Friday, August 17, 2018

ছোটলোকেদের পাঠশালা - গুরুমশাই চিরঞ্জিত দেবনাথ

ছোটলোকেদের কিভাবে ভদ্রবিত্তদের সঙ্গে কথা বলতে হয় শিখিয়ে দিলেন Chiranjit Debnath। ভদ্রবিশ্বের সব ক'টা তুণীরকে ভোঁতা করে দেওয়ার পথ দেখালেন। বাংলার কারিগরদের পক্ষে থেকে আপনাকে জোহার, আদাব, শুভেচ্ছা। ভদ্রসমাজএর প্রতি ছুঁড়ে দেওয়া তাঁর কথাগুলি এক ছাদের নিয়ে আসা গেল-
---
চটজলদি লোক খুশি করাটাই তো শাসকের কাজ! সেটাই তো রাজধর্ম! ওহ আপনাদের তো আবার পঞ্চবার্ষিকী বা পঞ্চাশবার্ষিকী পরিকল্পনা না হলে মন ভরে না! ওগুলো হলো সব ফার্স, যত সব বড়বড় ইন্টেলেকচুয়াল মার্কা কথা, আসলে পঞ্চাশবার্ষিকী পরিকল্পনার নামে পাবলিকের পোঁদ পঞ্চাশ বছর ধরে মারার পরিকল্পনা। যাতে পঞ্চাশবছর পূর্ন হওয়ার আগে পোঁদ ফেটে রক্ত বেরিয়ে ঘা হয়ে গেলেও লোকে জবাবদিহি না চায়, কারণ তখনই বলা হবে, 'বলেছি তো এটা পঞ্চাশ বছরের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা - এর সুফল আপনি না, আপনার নাতি নাতনি পাবে!' আপনি শুধু ঘায়ে মলম লাগিয়ে যান!
কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাই শিল্পপতিদের জন্য নয়, ওদের জন্য সব "ডু ইট নাও"! ওদের জন্য লাল ফিতের ফাঁস আলগা হবে, ওদের জন্য "এক জানলা পলিসি" হবে, ওদের যাতে ব্যবসাবাণিজ্যের নামে পাবলিকের ব্যাংকে জমানো পুঁজি বিনা মর্টগেজে ধার নিয়ে বিদেশ পালিয়ে যেতে সুবিধা হয়, সে সব ব্যবস্থাই হবে, এবং সে সব করতে হবে "ডু ইট নাও" ভিত্তিতে!
শুধু যত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা পাঁচু কৈবর্ত আর কালু শেখের জন্য। ওরা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করবে, তারপর সরকারি সেচ প্রকল্পের জন্য অপেক্ষা করবে, তারপর সরকার কবে ধান কেনার শিবির করবে তার অপেক্ষা করবে, তারপর ফসল নষ্ট হলে সরকারি ক্ষতিপূরণের অপেক্ষা করবে বছরের পর বছর, তারপর সে ক্ষতিপূরণের চেকে অজস্র ভুল থাকবে ও তা ঠিক হয়ে আসতে আসতে ওরকম সাতটা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে - সব পঞ্চাশ বার্ষিকী পরিকল্পনা!
গাঁড় মেরেছি ওসব পরিকল্পনার, এখন গরিবরাও চাইবে চটজলদি সমাধান! ডু ইট নাও হোক এবার!
...কি আশ্চর্য! আপনি নিজেও জানেন না আপনি কতবড় সমাধান আপনার কমেন্টের মাধ্যমে করে দিয়েছেন! হ্যাঁ, সেটাই তো! সত্যি ম্যাজিক! দিয়েই দেখুন না 50000 টাকা কিছু হকার কারিগর বন্ধুদের হাতে! দেখুন না ওরা কি করে! বিশ্বাস করুন বা না করুন, সত্যি হলো এটাই যে ওরা সোনা ফলাবে!
...শুনেছি আম্বানি আদানি জিন্দাল ইত্যাদি গুটি কয় 5-6 জন শিল্পপতির কাছেই ব্যাংক পাবে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা, যেগুলো ব্যাংক ওদের দিয়েছিল শিল্প মারাতে! এবং ওগুলো এখন সব এনপিএ, অর্থাৎ ওরা নাকি সে লোন শোধ করছে না! আচ্ছা ওই 5-6 টা শিল্পসংস্থায় ভারতে কটা লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে ডাইরেক্ট বা ইনডাইরেক্টলি? কয়েক লক্ষ? আচ্ছা ভাবুন তো তাহলে কয়েক লক্ষ স্টার্ট আপ যদি প্রত্যেকে 1 কোটি করে লোন পেতো, বা কয়েক কোটি কারিগর যদি প্রত্যেকে কয়েক লক্ষ করে লোন পেতো কোনো মর্টগেজে ছাড়া - এ দেশটা কোথায় যেত? এই সামান্য বিষয়টা বুঝতে হার্ভার্ড যেতে হয় না, কমন সেন্সই যথেষ্ট।
...বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ও পাবলিক পলিসি হল সেই পাঠ্যক্রম যেখানে শেখানো হয় কিভাবে লিগ্যালি পাবলিকের পয়সায় পাবলিকের পোঁদ মেরে পাবলিককেই ভুল বুঝিয়ে, যতটা পারা যায় দুইয়ে নেওয়া যায়।
আপনার দাদা উদাহরণই হলো ভুলভাল উদাহরণ! আপনার মূল কথার জবাব দেওয়ার আগে তাই উদাহরণ নিয়েই দু পাতা জবাব দেওয়া যায়!
আপনি আবার "বাংলা" কে টানলেন! কেন? বাংলা ছোটলোকরা খায় বলে? স্কচ বা ভদকা বললেন না কেন? আইরিশরা যে মাল নিজের বাড়িতে বানায়, তাই স্কচ বলে সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত - কারণ ওটা কি অমৃতের আস্বাদ দেয়? না! কারণ ওটা আইরিশ জাত্যাভিমান, যা বলে আমাদের স্কচই হলো সেরা! আর সারা পৃথিবীতে ব্রিটিশ উপনিবেশের সুযোগ নিয়ে ওরা সেটা সারা পৃথিবীতেই প্রচার করতে পেরেছে।
ভদকা হলো রাশিয়ান হোমমেড, এটাও সারা পৃথিবী বিখ্যাত! কারণ ওই একটাই, আবারও রাশিয়ান জাত্যাভিমান, যা বলে ওদের ভদকাই সেরা।
এমনকি আমেরিকানরা বুরবোঁ ও বিখ্যাত করে ফেললো!
শুধু আমরা বাঙালিরাই আমাদেরই নিজস্ব অসাধারণ তাড়ি ও "বাংলা" নিয়ে গর্ব করি না! বেঁচে থাক আমার তাড়ি, বেঁচে থাক আমার "বাংলা"!
এবারে দাদা আপনার আসল কথায় আসি। সাধারণ কারিগর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এরা কোনোদিন লস করে না। কোনদিন শুনেছেন যে কোনো ক্ষুদ্র দোকানদার লসে ব্যবসা করছে? কোনো ছোট কারিগর লসে তার সামগ্রী বিক্রি করছে? কোন ভ্যান রিক্সা চালক, টোটো চালক, ট্যাক্সি ড্রাইভার লসে গাড়ি চালায়?
এই লস করে বিজনেস করা, ও লস কে "বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট" এর নাম দেওয়া, এসব হলো আধুনিক শিল্প-মাফিয়া দের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির ভাষা। আসলে লস ওরাও করে না, ব্যাংকের টাকা (অর্থাৎ কিনা পাবলিকের টাকা) বিনা মর্টগেজে ধার নিয়ে, সেই টাকা ঘুরপথে মরিশাস, আইল অফ ম্যান, সেসেলস ইত্যাদিতে বিভিন্ন পেপার-কোম্পানি (অর্থাৎ যাদের অস্তিত্ব শুধু কাগজে) হয়ে ফের এই দেশেই ইকুইটিতে ইনভেস্ট হয়ে যায়। বিরাট জটিল ব্যাপার, অথচ খুবই সহজে হয়ে যায়। মাঝখান থেকে বিজনেস লসে দেখিয়ে আরো বেশি লোনের আবেদন করা হয়। এবারে ব্যাংক প্যাঁচে পরে গেছে। কারণ ইতিমধ্যে ব্যাংক হাজার হাজার কোটি দিয়ে দিয়েছে, নতুন লোন না দিলে পুরোনো লোন ফিরে পাবার আশাও জলাঞ্জলি দিতে হয়। তাই ব্যাংক আবার লোন দেয়, এবং কালচক্রের মত এই চক্র চলতেই থাকে।
তাই লোন বা ইনসেন্টিভ যা দেওয়ার দেওয়া হোক সাধারণ কারিগর, প্রান্তিক কৃষক, ক্ষুদ্র দোকানদার ব্যবসায়ীদের। যাদের বাজার থেকে 2-3 পার্সেন্ট মাসিক সুদে টাকা তুলে ব্যবসা করতে হয়, তাসত্বেও লাভ করেন, সে যত কমই হোক। এরা যদি সরকার তথা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতা পান, এরা পৃথিবীতে চাঁদ নামাতে পারবেন। কিন্তু সরকার-শিল্প মাফিয়া-ব্যাংকিং মাফিয়া-আমলা নেক্সাস এটা করতে দেবে না।
আম্বানি আদানি ভারতের শাসনব্যবস্থার "দুর্নীতি" নয়, ওরাই ভারতের শাসনব্যবস্থা! আম্বানি, আদানি এরা আইনত কোনো দুর্নীতি করেন নি, কারণ ওরা যেটা করেন ও করেছেন সেটাকে আইনের পবিত্র জলসিঞ্চন করে শুদ্ধ করে নেওয়ার জন্য একগুচ্ছ আইনজীবী, চার্টার্ড একাউন্টেন্ট, রাজনীতিবিদ, আমলা এবং he who must not be named অর্থাৎ হাই..(খক খক...☺️), সুপ্রীম..(খক খক..☺️) ইত্যাদি তো রয়েছেন। যত দুর্নীতি করেছে সালা ওই ছোট দোকানদার যে দুটি টাকা সেলস ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছে - ধর ধর বেড়ে ব্যাটাকে ধর!

No comments: