সোমনাথ রায়-
ইতিহাসের যে পয়েন্টারগুলি আপনি দিয়েছেন, সেটার বাইরে আর কয়েকটা জিনিস নিয়ে আমার কিছু প্রশ্ন আছে-
১) গাঁইয়া অর্থনীতিতে স্বাধীনতার প্রভাব কীরকম? ভূমি সংস্কারের প্রভাবই বা কীরকম আর উত্তর-উদারনীতি (১৯৯১) এই উৎপাদন প্রক্রিয়া কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে?
২) কৃষি শ্রমিক এবং ভ্রাম্যমান শ্রমিক, এই বর্গগুলি কি ব্রিটিশ কলোনির ফলে তৈরি না আগে থেকেই ছিল?
এ সব আপনার জানা উত্তর তবু আমাদের মত দিচ্ছি-
১) ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের থেকে যে দেশ স্বাধীন হয়েছে সেটা নিয়ে আমি যে সংগঠন করি, তাঁদের বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই কিন্তু যে নীতিগুলি ব্রিটিশ সাম্রাজ্য অনুসরণ করত, সেগুলি খুব একটা পাল্টায় নি বরং তার বিরোধতা আরও কঠিন হয়েছে কারণ এই নীতিগুলো প্রয়োগে দেশ গঠনের বাধ্যবাধকতা জুড়ে দেওয়া হয়েছে। দেশিয় প্রযুক্তিকে মারতে
আমাদের একটা লেখা তুলে দিই
অথচ ঐতিহ্যময় গ্রামীন উতপাদন কেটে ছেঁটে শহুরে বাজারে বিক্রি করতে দিল্লিতে একটি আস্ত মন্ত্রক বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রিয় সরকার। সেই সরকারি প্রকল্পে বাজার বিমুখ বর্জ্য, অশিল্প তৈরি হচ্ছে। গ্রামকে মেনস্ট্রিমের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় যোগ্য করে তুলতে বহু প্রকল্পে প্রচুর অর্থ খরচ হচ্ছে না তা নয় কিন্তু কাজের কাজ কি হচ্ছে বলা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। প্রকল্পে গ্রামীণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ খুব কম। স্বাধীণতার পর ভারতে শুরু হয়েছিল টেকনলজি ট্রান্সফার প্রকল্প। আজও চলছে। ইওরোপ-আমেরিকা-জাপান প্রযুক্তির ঋণ নিয়ে দাঁড়াল রাজনেতা, আমলা, ব্যবসায়ী, স্বেচ্ছাব্রতীদের সামনে। এতে কেন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণের বড় পুঁজির প্রযুক্তির দর্শনের ইওরোপমন্যতার তিনটে পাখি মরল - এক, পশ্চিমি প্রযুক্তি সর্বশক্তিমান, আধুনিক এবং সর্বরোগহর, এই দর্শণ গাঁয়ে পৌঁছে দেওয়া গেল; দুই, যতটুকু দেশিয় প্রযুক্তি টিকে ছিল, তাকে প্রাচীণ, গ্রামীণ, পারম্পরিক, প্রিমিটিভ দেগে, উচ্ছেদ করে সসম্মানে জাদুঘরে সাজানোর প্রকল্প জুটল। শহুরেদের জন্য গ্রাম মারার নতুন চাকরি তৈরি হল। শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার জীবিত গ্রাম উদ্যমকে লোকসংস্কৃতি, লোকশিল্প, ছাপ মেরে ইওরোপিয়মন্যতায় জাদুঘরীয় করে তোলার উদ্যম নেওয়া হল এবং ভদ্রলোকেদের বার্তা দেওয়া হল যে এগুলি মৃতপ্রায়, জাদুঘরে এদের অবস্থান। এই অবস্থাঙ্কে আরও জোরদার করতে নানান আর্থিক সুযোগ সুবিধে তৈরি করে একদল পেশাদার গবেষক, গ্রাম সমীক্ষক নিয়োগ করা হল, যারা নিদান দেবেন কিভাবে এই বেঁচেথাকা গ্রামীন উদ্যমকে নতুন করে বাঁচানো যায়। বিশ্লেষণের কাজে প্রযুক্ত হল এনথ্রোপলজি, সমাজবিদ্যা, জাদুঘরশাস্ত্র, প্রত্নতত্ত্বের মত ঔপনিবেশিক পাঠ্যক্রম। তিন, পশ্চিমি যন্ত্রপাতির বাজার শহর ছাড়িয়ে গ্রামে তৈরি হল। যেমন শাঁখের করাত। প্রাচীণ যন্ত্রটি প্রায় কাজ হারিয়েছে। এসেছে বিদ্যুতে চলা কাটাই যন্ত্র। বহু ছোট শাঁখারি উচ্ছেদ হচ্ছেন। ড্রিল মেশিনে সূক্ষ্ম কাজ অসম্ভব। নষ্ট হচ্ছে বাজার। বিদেশি বাতিল যন্ত্রে দেশি প্রযুক্তির সর্বনাশ। কারু, বস্ত্র শিল্পে উচ্ছেদ হচ্ছেন লাখো বংশপরম্পরার শিল্পী। বাঙলায় স্বরস্বতী-হরপ্পার স্মৃতির গালার পুতুল, দিনাজপুরের শোলার মুখোশ, বীরভূমে সেরপাই, অথবা বাঁকুড়ায় দশাবতার তাস তৈরির কাজ এসে ঠেকেছে শুধু বৃন্দাবন চন্দ, মধুমঙ্গল মালাকার, শম্ভু, আর শীতল ফৌজদারদের পরিবারে। এই প্রবণতা বাড়ছে। এঁরা নাছোড়বান্দা, কিন্তু কতদিন পেটের সঙ্গে সমঝোতা করে বাঙলার শিল্প বাঁচানোর দায় কাঁধে নিয়ে ঘুরবেন! শিল্প ছেড়ে ১০০ দিনের নিশ্চিন্ত কাজে পেট চালানোর সিদ্ধান্ত নিলে বাঙলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের কয়েকটি আঙ্গিকের সমাপ্তি ঘটবে। তবুও বাঙলা-বাঙালির হেলদোল নেই। তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এগিয়ে এসেছেন নতুন করে ২০১১ সালের পর আশাকরা যায় অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে একটু একটুয় করেই।
ইতিহাসের যে পয়েন্টারগুলি আপনি দিয়েছেন, সেটার বাইরে আর কয়েকটা জিনিস নিয়ে আমার কিছু প্রশ্ন আছে-
১) গাঁইয়া অর্থনীতিতে স্বাধীনতার প্রভাব কীরকম? ভূমি সংস্কারের প্রভাবই বা কীরকম আর উত্তর-উদারনীতি (১৯৯১) এই উৎপাদন প্রক্রিয়া কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে?
২) কৃষি শ্রমিক এবং ভ্রাম্যমান শ্রমিক, এই বর্গগুলি কি ব্রিটিশ কলোনির ফলে তৈরি না আগে থেকেই ছিল?
এ সব আপনার জানা উত্তর তবু আমাদের মত দিচ্ছি-
১) ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের থেকে যে দেশ স্বাধীন হয়েছে সেটা নিয়ে আমি যে সংগঠন করি, তাঁদের বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই কিন্তু যে নীতিগুলি ব্রিটিশ সাম্রাজ্য অনুসরণ করত, সেগুলি খুব একটা পাল্টায় নি বরং তার বিরোধতা আরও কঠিন হয়েছে কারণ এই নীতিগুলো প্রয়োগে দেশ গঠনের বাধ্যবাধকতা জুড়ে দেওয়া হয়েছে। দেশিয় প্রযুক্তিকে মারতে
আমাদের একটা লেখা তুলে দিই
অথচ ঐতিহ্যময় গ্রামীন উতপাদন কেটে ছেঁটে শহুরে বাজারে বিক্রি করতে দিল্লিতে একটি আস্ত মন্ত্রক বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রিয় সরকার। সেই সরকারি প্রকল্পে বাজার বিমুখ বর্জ্য, অশিল্প তৈরি হচ্ছে। গ্রামকে মেনস্ট্রিমের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় যোগ্য করে তুলতে বহু প্রকল্পে প্রচুর অর্থ খরচ হচ্ছে না তা নয় কিন্তু কাজের কাজ কি হচ্ছে বলা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। প্রকল্পে গ্রামীণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ খুব কম। স্বাধীণতার পর ভারতে শুরু হয়েছিল টেকনলজি ট্রান্সফার প্রকল্প। আজও চলছে। ইওরোপ-আমেরিকা-জাপান প্রযুক্তির ঋণ নিয়ে দাঁড়াল রাজনেতা, আমলা, ব্যবসায়ী, স্বেচ্ছাব্রতীদের সামনে। এতে কেন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণের বড় পুঁজির প্রযুক্তির দর্শনের ইওরোপমন্যতার তিনটে পাখি মরল - এক, পশ্চিমি প্রযুক্তি সর্বশক্তিমান, আধুনিক এবং সর্বরোগহর, এই দর্শণ গাঁয়ে পৌঁছে দেওয়া গেল; দুই, যতটুকু দেশিয় প্রযুক্তি টিকে ছিল, তাকে প্রাচীণ, গ্রামীণ, পারম্পরিক, প্রিমিটিভ দেগে, উচ্ছেদ করে সসম্মানে জাদুঘরে সাজানোর প্রকল্প জুটল। শহুরেদের জন্য গ্রাম মারার নতুন চাকরি তৈরি হল। শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার জীবিত গ্রাম উদ্যমকে লোকসংস্কৃতি, লোকশিল্প, ছাপ মেরে ইওরোপিয়মন্যতায় জাদুঘরীয় করে তোলার উদ্যম নেওয়া হল এবং ভদ্রলোকেদের বার্তা দেওয়া হল যে এগুলি মৃতপ্রায়, জাদুঘরে এদের অবস্থান। এই অবস্থাঙ্কে আরও জোরদার করতে নানান আর্থিক সুযোগ সুবিধে তৈরি করে একদল পেশাদার গবেষক, গ্রাম সমীক্ষক নিয়োগ করা হল, যারা নিদান দেবেন কিভাবে এই বেঁচেথাকা গ্রামীন উদ্যমকে নতুন করে বাঁচানো যায়। বিশ্লেষণের কাজে প্রযুক্ত হল এনথ্রোপলজি, সমাজবিদ্যা, জাদুঘরশাস্ত্র, প্রত্নতত্ত্বের মত ঔপনিবেশিক পাঠ্যক্রম। তিন, পশ্চিমি যন্ত্রপাতির বাজার শহর ছাড়িয়ে গ্রামে তৈরি হল। যেমন শাঁখের করাত। প্রাচীণ যন্ত্রটি প্রায় কাজ হারিয়েছে। এসেছে বিদ্যুতে চলা কাটাই যন্ত্র। বহু ছোট শাঁখারি উচ্ছেদ হচ্ছেন। ড্রিল মেশিনে সূক্ষ্ম কাজ অসম্ভব। নষ্ট হচ্ছে বাজার। বিদেশি বাতিল যন্ত্রে দেশি প্রযুক্তির সর্বনাশ। কারু, বস্ত্র শিল্পে উচ্ছেদ হচ্ছেন লাখো বংশপরম্পরার শিল্পী। বাঙলায় স্বরস্বতী-হরপ্পার স্মৃতির গালার পুতুল, দিনাজপুরের শোলার মুখোশ, বীরভূমে সেরপাই, অথবা বাঁকুড়ায় দশাবতার তাস তৈরির কাজ এসে ঠেকেছে শুধু বৃন্দাবন চন্দ, মধুমঙ্গল মালাকার, শম্ভু, আর শীতল ফৌজদারদের পরিবারে। এই প্রবণতা বাড়ছে। এঁরা নাছোড়বান্দা, কিন্তু কতদিন পেটের সঙ্গে সমঝোতা করে বাঙলার শিল্প বাঁচানোর দায় কাঁধে নিয়ে ঘুরবেন! শিল্প ছেড়ে ১০০ দিনের নিশ্চিন্ত কাজে পেট চালানোর সিদ্ধান্ত নিলে বাঙলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের কয়েকটি আঙ্গিকের সমাপ্তি ঘটবে। তবুও বাঙলা-বাঙালির হেলদোল নেই। তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এগিয়ে এসেছেন নতুন করে ২০১১ সালের পর আশাকরা যায় অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে একটু একটুয় করেই।
ভূমি সংস্কার গ্রামীন পরম্পরার উতপাদন ব্যবস্থায় উল্টো প্রভাব ফেলেছে। গ্রামে যত এজমালি জমি আছে সেগুলো ধণাঢ্যরা পেয়েছেন। গবাদি চরাবার যায়গা কমে গিয়েছে - গ্রামে সাধারণ্বে ব্যবহারের জন্য যে জমি তা কমে যাওয়ায় সে জমির উতপাদন এখন সমাজের নয় ব্যক্তি মালকানাধীন হয়েছে - রাস্তার ধারের জমি নয়ানজুলি যেগুলি থেকে নানান মানুষ খাদ্য-পুষ্টি আহরণ করতেন তা ব্যক্তি মালিকানাধীন হয়েছে। গ্রামে গরু পোষার খরচ বাড়ায় অবাধে ট্রাক্টর ঢুকেছে - প্রচুএ গরু পাচার হচ্ছে - আসলে গাঁইয়াদের পয়সা কর্পোরেটরা খাচ্ছে। সার কিনতে হয় - স্বাভবিক স্বার হয় না গরু নেই বলে। দুধের আকাল হয়েছে। দুধ কিনতে হচ্ছে।
আপনি যদি কষ্ট করে কয়েকদিন আগে আমার দেওয়ালে চেঙ্গলপেট্টু সমীক্ষা পড়েন মাদ্রাজের সেখানে দেখা যাচ্ছে হাজারো পেশার মানুষ। কৃষিজীবি ২৫ শতাংশ। জমির উতপাদকতা দেখলে পাগল হয়ে যেতে হয় আজকের জাপানেরও বেশি। আমাদের এই পলিমাটির দেশে উতপাদকতা যেহেতু বেশি সেহেতু হয়ত মানুষ একটু বেশিই কাজ করতেন কৃষি জমিতে - ধরমপালজী, প্রসন্নন পার্থসারথী বা ওম প্রকাশ আগরওয়াল যা বলেছেন একসময় যা তাঁত(সব ধরণের - সূতি, রেশম ইত্যাদি) উতপাদন হত প্রত্যেক বাড়িতে প্রত্যেক মেয়ের ১৬ থেকে ২০ ঘন্টা সুতো কাটতে হত। অন্যান্য শিল্প দ্রব্যের কথা ছেড়েই দিচ্ছি। ১১৬৪র পর বিশিল্পায়ন। ৭৬ এর মন্বন্তর এবং যেটা আলোচনা হয় না নুনের ওপর বিপুল শুল্ক চাপানোর প্রভাব এটা নিয়ে দ্য গ্রেট হেজের লেখক রয় মক্সহ্যাম আলোচনা করেছেন আমরা সেটা অনুবাদ করেছি পরমের নুন সংখ্যায়। গাঁয়ের মানুষ নুন খাওয়া কমিয়ে দেয় আর গৃহস্থ তার গবাদি নুন দেওয়া বন্ধ করে দেয়। তার জন্য গোটা বাঙালি রুগ্ন হয়ে পড়ে। আপনি ১৭৯২/১২০০ সালের সলভিনের আঁকা সাধারণ মানুষের ছবিগুলো দেখবেন তখনও ছিয়াত্তরের প্রভাব জিনে পড়ে নি - কি সুগঠিত চেহারা - তার পরেই আরও আরও মন্বন্তর স্থায়ী রুগ্নতা। ফলে গোটা শিল্পের লোককে কৃষিতে যেতে হয় - এবং জমি অত্যন্ত উর্বর বলে হয়ত এতটা প্রভাব পড়ে না - কিন্তু স্থায়ী ক্ষতি যা হওয়ার য়ে গিয়েছে চিরস্থায়ী আর ৭৬এর ফলে।
ব্যবসা যারা করতেন তারা পরিযায়ী ছিলেন। কিন্তু কতজন কৃষিজীবি বা উৎপাদক পেটের টানে পরিযায়ী হতেন বলা মুশকিল। গ্রাম বা শহর পত্তন হলে হত হয়ত - মুঘল আডমিনিস্ট্রেশনে পাচ্ছি সম্রাটেরা চাষের জমি বাড়াতে কানুনগো বা খামারনবিশদের নির্দেশ দিচ্ছেন, মুঘল আমলে থেকে বেশি প্যাম্পার হতেন চাষীরা কারণ সম্রাটেরা জানতেন রাজস্বই তাঁদের রোজগারের উতস - অন্তত মুঘল সরকারের ঘোরতর সমালোচক আচার্য সরকারের মনোভাব তাই। একটা গ্রাম বসলে তো আর শুধু চাষী আসত না - অন্য পেশার মানুষও আসত। নতুন জমিরতে চাষের জন্য ধার দেওয়া হত - খাজনা নানা কারণে কিছুটা মকুব করা হত।
বলতে পারব না যে জনসংখ্যার তুলনায় খুব বেশি শ্রমিক উৎপাদক পরিযায়ী হতেন।
বলতে পারব না যে জনসংখ্যার তুলনায় খুব বেশি শ্রমিক উৎপাদক পরিযায়ী হতেন।
এর বেশি পড়াশোনা নেই - অবশ্য প্রচুর পরিযায়ী জিপসি গোষ্ঠী ছিলেন তাঁদের কিছু গবাদি পালক কিছু উৎপাদক - লোহা ইসপাত এবং অন্যকিছুও।
সোমনাথ এর উত্তরেলিখলেন
ধন্যবাদ। ভূমিসংস্কার নিয়ে আমার যা আন্দাজ হচ্ছিল, আপনার লেখায় মিল পাচ্ছি।
আসলে একটা ইম্পর্ট্যান্ট জিনিস মনে হয়, আমরা যখন গ্রাম কেন্দ্রিক অর্থনীতি এবং তার টিকে থাকার ক্ষমতা ভাবি, আমরা মূলতঃ গ্রামে স্থিত গৃহস্থ চাষী ও উৎপাদকদের কথা ভাবি। এর বাইরে বড় সংখ্যায় ভূমিহীন কৃষিশ্রমিক অন্য অঞ্চল থেকে আসেন, এঁদের ইতিহাস ভূগোল জানতে ইচ্ছে হয়। এঁরা কিন্তু পরিযায়ী জিপসি নন, অনুর্বর অঞ্চলের মানুষ, সেখানে তাঁদের ঘরবাড়ি রেখে মরসুমে মরসুমে উর্বর অঞ্চলে ধান কাটতে যান। এখানে আন্দাজ করি যে এই সম্প্রদায়টি হয়ত বা মন্বন্তরের ফলেই সৃষ্ট হয়েছে
আমাদের উত্তর
এক্কেবারে- আমরা বলি গণহত্যা। তার সঙ্গে বাংলার বিশিল্পায়ন- তখন ভারতের জিডিপি ছিল বিশ্বে ২৫ আর বাংলার ৬ - বিপুল সঙ্খ্যক মানুষ শিল্পউতপাদনে কাজ করত -তারা বেকার হল - রানী ভবানীর বোয়ালিয়া কুঠির আটক মাল রানীর দেওয়াম দয়ূয়ারাম রায়ের নেতৃত্বে বরকন্দাজেরা ছাড়িয়ে নিয়ে যায় - ফলে জমিদারদের ঠুঁটো জজগন্নাথ করতে মীর কাশেমের সময় জমিদারদের বিশাল বিপুল পরিমান নগদী সৈন্য বরখাস্ত হয় - ফলে এই যে বিপুল পরিমান মানুষ অকর্মণ্য হয়ে পড়লেন তারা কোথায় গেলেন চাষে - ভিক্ষেয় - তারপরেই রেলপথ তৈরি হল - মন্বন্তর মানে গণহত্যার পরিবেশ তৈরি করে পেট চুক্তিতে খেতে দিয়ে শ্রমিক জোগাড় হল - লাখে লাখে শ্রমিকপকে ট্রেঞ্চ কেটে রেলপথের ধারে পুঁতে দেওয়া হয়েছে।
সোমনাথ এর উত্তরেলিখলেন
ধন্যবাদ। ভূমিসংস্কার নিয়ে আমার যা আন্দাজ হচ্ছিল, আপনার লেখায় মিল পাচ্ছি।
আসলে একটা ইম্পর্ট্যান্ট জিনিস মনে হয়, আমরা যখন গ্রাম কেন্দ্রিক অর্থনীতি এবং তার টিকে থাকার ক্ষমতা ভাবি, আমরা মূলতঃ গ্রামে স্থিত গৃহস্থ চাষী ও উৎপাদকদের কথা ভাবি। এর বাইরে বড় সংখ্যায় ভূমিহীন কৃষিশ্রমিক অন্য অঞ্চল থেকে আসেন, এঁদের ইতিহাস ভূগোল জানতে ইচ্ছে হয়। এঁরা কিন্তু পরিযায়ী জিপসি নন, অনুর্বর অঞ্চলের মানুষ, সেখানে তাঁদের ঘরবাড়ি রেখে মরসুমে মরসুমে উর্বর অঞ্চলে ধান কাটতে যান। এখানে আন্দাজ করি যে এই সম্প্রদায়টি হয়ত বা মন্বন্তরের ফলেই সৃষ্ট হয়েছে
আমাদের উত্তর
এক্কেবারে- আমরা বলি গণহত্যা। তার সঙ্গে বাংলার বিশিল্পায়ন- তখন ভারতের জিডিপি ছিল বিশ্বে ২৫ আর বাংলার ৬ - বিপুল সঙ্খ্যক মানুষ শিল্পউতপাদনে কাজ করত -তারা বেকার হল - রানী ভবানীর বোয়ালিয়া কুঠির আটক মাল রানীর দেওয়াম দয়ূয়ারাম রায়ের নেতৃত্বে বরকন্দাজেরা ছাড়িয়ে নিয়ে যায় - ফলে জমিদারদের ঠুঁটো জজগন্নাথ করতে মীর কাশেমের সময় জমিদারদের বিশাল বিপুল পরিমান নগদী সৈন্য বরখাস্ত হয় - ফলে এই যে বিপুল পরিমান মানুষ অকর্মণ্য হয়ে পড়লেন তারা কোথায় গেলেন চাষে - ভিক্ষেয় - তারপরেই রেলপথ তৈরি হল - মন্বন্তর মানে গণহত্যার পরিবেশ তৈরি করে পেট চুক্তিতে খেতে দিয়ে শ্রমিক জোগাড় হল - লাখে লাখে শ্রমিকপকে ট্রেঞ্চ কেটে রেলপথের ধারে পুঁতে দেওয়া হয়েছে।
এক বন্ধু বলছিলেন শ দেড়েক বছর আগেও রাঢ বাংলায় বাগদী হাড়িদের জমির পরচা দেখলে বোঝা যাবে কারা জমির মালিক ছিল। তার বর্ণনা মিলে যায় এডামের রিপোর্টে যেখানে পাঠশালায় মাত্র ১৫শতাংশ ভদ্র বটু আর শিক্ষক বাকি ৮৫% আজকের ভাষায় ছোট লোক। জমির রেকর্ডে এডামের রিপোর্ট তাহলে প্রমানিত হয় - রূপা বাগদী যসে রাজা ছিল তাও প্রমান হয় -
এক বন্ধু জানতে চাইছিলেন বাংলায় কেন ধরমপাল পড়া হয় না। আমরা বললাম শুধু ধরমপাল নয়া ক্লদ আলভারেজ বা চন্দ্রকান্ত রাজু বা অনুপম মিশ্র এত কম পঠিত কেন - এমন কি বাংলার গান্ধীবাদীদের জগতেও - একটা বড় সমস্যা আছে বুঝি।
ধরমলা বা অন্যান্যরা যে তত্ত্ব বা তথ্য দিচ্ছেন তাতে রামমোহন দ্বারকানাথ বিদ্যাসাগর ব্রিটিশদের ধরে দেশ গড়ার যে নবজাগরণীয় এবং পরে মার্ক্সীয় তত্ত্ব, যার জন্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্য লুঠেরা কিন্তু মহান কেননা তারা রেল টেলিগ্রাফ আর শিল্প স্থাপন আর শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করে আমার দেশ তৈরি করতে সাহায্য করেছে - ব্রিটিশ আসার আগে কিস্যু ছিল না ইত্যাদির ধারণাটি অচল হয়ে পড়ে
আর দলিতেরা দলিত ছিল, সেটাও অচল হয়ে পড়ে এডামের শিক্ষা সমীক্ষায় - সেখানে বাগদী, চণ্ডাল, পদ, সাঁওতাল ইত্যাদি মাস্টার আর ছাত্রের কথা আছে আর তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।। বাঙলা বিহারের ১লক্ষ৫৬ হাজার গ্রামে ১ লক্ষ পাঠশালার যে গণ বিদ্যাদেওয়ার ব্যবস্থা ছিল - এবং তাকে ধ্বংস করে বাংলার শিক্ষা কর্তা হোল্ট ম্যাকেঞ্জির সুরে বিদ্যাসাগরের বলা বাংলায় একমাত্র ধনী অভিজাতদের পড়ানো হোক - গণশিক্ষা দেওয়ার মত অর্থ সরকারের নেই(সত্যিই তো নেই সব তো লুঠ করে লন্ডন শরণং গচ্ছামি হচ্ছে - সেখানে পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে) - এই দাবি অসার হয়ে যায় - তাই বাংলার সমস্যা হল কোন শিক্ষা সমীক্ষা বা শিক্ষা নিয়ে আলোচনা এডামের সমীক্ষা ছুঁয়েও দেখে না - তার আরেকটা বড় কারণ হল দেশি ভাষায় শিক্ষা দানের কথা বলেছে - ১৮১৮ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত কোন সমীক্ষা এই দাবি করতে পারে নি।
তাই আমার ধারণা বাংলায় এমনকি গান্ধীবাদীরাও ধরমপালের কথা উচ্চারণ করে না।
এক বন্ধু জানতে চাইছিলেন বাংলায় কেন ধরমপাল পড়া হয় না। আমরা বললাম শুধু ধরমপাল নয়া ক্লদ আলভারেজ বা চন্দ্রকান্ত রাজু বা অনুপম মিশ্র এত কম পঠিত কেন - এমন কি বাংলার গান্ধীবাদীদের জগতেও - একটা বড় সমস্যা আছে বুঝি।
ধরমলা বা অন্যান্যরা যে তত্ত্ব বা তথ্য দিচ্ছেন তাতে রামমোহন দ্বারকানাথ বিদ্যাসাগর ব্রিটিশদের ধরে দেশ গড়ার যে নবজাগরণীয় এবং পরে মার্ক্সীয় তত্ত্ব, যার জন্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্য লুঠেরা কিন্তু মহান কেননা তারা রেল টেলিগ্রাফ আর শিল্প স্থাপন আর শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করে আমার দেশ তৈরি করতে সাহায্য করেছে - ব্রিটিশ আসার আগে কিস্যু ছিল না ইত্যাদির ধারণাটি অচল হয়ে পড়ে
আর দলিতেরা দলিত ছিল, সেটাও অচল হয়ে পড়ে এডামের শিক্ষা সমীক্ষায় - সেখানে বাগদী, চণ্ডাল, পদ, সাঁওতাল ইত্যাদি মাস্টার আর ছাত্রের কথা আছে আর তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।। বাঙলা বিহারের ১লক্ষ৫৬ হাজার গ্রামে ১ লক্ষ পাঠশালার যে গণ বিদ্যাদেওয়ার ব্যবস্থা ছিল - এবং তাকে ধ্বংস করে বাংলার শিক্ষা কর্তা হোল্ট ম্যাকেঞ্জির সুরে বিদ্যাসাগরের বলা বাংলায় একমাত্র ধনী অভিজাতদের পড়ানো হোক - গণশিক্ষা দেওয়ার মত অর্থ সরকারের নেই(সত্যিই তো নেই সব তো লুঠ করে লন্ডন শরণং গচ্ছামি হচ্ছে - সেখানে পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে) - এই দাবি অসার হয়ে যায় - তাই বাংলার সমস্যা হল কোন শিক্ষা সমীক্ষা বা শিক্ষা নিয়ে আলোচনা এডামের সমীক্ষা ছুঁয়েও দেখে না - তার আরেকটা বড় কারণ হল দেশি ভাষায় শিক্ষা দানের কথা বলেছে - ১৮১৮ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত কোন সমীক্ষা এই দাবি করতে পারে নি।
তাই আমার ধারণা বাংলায় এমনকি গান্ধীবাদীরাও ধরমপালের কথা উচ্চারণ করে না।
No comments:
Post a Comment