১০৫৮খ্রির নাগাই লেখ আমাদের
চালুক্য সময়ের গ্রন্থাগার কর্মীদের পদমর্যাদা এবং তাদের বেতন সম্বন্ধে জানতে
সাহায্য করে। এই লেখতে নাগাই অঞ্চলের একটি আবাসিক বিদ্যালয়ে কিভাবে জমির উদ্বৃত্তে
শিক্ষকদের এবং গ্রন্থাগারিকদের বেতন কাঠামো হবে সেই তথ্য থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার,
শিক্ষক এবং গ্রন্থাগারিক উভয়েই একই সম্মান পেতেন, যে বেতন শিক্ষকদের দেওয়া হত সেই
পরিমান বেতন গ্রন্থাগারিকেরা পেতেন।
সুলতানি আমলে রাজারা তার
নিজের বাড়িতেই একটা আলাদা গ্রন্থাগার বা কিতাব খানা রাখতেন, যে সচিবের অধীনে তা
থাকত তার পদের নাম ছিল কিতাবদার।
খলজি বংশের সুলতান
জালালুদ্দিন জ্ঞানচর্চার উৎসাহী পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি রাষ্ট্রীয় গ্রন্থাগারের
গ্রন্থাগারিক হিসেবে প্রখ্যাত কবি আমির খুসরুকে নিযুক্ত করেন। সে সময়
গ্রন্থাগারিকের বিপুল সম্মান ছিল। তাই আমীর খুসরুকে গ্রন্থাগারিক হিসেবে নিযুক্ত
করতে গিয়ে তিনি তাঁকে তার দরবারের রত্ন ঘোষিত করে তার সম্মান বৃদ্ধি করেন।
মুঘল আমলে নিজাম ছিলেন
গ্রন্থাগারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী। মুল্লা পীর মুহম্মদ এবং শেখ ফৈজী পরপর আকবরের
রাষ্ট্রীয় গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক নিযুক্ত হয়েছিলেন। জাহাঙ্গিরের সময় তাঁর
দরবারের প্রখ্যাত এবং গুরুত্বপূর্ণ অভিজাত মুক্তব খানও গ্রন্থাগারিক নিযুক্ত হন।
তবে দিনে দিনে গ্রন্থাগারের
আকার কাজকর্মের বহর বাড়তে থাকায় মুঘল এবং মুঘল পরবর্তী সময়ে গ্রন্থাগারের নানান
ধরণের উপযোগী কর্মী/পদাধিকারী নিযুক্ত হতে শুরু করেন। পদগুলি নিচে বর্ণিত হল –
১) কিতাবখানার প্রধান দায়িত্বে
যে সচিব ছিলেন তার পদের নাম ছিল নিজাম। আজকের দিনের বড় রাষ্ট্রপোষিত বা
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গ্রন্থাগারিকের সঙ্গে তুলনীয়। তাঁকে অবশ্যই বিদ্বান এবং
উপযুক্ত প্রশাসকও হতে হবে।
২) তাঁর অধীনে ছিলেন দারোগা
– প্রশাসনিক এবং প্রযুক্তিগত বিভাগ দেখার জন্যে। তার দায়িত্ব ছিল বই নির্বাচন,
শ্রেণীবিন্যাস এবং খরিদ।
৩) সাহাফ এবং ওয়ারাক
দারোগার নির্দেশে কাজ করতেন। তাদের কাজ ছিল গ্রাহককে বই দেওয়া এবং বইটি পেলে
সেটিকে ঠিক জায়গায় আবার রাখা।
৪) পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা,
দেখাশোনা, পরিমার্জনকরার কাজ করতেন মুসাহিহ। পুঁথি পোকায় কাটিলে সেটিকে
পূর্বাবস্থায় ফেরত দেওয়ার দায় ছিল এই পদাধিকারী ব্যক্তির। তিনি অবশ্যই একাধারে
বিদ্বান এবং প্রযুক্তিবিদ। না হলে তার পক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত পুঁথিটিকে সঠিকভাবে
মেরামত করা অসম্ভব হত। খানখানানের কিতাবখানায় মৌলানা সুফিী এই পদ অলঙ্কৃত করতেন।
৫) অনুবাদক।
৬) কাতিব বা সাধারণ নকলনবিশ
যিনি দুর্লভ পুঁথি নকল করতেন।
৭) খুশনবিশ বা হস্তলিপিবিদ।
8) কাতিব আর খুশনসিবের কাজ
নিরীক্ষণ করতেন মুকাবিলানবিশ। তিনি নকল পুঁথি মুল পুঁথির সঙ্গে মিলিয়ে দেখতেন।
৯) বইবাঁধাইকার
১০) চিত্রশিল্পী
১১) কাগজের প্রান্তে নানান
রকমের কাজ করার জন্যে দক্ষ কারিগরের পদের নাম ছিল জিদওয়াল সাজ
১২) করণিকের কাজ ছিল হিসাব করা
ও মোট বইএর হিসাব রাখা
১৩) ধুলা ও অন্যান্য কিছু
পরিষ্কারের জন্যে ছিল ভৃত্য।
No comments:
Post a Comment