হঠযোগপ্রদীপিকায় গোমাংস ভক্ষণ নিয়ে অনেক পড়ুয়া বুদ্ধিমান বন্ধু বেশ কিছু বাঁকা মন্তব্য করেছেন - তাঁদের মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে ছোটলোকেদের/কারিগরদের/গ্রামীন নানান পেশার সঙ্গঠক দর্শক আর কিছুটা পেছনে ফিরে দেখার কর্মী হিসেবে কিছু কথা বলা দরকার বলে মনে করছি - কারণ এক বন্ধু স্পষ্ট মন্তব্য করেছেন এটা নিয়ে কাটাছেঁড়া করলে নাকি নাথেরা খেপে যেতে পারেন।
---
তন্ত্র মূলতঃ ছোটলোকেদের পন্থ - সেই পন্থে মাংস এবং মদ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তন্ত্রে এসব বিষয়ে বিশদ আলোচনা রয়েছে। তো বাংলার গ্রামের অস্বচ্ছল কারিগর পেশাদারদের দিকে তাকালে স্পষ্ট হয়ে যায় কারা একসময় কি ছিলেন - এদের অনেকেই আজ ছোট করে যুগী নামে পরিচিত - উত্তরবঙ্গের গ্রাম সমাজে আমরা অন্তত ১০টা পেশার কথা এক্ষুণি বলতে পারি(একটি হল হাতে ছোট্ট আকারের খঞ্জনি বাজাতে বাজাতে গোয়ালে ঢুকে গরুর হাল হকিকতের খবর নেওয়া - এঁরাও যুগি নামে পরিচিত) - খোঁজ নিলে আরও কয়েককুড়ি বেরোবে - কয়েকটা পেশার পেশাজীবির সঙ্গে মুখোমুখি সংগঠন করার সুবাদে কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছে যাদের মোটামুটি দক্ষিণবঙ্গে দেখা যায় না - সে বার্তা ভাগ করে নেওয়া যাবে 'খন, যদি সময় সুযোগ আসে।
পরের দিকে একটা বড় সমাজ হিন্দুয়ায়িত হয়। তন্ত্রের অনেক ফ্যাকড়ায় অনেক গোষ্ঠীর বহু কিছুর পরিবর্তন ঘটে - আবার ঘটেনিও - আমি জানি অনেকেই এই সমাজের গরু খাওয়ার নিদর্শন চাইবেন - সত্যি বলতে কি না এক্ষুনি হাতে কোন নিদর্শন নেই। ঠিক যেমন করে শতখানেক বছর আগে আদিবাসীদের(আমরা বলি পরম্পরার সমাজের) ক্ষত্রিয় আন্দোলন ঘটেছিল পৈতে পরার দাবিতে নিম্নবঙ্গে মাহাত(বিশেষ করে নারায়ণ বা পশুপতিদাদের বাপ ঠাকুদ্দা) এবং উত্তরবঙ্গে জলপাইগুড়ি কোচবিহারের রাজবংশীদের নেতা ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার নেতৃত্বে। বৈদ্যসহ বেশ কিছু সমাজ একসময় পৈতের দাবি তুলেছিলেন। সে সব নিয়ে শতখানেক বছর আগে বেশ কিছু বইটইও লেখা হয়ে গিয়েছে - কেন তাদের পৈতে পরার অধিকার আছে ইত্যাদি।
---
গরু মাংস সংক্রান্ত হঠযোগপ্রদীপিকায় এই উক্তিটি আদতে তন্ত্রের একটা কৌমচিন্তার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যে শ্লোকে তার প্রাচীন অভ্যাসের কথা থেকে গিয়েছে। ঔপনিবেশিক আমলে নবজাগরিত হিন্দু হবার সূত্র ধরে তন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকা মানুষেরা ভদ্রলোক হতে চাইলেন, আমাদের ধারনা অন্যান্য শাস্ত্রের মত এগুলি নানা টিকা আকারে সংস্কৃত হয়েছে প্রাচ্যবাদীদের, প্রমিতবাদীদের সংসস্পর্শে এসে, জাতে ওঠার, হিন্দুধর্মে ঢোকার দাবিতে - কিন্তু গরু খাওয়ার কথাটা মুছে যায় নি। ঠিক যেমন আজ ফেবুকেতে বিপুল সংখ্যক ভাজপা ট্রোল অধিকাংশ অউচ্চবর্ণ; ঠিক যেমন করে আজ ভদ্রবিত্ত জাত বৈষ্ণব তার প্রাচীন প্রথা লুকিয়ে হিন্দুধর্মাচরণ করে থাকলেও নানান ভাষা আচারে তাদের প্রাচীন প্রথার নানান রেণু উঁকি মারে এটা দেখিয়েছেন স্বয়ং জাত বৈষ্ণব অজিত দাস মশাই।
এটা বললে যদি ভগবান না মানা, শিষ্য গুরুকে উদ্ধার করে প্রচলিত পথের বাইরে গিয়ে উপমহাদেশকে নতুন ধরণের সাধনার পথ দেখানো নাথ পন্থের মানুষেরা খেপে যান, যাবেন, বা হিন্দুধর্মের ধারকদের আঘাত লাগে, লাগবে। আমরা নাচার।
No comments:
Post a Comment