কিতাবিফিয়ালটিব্বঅলমনসুরি (Book on Medicine Dedicated to al-Mansur) পাণ্ডুলিপিটির একটি সংস্করণ বর্তমানে আছে আমেরিকার ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের জিম্মায়। পাণ্ডুলিপিটির রচয়িতা মুহম্মদ জাকারিয়া অল রাজি(মৃ ৯২৫)। বইটিতে অল রাজি চিকিৎসা, খাদ্য, স্বাস্থ্যবিধি, শারীরবিদ্যা, দেহতত্ত্ব, সাধারণ রোগবিদ্যা এবং প্রায়োগিক শল্যচিকিৎসা বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এই বইটি ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতাব্দে আবার নকল করা হয়।
এই নকলটি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এখানে বেশকিছু চিত্রাঙ্কন ব্যবহৃত হয়েছে যার সঙ্গে বইটির মুল ভাবের কোন সাযুজ্য নেই। কারণ জানা নেই। কিন্তু অনেকের ধারণা বইটির দাম বাড়াতে এই চিত্রগুলি ব্যবহৃত হয়েছিল। এই জন্যে বইতে কিছু শুদ্ধ কবিতাও ঢুকে পড়ে। যদিও এই বিষয় বর্তমানে আমাদের আলোচ্য নয়।
আমাদের কাছে বইটি আকর্ষণীয় তার ঐতিহাসিক মূল্যে - কিতাবিফিয়ালটিব্বঅলমনসুরির দুই মলাটে যে সব পাঞ্জার ছাপ্পা দেখা যায়, তা দিয়ে বইটির হাত বদলের ইতিহাস আমরা বুঝতে পারি, আমরা বুঝতে পারি কোন কোন পদাধিকারী গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনায় থকতেন। এই দুই মলাটে যে বারোটি পাঞ্জা পড়েছে, তাতে সর্বশক্তিমান ইয়া করিম থেকে শুরু করে শাহজাহানের সময় গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাগারিক-অভিজাত ইনায়েত খানের অলহজজ্ব ১০৬৮/১৬৫৭ খ্রির পর্যন্ত অনেকের ছাপ আছে। বইটির পাঞ্জার লেখাটি মুঘল দরবারের ভাষা ফারসিতে একটু বাঁকা অক্ষরের টানে লিখিত, যা দিয়ে বইটির মুল লেখার সঙ্গে আলাদা করা চলে। অলহজজ্ব ১০০২/১৫৯৪খ্রিতে কিতাবঘর পরিদর্শক মুহম্মদ হোসেইনের পাঞ্জার ছাপ আছে। এছাড়াও নাজিম, দারোগা ইত্যাদির নাম তারিখ সহ পাঞ্জার ছাপ বইটিতে রয়েছে।
ঠিক এই সময়ের গ্রন্থাগ্রিকেরা যেভাবে বই হাতবদলের সময় নথিকরণ/ভুক্ত করেন, ঠিক সেইভাবেই মুঘল আমলেও কাজ হত। একটি সাধারণ লব্জ ব্যবহৃত হত vared arz shud বা (বইটি) গ্রন্থাগারে ঢুকল। এই লব্জের সঙ্গে পুথি গ্রহণের তারিখ, যে পদাধিকারী এই হাত বদলের কাজ করছেন তাঁর নাম লিখিত হত। tahwil বা ঠিক আছে লব্জের পড়ার অর্থ বইটি অবস্থা দেখে পরিদর্শক সন্তুষ্ট হয়েছেন – এখানে আবার গ্রন্থাগারিকের নাম এবং তারিখ উল্লিখিত হত। মুঘল আমলে গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনার যে সব পদাধিকারীর স্তর আমরা এর আগে আলোচনা করেছি, শাহজাহানের সময় কিন্তু সেই স্তরের একটা ছাপ দেখতে পাচ্ছি এই টিব্ব বইটির আলোচনায়।
শাহজাহাননামা সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি রাষ্ট্রের গ্রন্থাগারের সার্বিক দায়িত্ব(darugha-yi kitabkhana) পেয়েছিলেন ইনায়েত খান আলহজ্জ্ব ১০৬৮/১৬৫৭খ্রি। এই বইতে তার পাঞ্জাওয়ালা স্বাক্ষর রয়েছে। ইনায়েত খানের অর্থ সর্বশক্তিমানের স্নেহপ্রাপ্ত। এই উপাধিটি দেওয়া হয় মুঘল দরবারের অন্যতম উচ্চপদস্থ(sahib mansab) অভিজাত মির্জা মহম্মদ তাহির আশেনাকে(মৃ ১৬৭০)। তাঁর পিতা জাফর খান আশান কাবুল আর কাশ্মীরের প্রশাসক(wali) ছিলেন। তাঁর মা বুজুর্গ খানুম, শাহজাহানের স্ত্রী মুমতাজ মহলের বোন।
ইনায়েত খান আবদুল হামিদ লাহোরির রচনা এবং অন্যান্য ইতিহাস অবলম্বনে কিতাবইমুলখাস্তাভারিখশাহজাহান (Extracts from the History of Shah Jahan) রচনা করেন। ইনায়েত খানের পাঞ্জারছাপ্পা যে তারিখে পড়েছে, তাতে পরিষ্কার, তার পদ গ্রহণের পরে পরেই এই বইটি রাষ্ট্রীয় গ্রন্থাগারে ঢুকেছে। ঠিক তার বারো মাস পরে ১৬৫৮ খ্রি আওরঙ্গজেব ক্ষমতায় আরোহন করলে ইনায়েত খান কাশ্মীরে একাকী জীবন কাটাতে চলে যান।
No comments:
Post a Comment