(ছবি - আকবরনামায় আগরা দুর্গ তৈরির চিত্র।সঙ্গে আজকের আগরা দুর্গ, যেখানে আকবরের সময় রাষ্ট্রীয় গ্রন্থাগার ছিল)
আইনিআকবরিতে আবুল ফজল বিশদে সেই সব চিত্রশিল্পীর নামোল্লেখ করেছেন। একশর বেশি চিত্রকর এই সময় বিখ্যাত হন। আকবরের গ্রন্থাগারে অসামান্য দক্ষতায় চিত্রিত প্রচুর বই ছিল। হামজার গল্পের ১২টি খণ্ডের বইতে ১৪০০ ছবি ছিল। তার গ্রন্থাগারে চিংগিজনামা, জাফরনামা, রাজমনামা, রামায়ন, নল দমন, কালিয় দমন ইত্যাদি পুস্তকে অসাধারণ ছবি চিত্রিত ছিল। চিত্রকরদের পৃষ্ঠপোষণা করতে আকবর রাষ্ট্রীয় চিত্রশালা তৈরি করান।
আকবরের মৃত্যু ঘটে ১৬০৫ সালে। তাঁর মৃত্যুর পর আগরা দুর্গস্থিত রাষ্ট্রীয় গ্রন্থাগারের বইএর একটি সুমারি করা হয়। উপমহাদেশে আসা সেই সময়ের দুজন ইওরোপিয়, মনরিকে এবং ডি ল্যাক্ট, সরকারি মহাফেজখানা থেকে এই সুমারির তালিকা নকল করেন। সেখানে দেখি অসাধারণ চিত্রিত ২৪ হাজার পুঁথির বর্ননা। বইগুলির মূল্যমান ছিল ৬৪৬৩১৩১ টাকা। প্রত্যেক বইএর গড় দাম ছিল ২৭ থেকে ৩০ পাউন্ড, পাউন্ডে মোট মূল্যমান ছিল ৭৩৭১৬৯।
রাজার ব্যক্তিগত শিক্ষক মুল্লা পীর মহম্মদ এই গ্রন্থাগারের প্রধান গ্রন্থাগারিক হিসেবে কাজ করেছেন।
রাষ্ট্রীয় সংগ্রহ ছাড়াও উপমহাদেশজুড়ে প্রচুর গ্রন্থাগার গড়ে উঠেছিল। এই গ্রন্থাগারগুলি অভিজাত, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং বেশ কিছু রাজা ও রানীর পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। আকবরের অন্যতম রাজ্ঞী বিদুষী সালিমা সুলতানা বেগম ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যে একটি গ্রন্থাগার তৈরি করেন। তিনি মাকফি ছদ্মনামে প্রচুর ফারসি বয়েত রচনা করেন। সালিমা বেগমের সংগ্রহের বাদাউনির অনুবাদের বত্রিশ সিংহাসন বইটি বাদাউনি বা অন্য কেউ পড়তে নিয়ে এসে হারিয়ে ফেলেন। বাবরের কন্যা, আকবরের পিসি, হুমায়ুন নামা রচয়িতা গুলবদন বেগমও অসাধারণ বিদ্বান ছিলেন এবং তাঁরও ব্যক্তগত গ্রন্থাগার ছিল।
অভিজাতদের মধ্যে প্রথম জীবনে বিদ্বান, আহমেদাবাদের প্রশাসক, আবদুর রহিম খানইখানান, এবং শেখ ফৈজির ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার সে যুগে বিখ্যাত ছিল।
খানইখানানের ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার দেখাশোনার জন্য ৯৫ জন কর্মচারী ছিল। এদের মধ্যে ছিল গ্রন্থাগারিক, বাঁধাইকর, নকলনবিশ, অনুবাদক, ইত্যাদি। অধিকাংশ বই লেখকেরা বা অনুবাদকেরা তাঁকে বই উপহার দেন। জ্ঞানভিখারী বহু মানুষ যারা নিজেদের আত্মপলব্ধির জন্যে পড়াশোনা করতে চাইতেন, তাঁর পুস্তকভাণ্ডারে নিয়মিত যেতেন। জ্ঞানী, লেখক, বইবাঁধাইকার, স্বর্ণমণ্ডক(গিল্ডার) ইব্রাহিম নক্স খানইখানানের কিতাবদার ছিলেন। মাখজানিআফগানির লেখক নিয়ামতুল্লা কিছু দিন খানইখানানের গ্রন্থাগারিক হিসেবে কাজ করেছেন, তারপরে তিনি জাহাঙ্গিরের দরবারে ইতিহাসকার হিসেবে যোগ দ্যান।
মুঘল আমলের শেখেরাও জ্ঞানের প্রত্যাশী ছিলেন। শেখ ফৈজির নিজস্ব গ্রন্থাগার ছিল তাতে বইছিল ৪৩০০ (যদিও এর আগে অন্য সংখ্যা বলা হয়েছে - অনুবাদক)। ১৫৯৫তে তাঁর মৃত্যুর পর তার বইগুলি আগরার রাষ্ট্রীয় গ্রন্থাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
আকবরের সময় জৌনপুরের প্রশাসক, সিপাহসালার মুনিম খান খনইখানান জ্ঞান ও জ্ঞানীর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং গোমতির ওপরে একটি সেতু তৈরি করে দ্যান। বই সংগ্রহ তার নেশ ছিল। তাঁর বন্ধু বাহাদুর খান উজবেগ তাঁকে কুলিয়া সাদি উপহার দ্যান। দেওয়ান মির্জা কামরানের মত তিনিও বই কিনতেন গ্রন্থাগারের জন্যে।
(চলবে)
(চলবে)
No comments:
Post a Comment