Monday, June 5, 2017

বাংলা বাঙ্গালির স্বাভিমান এবং আমাদের মত অবাঙ্গালি উপাধিধারীদের বাংলায় বসবাস প্রসঙ্গে...

বাংলা এমন একটা ভূখণ্ডের নাম, এই এক শতক আগেও মিথিলা, চম্পা, ভোজপুর এমন কি রেঙ্গুনও বাংলা সুবার মধ্যে পড়ত।
১১৬৪, ১৭৫৭র আগে বাংলার শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার সমাজ যেহেতু বিশ্বের সঙ্গে কয়েক শত বছর ধরে ব্যবসা করেছে, ফলে বাংলা ভাষার অবস্থা বিপন্ন, বাঙ্গালির অবস্থা দিনের পর দিন ঢালের দিকে গড়াচ্ছে এমন অবস্থা অন্তত গ্রামীন বাংলায় আসে নি - এখনও নেই। বরং ১০০০ বছর আগে চিনারা ৪০০টি বাংলা ব্যবসা শব্দ নিয়ে চিনা ব্যবসায়ীদের জন্য একটি কোষ তৈরি করেছিল বাংলায় ব্যবসা করার জন্য - কেননা ব্যবসা হত শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার গাঁইয়া সমাজের সঙ্গে - অভিজাতদের সঙ্গে নয়, তারা তখনও উচ্চ পদে চাকরি করতেন - তাঁদের মন প্রাণ ঢালা ছিল সংস্কৃত, আরবি, ফার্সি বা ইংরেজির পায়ে।
গোস্বামী ভায়েরা - জীব গোস্বামীকে বাদ দিয়ে - চৈতন্যের ডাকে গৌড়ের প্রধানমন্ত্রী আর অর্থমন্ত্রীর পদ ছেড়ে বাংলায় থাকেন নি, বৃন্দাবন চলে যান আর এক কলমও বাংলায় লেখেন নি। আজও বাংলা বা নিজের ভাষা ব্যবহার করেন অভদ্রলোক, চণ্ডাল, বৈশ্য, শূদ্র অভদ্রলোক গাঁইয়া মুসলমান।
অভিজাতরা কোন দিনই বাংলা বা দেশি ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করেন নি - এই সে দিনও প্যারিচাঁদ মিত্তিরের ভাই কিশোরীচাঁদ এক বর্ণও বাংলায় লেখেন নি - তেমনি স্বদেশি নামে যে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছিল, সেখানেও বাংলার প্রযুক্তি, পণ্য, উতপাদন বিতরণের দর্শনের অস্তিত্ব ছিল না - দিনের শেষে সেদিন ভদ্র বাঙালি সওদাগর (কর্পোরেট) কোম্পানি বা রাণীর চাকরি করেছে আজ সে আরও বড় সওদাগরি কোম্পানিতে বা সরকারি দপ্তরে কাজ করেছে - যাদের অন্তর অন্তত বাঙালি বা বাংলার কোন কিছুরই সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।
যারা গত দেড়শ বছর বাংলায় তথাকথিত বাংলা সাহিত্যসেবী তাঁদের হাতে তৈরি বাংলা সাহিত্য বাংলার মাটির সঙ্গে কতটা জুড়ে রয়েছে আজও সেই প্রশ্ন তোলা যাক - বরং দূরদ্বীপগুলির সাহিত্যের সঙ্গে কতটা আত্মীকৃত সেই লক্ষ্যের দিকে আজও নজর থাকে - এতা কঠিন কঠোর বাস্তব - আমি নাটিক চলচ্চিত্র ছবিআঁকা সব কিছু ধরেই বলছি।
---
এই লেখাটা লিখছে এমন একটা গাঁইয়াদের সঙ্গে রাজনীতি করা লোক যার উপাধি উত্তরপ্রদেশ বা ওডিসার মানুষদের কৃষ্টির সঙ্গে জড়িয়ে। আমরা বাংলায়(যদিও মেদিনীপুর বহুকাল ওডিসার অন্তর্ভূক্ত ছিল) রয়েছি অন্তত চারশ বছর। ওডিসা নয় বাংলা বাঙ্গালির অধিকারের আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছি। অসমে জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালার মৃত্যু দিন শিল্প দিবস হিসেবে পালিত হয়।
---
আমাদের মনে হয় যে সব মানুষ বাংলার অস্তিত্ব নিয়ে, বাঙ্গালির অস্তিত্বের প্রশ্নে আন্দোলন করছেন, তাদের দাবিটা বঙ্গবন্ধুর বাংলা বাসের অধিকার একমাত্র বাঙ্গালির এমন দাবি নিয়ে নিশ্চয়ই লড়াই করছেন না।
জানার ইচ্ছে রইল।

No comments: