Thursday, August 9, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - রাষ্ট্র-জমিদার আর চাষী রায়তদের সম্পর্ক - মোঘল রাজত্বে ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা(১৭০০-১৭৫০)

এন এ সিদ্দিকি

আমাদের কথা
জনাব সিদ্দিকী কৃষকদের জমি বন্ধক দেওয়ার অধিকার ছিল কি না ছিল তাই নিয়ে 'দস্তুর-উল-আমাল-বেকাস' গ্রন্থে উল্লিখিত জমিদারদের একটি অঙ্গীকারনামা আলোচনা করেছেন।
আমাদের উদ্দেশ্য রাষ্ট্র-জমিদার আর চাষী রায়তদের সম্পর্ক দ্যাখা। কৃষক সম্পর্কে রাষ্ট্র-নীতি কি ছিল তা আমরা এই গ্রন্থ থেকে জানতে পারি।
এই দলিলে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে 'রায়তের ক্ষতি করা চলিবে না', 'অন্য কোন প্রকার কর কৃষকদের কাছ হইতে আদায় করিতে পারিবেন না' 'এমন কোন দাবি করিতে পারিবেন না, যাহার ফলে কৃষক গ্রাম ত্যাগ করিতে বাধ্য হন'।
তবে জমিদার/নবাব যে সময়ে সময়ে অতিরিক্ত আদায় করতেন তার যথেষ্ট উদাহরণ আছে।
তবুও ওপরের চুম্বক আর নিচের ধারাগুলি পড়ে কি আপনাদের মনে হচ্ছে নবাবি আমলে কৃষকদের প্রতি রাষ্ট্রের অত্যাচারী ভূমিকা ছিল?

এবারে জনাব সিদ্দিকীর লেখা...
কৃষকের স্বত্ত্ব
জমি বিক্রয় অথবা বন্ধক দিবার কোন অধিকার কৃষকের ছিল না। ...'দস্তুর-উল-আমাল-বেকাস' গ্রন্থে জমিদার অথবা মোকাদ্দাম প্রদত্ত এক অঙ্গীকারনামা হইতে আলোচ্য বিষয়ে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। জমিদার-কৃষক সম্পর্কে ও তাঁহাদের পারস্পরিক দাবিস্বত্ত্বের ধারা কিরূপ ছিল। তাহার উল্লেখ উক্ত অঙ্গীকার-নামায় রহিয়াছে। আলোচ্য দলিলের মূল বক্তব্যগুলি এখানে সংক্ষেপে বলা হইতেছে।
১। উতপন্ন ফসলের মোট পরিমানের ভিত্তিতে স্বীকৃত বাৎসরিক জমা দিতে জমিদার অঙ্গীকারবদ্ধ। ফসলী জমির প্রকৃত পরিমান সরকারী খাতায় যে হারে উল্লিখিত রহিয়াছে, জমিদার সেই হারেই প্রতিটি কৃষকের নিকট হইতে নির্ধারিত জমার অংশ সংগ্রহ করিবেন।
২। বিঘা প্রতি নির্ধারিত ভূমি-রাজস্ব বাদে জমিদার অন্য কোন প্রকার কর কৃষকদের কাছ হইতে আদায় করিতে পারিবেন না।
৩। তাঁহারা এমন কোন দাবি করিতে পারিবেন না, যাহার ফলে কৃষক গ্রাম ত্যাগ করিতে বাধ্য হন।
৪। যদি কোন কৃষক কোন কারণে গ্রাম ত্যাগ করেন, তাহা হইলে জমিদার ঐ কৃষকের জমিতে উৎপন্ন শস্য সংগ্রহ করিয়া রাজকোষে তাহা পাঠাইবার ব্যবস্থা করিবেন। এই ব্যবস্থা গ্রহণ করিবার পরও যদি ঐ কৃষকের কোন ভূমি-রাজস্ব থাকে, তবে তাহা গ্রামের অন্যান্য কৃষকের মধ্যে সমহারে বন্টিত করিয়া দেওয়া হইবে।
৫। যে সব কৃষক গ্রাম ত্যাগ করিয়াছেন, তাঁহারা যাহাতে পরের বৎসর গ্রামে ফিরিয়া আসিয়া বসবাস করেন, এবং নিজ নিজ জমিতে চাষবাস পুনরায় শুরু করেন, তাহার ব্যবস্থা জমিদারকে করিতে হইবে।
৬। যদি কৃষক পুনরায় গ্রামে বসবাস করিতে অস্বীকার করেন, তবে তাঁহার জমি নির্ধারিত ভূমি-রাজস্বের আনুপাতিক হারে জমিদারগণ নিজেদের মধ্যে বিলি করিয়া লইয়া সেই জমিতে চাষ শুরু করিয়া দিবেন।
৭। নিজেদের জমি বিনা মজুরিতে চাষ করিয়া নিবার জন্য কৃষকদের উপর অতিরিক্ত চাপ জমিদার দিতে পারিবেন না।
৮। রায়তের ক্ষতি করা চলিবে না।

---
ছমাস আগে এই লেখাটা দিয়েছিলাম আবারও আজ দিলাম।

No comments: