবং পাণ্ডিয়ানদের ইতিহাসের সঙ্গে সব রাজার গুরু
বিজানগরের রাজার ইতিহাস দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়াও কলিযুগে যে সব রাজা রাজত্ব
করেছেন তাদেরও ইতিহাস জ্ঞাপনের প্রস্তাব দেন। রাও প্রধান পুরোহিতের অগ্ররম এবং
১২৫টা তাম্রসাসনম নিয়ে যান। পুরোহিত বলেন তাদের যদি হারানো গ্রামের অধিকার ফিরে
দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তাহলে এই সম্পত্তিগুলো তিনি তাদের দিয়ে দিতে ইচ্ছুক।
১৮২৩ সালে কলকাতায় ম্যাকেঞ্জির অধিকাংশ সম্পদ এসে গিয়েছিল
যেগুলো দিয়ে উইলসন কাজ শুরু করেন। এগুলোর মধ্যে কিছু হারিয়ে গিয়েছিল এবং পাওয়াও
যাচ্ছিল না। ১৮০৮ সালে ম্যাকেঞ্জি সাতটি খণ্ডে মেমোয়ার্স অব দ্য সার্ভে অব মাইশোর
টু লন্ডন এবং দুটি খণ্ডে মানচিত্র পাঠান। ইন্ডিয়া অফিসের গ্রান্থাগারিক চার্লস
উইলকিনস ১৮২৭ সালে এগুলো দেখতে পান নি। উইলসন ক্যাটালগিং করে ১৮২৩ এবং ১৮৩৫ সালে
কিছু অংশ লন্ডনে পাঠান। ১৮২৭ সালে তার কাজ শেষ করে ফার্সি, বার্মি এবং সংস্কৃতর সব
কাজের সঙ্গে পরিকল্পনা, আঁকা, মুদ্রা, রূপো-তামা-কাঁসার কাজ করা ১০৬টা ভারতীয়
দেশিয় দেবতাদের মূর্তি লন্ডনে পাঠান। এর একটা অংশ লিডেনহল স্ট্রিটের মূল দপ্তরের
একটা ছোট্ট জাদুঘরে প্রদর্শিত হয়েছিল। এই ডেসপ্যাচে ছিল অমরাবতীর পাঁচটা বিপুল বড়
পাথরের কাজ চারটে ছোট পাথরের কাজ এবং অমরাকার্তু থেকে পাওয়া একটা পাথরলেখ। এগুলির
ভাগ্য কি হল তা আমি পরে আলোচনা করব।
No comments:
Post a Comment