Monday, June 25, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - নবজাগরিত রমেশ দত্তর উপনিবেশ চিন্তা - পলাশীর আগে চাষীরা অত্যাচারিত ছিল

আমরা কারিগরেরা মনে করি পলাশী ছিল কারিগর চাষীদের পরাধীনতার প্রথম ধাপ। নবজাগরিত ভদ্রলোকেরা যে সেটা মনে করতেন না, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ জমিদার পরিবারের উত্তরপুরুষ রমেশ দত্ত।
---
নিচের লেখাটি ব্রিটিশদের উপমহাদেশিয় সম্পদ লুঠ তত্ত্বের প্রথম দিককার অন্যতম ভগীরথ, উত্তর কলকাতার রামবাগানের রমেশ দত্তের দ্য পিজান্ট্রি অব বেঙ্গলএর তৃতীয় অধ্যায়ের শুরুর স্তবক।
নবজাগরণের অগ্রদূতেদের অন্যতম প্রতিভূ, স্পষ্ট মনে করতেন, ব্রিটিশ আমলে কৃষকেরা অগ্রগতির, উন্নতির স্বাদ পেয়েছে। ঠিক তাই জন্যে তিনি প্রশাসনিক সেবা শেষে, লন্ডনেই থেকে যান এবং জগদীশচন্দ্র যখন বাংলায় চলে আসার জন্যে পাকাপাকিভাবে মনস্থির করে উঠতে পারছেন না, রবীন্দ্রনাথ বার বার জগদীশচন্দ্রকে বাংলায় স্থায়ীভাবে বসতির জন্যে অনুরোধ করছেন, সে সময় রমেশ দত্ত মশাই লন্ডনে তাঁর বাসায় গিয়ে বাংলায় আসতে স্পষ্ট নিষেধ করেন, বলেন দেশে গেলে অকৃতজ্ঞ বাঙ্গালিরা তাকে দেখবে না, তাঁকে না খেয়ে অনাহারে মরতে হবে।
"ইংরেজ শাসনে বাংলার রায়তি প্রজারা
১৭৫৭ খ্রীঃ নাগাদ কিছু মুসলমান আর হিন্দু অভিজাত অতিষ্ঠ হয়ে দেশের অত্যাচারী সুবাদারকে সিংহাসনচ্যুত করার জন্য বিদেশী বণিকদের সাহায্য চাইল। সুযোগসন্ধানী ওই সব বণিকদের কাছে এই প্রস্তাব মোটেও অবহেলার ছিলনা। সঙ্গে সঙ্গে তারা সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিল। তারপরে এক শতাব্দীরও বেশি কেটে গেছে। সেই মুসলমান আর হিন্দুরা যে কোথায় হারিয়ে গেছে তার কোনো খবর নেই। তারা যদি বিস্মৃতির অতল থেকে ফিরে আসে তো তাদের দেখে গর্ব হবে যে তারা অন্তত লোক নির্বাচনে তখন কোন ভুল করেননি। অরাজকতার প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া এক দেশ যা ঘন ঘন বিদেশি আক্রমণের শিকার হোত, যে দেশকে দেশের শাসনকর্তারা নিজেরাই শোষণ করতো, অবাক বিস্ময় তারা দেখবে, সেই দেশের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের বাড়বাড়ন্ত গোটা দেশজুড়ে চলছে। চাষাবাদ সম্পদ বাড়ছে দেশের। তারা আরও খুশি হয়ে দেখে দেশেরই এখানে ওখানে শহর নগর গড়ে উঠেছে। সাহিত্য আর বিজ্ঞানে এদের চেয়ে এগিয়ে চলেছে তা বুঝেও খুশি হবে তারা। আর এই ব্যাপারে এতটাই এগিয়েছে যে অতীতের জ্ঞানীগুণীরা তাদের কাছে কিছুই নয়।
সবশেষে বলি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা, এতদিন সব রাজকীয় শক্তির নিরঙ্কুশ শোষণের যে চিরাচরিত প্রথা জনজীবন থেকে ধন-সম্পত্তির নিরাপত্তা বোধটাই মুছে গিয়েছিল তারা এ দেখে অবাক হবেন যে, সাধারণ মানুষের মন থেকে সেই চিন্তা দূর হয়ে নিরাপত্তা বোধ জেগেছে, সাধারণের মনে স্বাধীনতা ফিরে এসেছে, ভারতের ইতিহাসে এমন ব্যাপার তো অভূতপূর্ব। এমন স্বাধীনতা বা আমাদের শুধু ইচ্ছামতো কাজ করার সুযোগই দেয়নি দিয়েছে বলার এবং চিন্তা করার স্বাধীনতা যা আমাদের শুধু ইচ্ছামত, এমনকি তা যদি আমাদের শাসনকর্তাদের বিরুদ্ধেও হয়। অতীত নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলে কিছু না কিছু শেখা যায়। তবে অতীতের শাসন অতীতের শাসকদের কিছু উদারনীতির কথা মনে রেখেও তাদের বিচারের নিরপেক্ষতা নিয়ে যথেষ্ট বিরূপ মন্তব্য করা চলে। এ ব্যাপারে একশ বছর আগে আমরা কোন পরিবেশে বাস করতাম তার কথাও যেন সম্পূর্ণ না ভুলে যাই। সেই তুলনায় ব্রিটিশ শাসনে আমরা কি আশীর্বাদ ভোগ করছি সে কোথাও যেন মনে করি। এ ব্যাপারে তাদের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বার বার আমাদের স্মরণ করা উচিত।"
অনুবাদক - শিশিরকুমার মজুমদার

No comments: