Monday, August 27, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - নৌবিদ্যা, অঙ্ক এবং জ্যোতির্বিদ্যা – একটি পাগান(জনজ্ঞান – লৌকিক) জ্ঞান৪

ডি পি আগরওয়াল, লোকবিজ্ঞান কেন্দ্র, আলমোড়া
(সঙ্গের ছবি - ম্যাটিও রিশির সময় মার্কাটরের মানচিত্র)
অষ্টাদশ থেকে বিংশ শতক পর্যন্ত পশ্চিমি ঐতিহাসিকেরা দেখানোর চেষ্টা করছেন নবজাগরিত ইওরোপিয় জ্ঞানের সঙ্গে পাগান জ্ঞানের কোন সম্পর্কই নেই। তাদের দাবি বর্তমান যে জ্ঞানভাণ্ডারের ওপর ইওরোপ বসে আছে, সেগুলি মূলত স্বউদ্ভুত, পাগান সংস্পর্শ রহিত।
নব্য ইওরোপের ধ্রুপদী জ্ঞানের দিকচিহ্নটি হল গ্রিস- নবজাগরণ  আধুনিক বিজ্ঞান।
এই সময়সারণি অনুযায়ী খ্রিষ্টধর্মের কাছে ধর্মীয়ভাবে বিরুদ্ধাভাবপন্ন অংশ ইওরোপিয় নবজাগরনীয় জ্ঞানের বিকাশে কোন ভূমিকাই নেয় নি। অথচ আজ আমরা বার্নলের গবেষণায় বুঝতে পারছি, এই সময়সারনীকে নতুন করে সংস্কার করার দরকার আছে কেননা প্রাচীন গ্রিসের জ্ঞানচর্চা আফ্রিকিয় জ্ঞানচর্চা আত্তীকরণ করে বেড়ে উঠেছিল। সে চেষ্টা করেছে আরবি আর ভারতীয় জ্ঞানচচর্চা যতটা পারা যায় এড়ানোর। কোপার্নিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক (heliocentric) ব্রহ্মাণ্ডের তত্ত্ব আসলে আরবির গ্রিক অনুবাদের খুব খারাপ ল্যাটিন অনুবাদ। ইওরোপের বিশ্বজোড়া মিথ-মিথ্যা ভিত্তিক ঔপনিবেশিক জ্ঞানচর্চার আজ আমাদের বিশ্বাস করিয়েছে যে ইওরোপের জ্ঞানতাত্ত্বিক বা ধর্মতাত্ত্বিকতা এবং সব ধরণের গুরুত্বপুর্ণ ধারনার বিকাশ ঘটেছে সাদা গ্রিসে এবং তারপরে টপকে এসে পড়েছে আধুনিক নবজাগরিত ইওরোপে - তার মাঝখানে আর কোন পাগান জ্ঞানচর্চার ঘৃণ্য ছোঁয়া নেই এই শুদ্ধ জ্ঞানচর্চায়। অন্যের কাছে শিখেছি, এই কথা বলায় কি অপ্রাকৃতিক ব্যাপার আছে বুঝি না? যেমন আরবেরা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছে তারা অন্যের থেকে অনেক কিছু নিয়েছে। অথচ খ্রিষ্টিয় চার্চের কাছে অন্যদের থেকে কিছু শেখা মানেই যেন সম্মান হানির ব্যাপার। চার্চের কাছে এটা একটা ইউনিক চরিত্র ব্যাপার হল সে যা অন্যের থেকে শিখেছে সে সেটাকে লুকিয়ে রাখে। এই পৃষ্ঠভূমিতে ভাবুন, ষোড়শ শতে আকবরের আমলে তাদের প্রয়োজন সঠিক পঞ্জিকা জ্ঞান যেটা ভারতীয়দের আছে, অথচ তাদের নেই, এবং এই জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের জন্যে তারা কেরলে বিদ্বানদের একটা বাহিনীও পাঠাল, তারা এদেশে এসে ভাষাটাও শিখল, ছাপাখানও বসাল যে জ্ঞান বহন করে নিয়ে গেল ইওরোপিয় ইতিহাসে তার কোন উল্লেখ পাওয়া গেল না।
দ্রাঘিমা
১৫৮২ সালের পোপ গ্রেগরির নির্দেশে রোমক পঞ্জিকায় খসে পড়া দশদিন যোগ হল, ৫ অক্টোবর তারিখে প্রায় প্রত্যেক দেশে লিপ ইয়ারের গাঁজাখুরিত্বটাকে পাশ কাটিয়ে। ফলে সমুদ্রে অক্ষাংশ নির্ণয়ের ঝামেলাটা পূরণ হল ঠিকই কিন্তু সমুদ্রে যাত্রা করার যে সমস্যাটা ছিল, সেটা থেকেই গেল কেননা দ্রাঘিমার আঁক কষা খুব সহজ নয়। উদাহরণ স্বরূপ স্পতম শতক থেকেই স্থানীয় দ্রাঘিমাংশ এবং অক্ষাংশ নির্নয়ের কাজটা ভারতের পঞ্জিকা শাস্ত্রের জ্ঞানীর আকরে আসছেন এবং এই জ্ঞানটা সারা উপমহাদেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে। যেমন আমরা ভাষ্করের কাজের কথা আগেই আলোচনা করেছি। এই জ্ঞান শতকের পর শতক জুড়ে সম্পাদিত হয়েছে এবং পুনর্নবীকরনও ঘটেছে – যেমন অল-নিরুনি তার আঙ্কিক ভূগোলে করেছেন তেমনি অঙ্কবিদ্যার কেরল ঘরাণাও এই কাজে মন দিয়েছিল। এই পুনর্নবীকৃত জ্ঞান সারা দেশের সঙ্গে কোচিনেও ছড়িয়েপড়েছিল পঞ্জিকা এবং জ্যোতির্বিদ্যার পাঠের সঙ্গে সঙ্গে - যেখানে এসে ম্যাটিও রিশি এবং অন্যান্য জেসুইটরা এই বিদ্যা খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন। এখানে ভাষা কোন দেওয়াল তোলে নি, ক্ল্যাভিয়াস বা রিশির অঙ্কে অপ্রতুল জ্ঞান কোন দেওয়াল তোলে নি। কিন্তু ভারত আর আরবি নৌবিদদের বহুকাল ধরে ব্যবহৃত এই জ্ঞান সরাসরি ইওরোপিয়দের পক্ষে ব্যবহার করা সহজ হল না কয়েকটি কারণের জন্যে।

No comments: