অধ্যায়
আইন এবং ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র
অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয় পাদে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের বিভিন্ন
এলাকা দ্রুত দখল এবং আত্মীকরণ করার ফলে যে বিশাল ভৌগোলিক ঔপনিবেশিক এলাকা তৈরি হল তার
প্রশাসনিক কাজকর্ম চালানোর জন্যে একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়ে উঠছিল। এর
পূর্বে ব্রিটিশ সাংবিধানিক ইতিহাসে এই ধরণের রাষ্ট্র তৈরির কোন নিদর্শন নেই।
ক্যারিবিয় এবং উত্তর আমেরিকায় যে ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল, সেটি আদতে ব্রিটেনের
রাজনীতি আর আইনি ব্যবস্থার বৃহত্তর অংশ হিসেবে গণ্য হত। এই সব অঞ্চলে যে সব মানুষ
সংগঠন বা ধর্মসংস্থা ঔপনিবেশিত হল, তারা ব্রিটেনের থেকে বহু দূরে থেকেও, বহুকাল
নিজেদের ব্রিটিশ বা ইংলিশ বলে গণ্য করত।
ব্রিটিশরা উত্তর আমেরিকার পরম্পরার(আমেরিকান ইন্ডিয়ান) সমাজের মানুষদের খুব তাড়াতাড়ি
বশ, স্থানান্তর, এবং বিপুল খুন করে আয়ত্তে আনে। এবং এই অঞ্চলগুলিতে ঔপনিবেশিক
দৃষ্টিতে যদি কোন সমস্যা থেকে থাকে, তাহলেও সেটা নেটিভদের সমস্যা বলে বিবেচিত হল,
এবং সমাধান বেরোল রাজনৈতিক এবং সামরিক বল প্রয়োগে। এর জন্যে কোন আইনি ঝক্কি বা নতুন
কোন আইনি পথ আবিষ্কার করতে হয় নি। ক্যারিবিয় উপনিবেশগুলিতে ব্রিটিশ সার্বভৌমত্ব
শুরুর আগেই দেশিয় জনজাতিদের ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল, যা বেঁচে ছিল তাদের ফলের
বাগানে দাস শ্রমিক হিসেবে কাজে লাগানো হয়েছে এবং এইভাবে আইনিস্তরে আইন শৃঙ্খলা
বজায় ছিল। সাদাদের জন্যে আলাদা প্রশাসনিক ব্যবস্থায় উত্তর আমেরিকার উপনিবেশের
পরিবেশ তৈরি হল। আয়ারল্যান্ড এবং কিছুটা ওয়েলস বা স্কটল্যান্ডে ব্রিটিশেরা
প্রটেস্টান্ট জমিদার অভিজাত তৈরি করে ক্যাথলিক চাষীদের শ্রম আর কর দিতে বাধ্য
করিয়েছে।
ঔপনিবেশিক ভারতে আইনি হাতিয়ার/আছিলা তৈরি করা
১৭৭৬এর আগে উপনিবেশগুলিতে বিচার এবং আইনি সঙ্গঠনগুলি চালাতে সম্রাট এবং পার্লামেন্টের
কোন ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে নি। ব্রিটেনে যে সব বিতর্ক উঠত, বিদেশে যাওয়া সাদা
ঔপনিবেশিক প্রভুরা সেই সব বিতর্ক নিয়েই আলোচনা করতেন – যার ভিত্তি ছিল রাষ্ট্রের
আর সমাজের প্রকৃতি বিষয়ে ঐক্যমত্য যা চলতি সঙ্গঠনগুলি মার্ফতই বিচার-বিবেচিত হত।
১৭৫৭র পলাশী চক্রান্তে বিজয়ের পরে ভারতের একটি বড় অংশ দখল করে নিয়ে ক্ষমতাসীন
হওয়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যে সব সাংবিধানিক এবং আইনি বিষয় তুলে আনল তা ব্রিটিশেরা
কোনদিন তাদের ঔপনিবেশিক ইতিহাসে ঘটতে দেখে নি। নতুন ধরণের পরম্পরার বিহীন বিষয় উঠে
এল যা কোন্দিন ঔপনিবেশিক ব্রিটেন ভাবার চেষ্টাই করে নি এর আগে। সাধারণভাবে যে সব
ব্রিটিশ ভারত নিয়ে উৎসাহিত ছিল, তারা মোটামুটি স্বীকার করত ব্রিটিশ শাসনের আগে
ভারতে একটি পরিপূর্ণ রাষ্ট্র ব্যবস্থা ছিল। এটি অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে অস্ত
যেতে থাকলেও এটির রাষ্ট্রত্বের চরিত্র এবং কর্মক্ষমতা স্বীকৃত ছিল। তারা এটাও
স্বীকার করেছিল আমেরিকান ইন্ডিয়ান বা নতুন বিশ্বের দাস দেশগুলির তুলনায় ভারতের রাষ্ট্রত্বের
ইতিহাস বেশ প্রাচীন এবং স্থানীয় প্রশাসনও খুব শক্তিশালী এবং তার শেকড় অনেক দূর
পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। শুধু পূর্ব ভারতের ভৈগোলিক এলাকার বিশালত্ব অনুধাবন করে
ব্রিটিশদের মনে হল, পূর্বের শাসন ব্যবস্থার কিছু বিশেষ চরিত্র আত্মীকরণ করা
প্রয়োজন। ভারতের মূল সম্পদ হল শ্রম উতপাদন যে উতপাদন বিস্তৃত ছিল ভারত জোড়া উন্নত
বাজারে, অন্যান্য উপনিবেশের মত কাঁচামাল নির্ভর ছিল না সে। বাংলায় এবং দক্ষিণ ভারতের
কিছু অংশে ব্রিটিশেরা রাজস্বের ওপর নিয়ন্ত্রণ করে নিয়েছিল, যে অর্থবলে তারা উপনিবেশে
সেনাবাহিনী তৈরি করে ফরাসী এবং দেশিয় রাজাদের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা সাজিয়েছে এবং
উদ্বৃত্ত অর্থেই ব্যবসা বাণিজ্য করেছে। দীর্ঘকাল ধরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি,
ইওরোপিয় সংজ্ঞায় রাষ্ট্রের নানা চরিত্রে সেজে উঠছিল। সে যুদ্ধ চালাতে পারত, শান্তি
বিজায় রাখতে পারত, এবং নিজের কর্মচারীদের এবং তাদের সাম্রাজ্যে ধীরে ধীরে
অন্তর্ভূক্ত হয়ে চলা বিপুল সংখ্যক ভারতীয় প্রজার বিচার করত সার্বভৌম রাষ্ট্রের মতই।
No comments:
Post a Comment