ইমান ও নিশান থেকে--
"এই ধর্মবোধ ধার্মিক ঐতিহ্য, তথাকথিত অর্থে 'সনাতনী', প্রাক ঔপনিবেশিক যুগ থেকে আহৃত। কিন্তু এই ঐতিহ্য স্থানু নয়, বরং ক্রিয়াশীল। এর মধ্যে নানান রদবদল হয়, আঞ্চলিক ও দেশীয় এমনকি ব্যক্তিগত নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে অনুকারীরা ঐতিহ্য বদলে নেন। এমনকি আনকোরা অভিজ্ঞতাকেও ঐতিহ্যবলে চালু করা হয়। ধার্মিক ঐতিহ্য গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ার কাজ জটিল, বোধহয় ভারতের ইতিহাসে অন্যতম দুরুহ বিষয়, তার মধ্যে আদান প্রদান, সমঝোতা, দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের শেষ নেই। বর্তমান প্রসঙ্গে (গারো স্বাধীনতা সংগ্রাম - পাগলাই ধুম এবং তিতুমীরের স্বাধীনতা সংগ্রাম) আমরা শুধু বলতে পারি যে এই ঐতিহ্যে 'ব্যক্তিগত রাজনৈতিক অধিকার' সদর্থকভাবে নেই। এই ঐতিহ্যে কর্ত্যব্যের প্রত জোর দেওয়া হয়েছে। সামাজিক থাকবন্দে (হায়ারর্কি) স্থিত নানা মানুষের নানা কর্ত্যব্যের তালিকার মধ্যেই ক্ষমতার সম্পর্ককে বলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত গ্রাম, সমূহ, সম্প্রদায়, কুল বা গণের মাধ্যমেই রাষ্ট্র বা তার প্রতিনিধির কাছে ব্যক্তি হাজির করা হয়েছে। ব্যক্তির সত্ত্বা কোথাও কখনো জাহির হয় নি, এ কথা বলা সত্যের অপলাপ হবে। কিন্তু ক্ষমতার বিন্যাসে কোন না কোন সমূহের প্রতিনিধিত্ব বার বার ব্যক্তিকে ছাপিয়ে উঠেছে, 'আমির' চাইতে 'আমরা', 'তারা' বা 'তোমার' কণ্ঠস্বর তুলনামূলকভাবে জোরে শোনা গেছে, ব্যক্তি ছিল, ব্যক্তি সত্ত্বাও খুঁজে পাওয়া যাবে, কিন্তু ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদ-এর অস্তিত্ব 'সনাতনী' ঐতিহ্যে ছিল না।
"ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র, তার আইনি শাসন, বেহুদা শোষণ, তার সর্বেশ্বরতা পাবার ইচ্ছা, অক্ষমতা ও তজ্জনিত গড়ে ওঠা সরকার, সাহুকার এবং জমিদারের গাঁঠবন্দীর রূপকে ভারতীয় সমাজের নানা মানুষ তাদের দেশজ ধার্মিক ঐতিহ্যে, 'আমরা', 'তারা' ও 'তোমরা' বর্গে বোঝার চেষ্টা করেছিল।"
No comments:
Post a Comment