আজ সকালে কিছু কাজে বাঁকুড়া যাচ্ছিলাম। তো মকিমের সঙ্গে আমার আলাপ ফেবুতে। কাল যোগাযোগ করে ঠিক করলাম মকিমের সঙ্গে দেখা করে যেখানে যাওয়ার যাব।
মকিম থাকেন রাজবলহাটে। শুনেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল। অতীতেরে ভুরসুট পরগপণার রাজধানী ছিল এটি। বহুকাল ধরেই ভুরসুট পরগণা কৈবর্তদের শাসনে ছিল। কয়েক দিন আগেই কৈবর্তরাজ ভীমের মেলার কথা হচ্ছিল মাকিম এবং আরও কিছু বন্ধুর সঙ্গে। সেটা আজও হয়।
তো প্রাচীন বাংলার স্থানিক তীর্থ দর্শনে গিয়ে, বাস্তবে যা দেখলাম সেটা আরও আশ্চর্যের নয় চোখে জল আনার - মকিম একটা ছোট্ট বেকারি চালান - নাম দিয়েছেন মজদুর বেকারি। আজও কাঠ জ্বালিয়ে রাসায়নিক ছাড়া বেকারি দ্রব্য উৎপাদন করেন মকিম তাঁর শূদ্র কারিগরেরা পরম্পরার সেঁকা পোড়ার জ্ঞান নিয়ে। সক্কলে পরস্পরের হাত ধরাধরি করে চালাচ্ছেন এই কারখানাটা।
না এই কারখানার ইংরেজি নাম নেই, কোন তথাকথিত ব্রান্ড নেই, বড় পাকা বাড়ি নেই, "আন্তর্জাতিকমানের" যন্ত্রপাতি নেই, নামি দামি ইংরেজি প্রথায় শিক্ষিত চাকুরে নেই - কিন্তু আছে অসাধারণ বাঙ্গালি জেদ, অসাধারণ ব্যবসার পরম্পরায় থাকার লড়াই, আছে খুব সাধারণ থেকে সাধারণতম মানুষকে আরও একটু ভাল খাওয়ানোর প্রাণান্তকর উদ্যম, আর অসাধারণ বুকভরা বাংলা সদিচ্ছা।
বাংলার হাজারো কোটি অমূল্য শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান উদ্যমের মধ্যে মকিম একজন কড়ি - সেই পথে থাকার জন্য জ্ঞানী দক্ষ জন্য মকিমকে সালাম।
রাজবলহাটের মাটি ছোঁয়া তীর্থ দর্শনের সামিল ঠিকই - কিন্তু মাকিমের ছোট্ট কিন্তু অসাধারণ বেকারিই তীর্থ দর্শনের কাজ করল - রাজা রাজড়া নয় - সভ্যতা তৈরি করে মকিমের মত জ্ঞানী, দক্ষ, প্রজ্ঞাবান কারিগর।।
যে ব্যবসাদারেরা দামোদর ইত্যাদি নদ-নদী দিয়ে অসাধারণ বাংলার উতপাদকেদের উতপাদন নিয়ে যেতেন সারা বিশ্বে, মাকিম, মধুদা, নারায়ণ সেই ধারার আজ জীবিত জলজ্যান্ত প্রতিনিধি।
ব্যক্তি আমার ভাগ্য ভাল এই মানুষগুলো আমার মত অকম্মাকে সঙ্গে নিয়েছেন।
এদের প্রত্যেককে প্রণাম।
প্রত্যেক 'শিক্ষিত' বাঙ্গালির জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত হোক।
বাংলার কারিগর ব্যবস্থা চিরজীবি হোক!
বাংলার কারিগর ব্যবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হোক!
জয় বাংলা!
জয় গুরু!
প্রত্যেক 'শিক্ষিত' বাঙ্গালির জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত হোক।
বাংলার কারিগর ব্যবস্থা চিরজীবি হোক!
বাংলার কারিগর ব্যবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হোক!
জয় বাংলা!
জয় গুরু!
No comments:
Post a Comment