আমার মা।
এই নিচের বড় টিনের বাক্সটা তাঁর নবমশ্রেণীতে বিদ্যালয় থেকে পাওয়া ১৫ টাকা জলপানির টাকায় কেনা। ওপরের ছোট বাক্সটা বাবা ইন্দু নন্দের সঙ্গে বিয়ের সময় ১৯৬৪ সালে কেনা।
সঙ্গের এই আসনগুলো আমি তাঁর অধম সন্তান ছোটবেলা থেকেই দেখছি। যখন মায়ের পেটে মা তখন ১৫ দিনের জেলও খেটেছেন বামপন্থী রাজনীতি করতে গিয়ে। মা বিয়ের পরে মামাবাড়ি গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় এসেছেন - বিশাল যৌথ পরিবার(এক সময় আমরা ২০ জন ছিলাম কাকা কাকিমা জেঠিমা ইত্যাদি নিয়ে। চাল র্যাশনিংএর সময় আমতলা/পৈলান থেকে লুকিয়ে পেটে বেঁধে চাল আনতেন জ্ঞাতিগুষ্টিকে খাওয়ানোর জন্যে - চাল না পেলে সাবু ফুটোনো - পরে তাঁরা আলাদা হয়ে গিয়েছেন কাজকম্ম পেয়ে) সামলে মাস্টারি করেছেন দূরে আমতলায় পরে ফলতা আর নুরপুরের মাঝে সুন্দরিকা গ্রামে। আমিও সুন্দরিকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছি। সুন্দরিকা নামে অপূর্ব সুন্দর মায়াময় বাংলার গ্রাম এখন বাংলার প্রথম উন্নয়নের এইইজেডএ চাপা পড়ে গিয়েছে। মা শনিবার আমায় নিয়ে কলকাতা আসতেন আর আমরা সোমবার সক্কালে উঠে ৭৬ নম্বর বাস ধরে সরষে আশ্রম, সেখান থেকে নুরপুরের দিকে যাওয়া ৭৪ নম্বর বাস ধরে আশাপুরে নেমে ৫ কিমি হেঁটে মায়ের বিদ্যালয়ে পৌঁছতাম। বছরের শেষে পরীক্ষা শেষে দিদিমণিরা ছাত্রী খুঁজতে বেরোতেন। গ্রামে গ্রামে সে কী আপ্যায়ণ - বিশেষ করে স্বচ্ছল মুসলমান বাড়িতে। কি যে পেটপুরে খাওয়া হত বলার নয়।
তার পরেও মায়ের হাতে সময় ছিল এই সব অপার্থিব সৃষ্টির, পরিবারের জন্য। এরাই বাংলার মা! অসাধারণ আমার মায়ের এই সব কিছু সিন্দুক থেকে ঝেড়েঝুড়ে বেরল।
মাকে কী প্রণাম জানাতে হয়?
No comments:
Post a Comment