ডি পি আগরওয়াল, লোকবিজ্ঞান কেন্দ্র, আলমোড়া
আগেই বলেছি ইওরোপ সে সময় মহাকাশনির্ভর নৌবিদ্যা জানত না তাদের নিজেদের বিদ্যা ছিল ডেড রেকনিং, যা বার বার ভুল প্রমানিত হয়েছে। এ জন্যে তারা হন্যে হয়ে সমুদ্রের মানচিত্র খোঁজার প্রাণপন চেষ্টা করে গিয়েছে, কিন্তু সে চেষ্টাটাও বার বার ব্যর্থ হয়। তারা বাধ্য হয়ে লগ মেজার বলে পদ্ধতি বার করতে – জাহাজ থেকে নির্দিষ্ট সময়ান্তরে কিছু দড়ি ফেলে তাকে তুলে নিয়ে জাহাজের গতিবেগ নির্ণয় করার চেষ্টা করা হত। ১৮৬৪ সালের নাবিকদের নির্দেশনামায় বলা হচ্ছে - if the gale has not been the same during the whole hour, or time between heaving the log, or if there has been more sail set or handed, there must be an allowance made for it, according to the discretion of the officer. Sometimes, when the ship is before the wind and a great sea is setting after her, it will bring home the log; in such cases it is customary to allow one mile in ten, and less in proportion if the sea be not so great; a proper allowance ought also to be made if there be a head sea. In heaving the log, great care should be taken to veer out the line as fast as the log takes it; for if the log be left to turn the reel itself, it will come home, and give an erroneous distance. এবং সেটাও ঠিকঠাক দূরত্ব দিতে পারত না।
নৌবিদ্যায় ইওরোপিয় অজ্ঞতার কথা মোটামুটি সে সময়ে স্বীকৃত ছিল। যদিও ইওরোপ তাদের এই অজ্ঞানতা স্বীকার করে না, ইতিহাস সাক্ষী ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ সাল পর্যন্ত সম্ভাব্য অসম্ভাব্য যায়গায় তাদের থেকে উন্নত জ্ঞান খুঁজে গিয়েছে। লিসবন এবং কোয়েম্ব্রার অঙ্কের অধ্যাপক পেড্রো নুনেজকে ১৫২৯ সালে রাজকীয় কসমোগ্রাফার হিসেবে নিয়োগ করা হয়। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ১৫৬৭ সঠিক নৌজ্ঞান প্রযুক্তি আবিষ্কারের জন্যে বিপুল অঙ্কের অর্থ পুরষ্কার ঘোষণা করেন। এ ধরণের পুরষ্কার এর পর বহু ইওরোপিয় সরকার ঘোষণা করবে।
ষোড়শ শতের মাঝামাঝি পর্যন্ত ধ্রুবতারার altitude নির্ভর করে অক্ষাংশ নির্ণয় করার প্রযুক্তি শিখল। যদিও যে যন্ত্র তারা আবিষ্কার করল তা কোনওভাবেই ইন্দো-আরবি প্রযুক্তির ইন্টারপ্রোলেশন প্রযুক্তির কাছাকাছি আসে না। সেটা তৈরি হল সপ্তদশ শতাব্দে ভার্নিয়ের পরে(যার নামে যন্ত্রটির নাম)। তার পরে সঠিক নৌবিদ্যাটি কার্যকর হতে থাকে।
ধ্রুবতারাকে ভিত্তি ধরে সমুদ্রে যাওয়ার বেশ কিছু সমস্যা আছে। ইওরোপ থেকে উপমহাদেশে আসতে গেলে জাহাজকে বিষুব রেখা পার হতে হয়। উত্তরগোলার্ধ থেকে বিষুবরেখার দিকে এগোলে ধ্রুবতারাকে দিকচক্রবালের কাছাকাছি দেখা যায়। কিন্তু দক্ষিণ গোলার্ধে সেই তারাটি নেই। আর ধ্রুবতারা রাতে দেখা যায়, কিন্তু দিনের ব্যালা?
দিনের বেলায় সমুদ্রে নৌচলাচলের ইন্দো-আরবি পদ্ধতিটি ছিল দুপুর বেলায় সূর্যের altitude নির্নয় করা। ধ্রুবতারার উন্নতিকোণের, কোন মাপার যে কোন প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি দিয়েই সূর্যের altitude নির্নয় করা যেত – ইন্দো-আরবি কৃষ্টিতে এই কাজ করার জন্যে বহু ধরণের যন্ত্র ছিল। এখানে আরও একটা সমস্যা রয়ে গেল। সূর্যের উন্নতি কোণ দিয়ে খুব সহজে অক্ষাংশ নির্নয় করা যায় না। ধ্রুব তারার মত সূর্য স্থির থাকে না – উত্তরগোলার্ধে সে গ্রীষ্ণে উত্তরের দিকে এবং শীতে সে দক্ষিণের দিকে সরে যায়।
ফলে সূর্যের altitude থেকে অক্ষাংশ নির্নয় করতে গেলে উত্তর-দক্ষিণের চ্যুতির বিষুবলম্ব (declination)র আঁক কষা দরকার। সূর্যের বিষুবলম্ব রোজ পাল্টায়। মহাবিষুবের(equinoxes) দিনে এটা শূন্য হয় অয়নকালে(solstices) সবথেকে বেশি হয়। আমরা যদি সব থেকে বেশি চ্যুতির পরিমানটা জানি, তাহলে গড় দিনে আমরা সূর্যের গড় বিষুবলম্ব বের করতে পারব – যদি আমরা জানি মহাবিষুব থেকে কত দিন কেটেছে সে সংখ্যাটা জানতে পারি। উদাহরণস্বরূপ আমরা যদি জানি আজ ২২ জুন গ্রীষ্ম solstice এবং সূর্য দুপুরে ৯০ডিগ্রিতে অবস্থান করছে, আমার অক্ষাংশ হবে কর্কটক্রান্তির রেখায় যা ছিল তাই। কিন্তু আজ যদি ২ জুলাই হয় আমরা তাহলে কর্কটক্রান্তই থেকে দূরে সরছি। ২২ জুন বা ২ জুলাই এই তারিখগুলি কোন মানে রাখে না, যদি না আমরা সঠিক পঞ্জিকার সঙ্গে পরিচিত হই, সে পঞ্জিকা আদতে আমায় মহাবিষুব চিনতে সাহায্য করে। ফলে আমার হাতে যদি সঠিক মানের পঞ্জিকা না থাকে তাহলে কোনদিনই দুপুরে সূর্যের altitude দিয়ে, অক্ষাংশ নির্নয় করতে পারব না।
No comments:
Post a Comment