তত্ত্বটা ঐটাই।
কিন্তু আমার মতে নীহারবাবুদের লেখার তত্ত্ব আর ভঙ্গী অনেকটা গৌতম ভদ্রের ভাষায় ইওরোপিয় জাতি রাষ্ট্রীয় স্টেটিস্ট ধরণের। রাষ্ট্র আর ক্ষমতার দেহে গোটা সমাজের বিলয় ঘটা উচিত এটা ছিল নীহারবাবু, সুনীতিকুমার, নির্মল বসু, নরেন্দ্রকৃষ্ণ সিংহ ইত্যাদি অসাধারণ সব মানুষের ভাবনা। এবং ঔপনিবেশিক ইতিহাসের চলনটা তাই। তাই এই ইতিহাসে কোথাও সিপাহি স্বাধীনতা সংগ্রামের আগের বিপুল পরিমানের কৃষক আর গাঁইয়াদের লড়ায়ের(আমরা বলি স্বাধীনতা সংগ্রামের) কোন উতসাহিত বর্ণনা নেই - মার্ক্সীয়রাও এই পথের পথিক - তাঁদের তত্ত্বে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম সিপাহী যুদ্ধ - প্রথম এই বেড়া ভাঙ্গেন মার্ক্সীয় সুপ্রকাশ রায় - তারপরে অনেকেই।
কিন্তু ক্ষমতা বা রাষ্ট্র কতটা আজ থেকে দুশ আড়াইশ বছর আগের গাঁইয়াদের জীবনে কতটা প্রভাব ফেলত? এই প্রশ্নটা আমরা করতে শুরু করি। এই বাংলা বা পূর্ব ভারত এমনকি গোটা ভারতবর্ষ(রাষ্ট্র নয়, সমাজগুলি নিয়ে গড়া প্রত্যেকের চরিত্র আলাদা আলাদা করে বজায় রাখা সমবায়িক দেশ) যদি বৈশ্য-শূদ্র-মুসলমান এবং পরম্পরার সমাজের তৈরি হয়, এবং সামগ্রিকভাবে যদি জাত প্রথা সব মানুষকেই পেড়ে ফেলে - যা ট্রেভলিয়ান ম্যাক্সমুলারের মত ঔপনিবেশিকদের তত্ত্ব, তাহলে ব্রিটিশ আসার আগে কেন শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান প্রযোজিত বাংলা উদ্বৃত্ত অর্থনীতি ছিল - কেন বাংলার পাঠশালা ব্যবস্থাকে বৈশ্য-শূদ্র-মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার সমাজ পৃষ্ঠপোষকতা করত - মাত্র ১৫% ছিল ব্রাহ্মণ আর কায়স্থ ছাত্র আর শিক্ষক। তাদের পক্ষে স্বাভাবিক ছিল না কি এই উচ্চবর্ণের 'প্রবল' চাপের তলায় মাথা নিচু করে অনিশ্চয় হয়ে বসে থাকা!
কিন্তু শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান এবং পরম্পরার সমাজ এমন একটা উৎপাদন ব্যবস্থা তৈরি করলেন, যা ক্ষমতা কেন্দ্রিক নয়, রাষ্ট্র কেন্দ্রিক বা উচ্চবর্ণ কেন্দ্রিক নয় - মূলত ছোটলোক সমাজ ভিত্তিক।
যতদূর সম্ভব বাংলার ইতিহাসে প্রথম হরপ্রসাদ শাস্ত্রী হিন্দুত্বের মোকাবিলায় বৌদ্ধ তত্ত্বের আমদানি করলেন। বিনয় ঘোষের ভাষায় তার স্পষ্টতই বৌদ্ধ বাই ছিল - যেমন নিজের ছোটলোক বাই ছিল বলে বিনয়বাবু নিজে জানিয়েছেন।
কিন্তু আমার মতে নীহারবাবুদের লেখার তত্ত্ব আর ভঙ্গী অনেকটা গৌতম ভদ্রের ভাষায় ইওরোপিয় জাতি রাষ্ট্রীয় স্টেটিস্ট ধরণের। রাষ্ট্র আর ক্ষমতার দেহে গোটা সমাজের বিলয় ঘটা উচিত এটা ছিল নীহারবাবু, সুনীতিকুমার, নির্মল বসু, নরেন্দ্রকৃষ্ণ সিংহ ইত্যাদি অসাধারণ সব মানুষের ভাবনা। এবং ঔপনিবেশিক ইতিহাসের চলনটা তাই। তাই এই ইতিহাসে কোথাও সিপাহি স্বাধীনতা সংগ্রামের আগের বিপুল পরিমানের কৃষক আর গাঁইয়াদের লড়ায়ের(আমরা বলি স্বাধীনতা সংগ্রামের) কোন উতসাহিত বর্ণনা নেই - মার্ক্সীয়রাও এই পথের পথিক - তাঁদের তত্ত্বে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম সিপাহী যুদ্ধ - প্রথম এই বেড়া ভাঙ্গেন মার্ক্সীয় সুপ্রকাশ রায় - তারপরে অনেকেই।
কিন্তু ক্ষমতা বা রাষ্ট্র কতটা আজ থেকে দুশ আড়াইশ বছর আগের গাঁইয়াদের জীবনে কতটা প্রভাব ফেলত? এই প্রশ্নটা আমরা করতে শুরু করি। এই বাংলা বা পূর্ব ভারত এমনকি গোটা ভারতবর্ষ(রাষ্ট্র নয়, সমাজগুলি নিয়ে গড়া প্রত্যেকের চরিত্র আলাদা আলাদা করে বজায় রাখা সমবায়িক দেশ) যদি বৈশ্য-শূদ্র-মুসলমান এবং পরম্পরার সমাজের তৈরি হয়, এবং সামগ্রিকভাবে যদি জাত প্রথা সব মানুষকেই পেড়ে ফেলে - যা ট্রেভলিয়ান ম্যাক্সমুলারের মত ঔপনিবেশিকদের তত্ত্ব, তাহলে ব্রিটিশ আসার আগে কেন শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান প্রযোজিত বাংলা উদ্বৃত্ত অর্থনীতি ছিল - কেন বাংলার পাঠশালা ব্যবস্থাকে বৈশ্য-শূদ্র-মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার সমাজ পৃষ্ঠপোষকতা করত - মাত্র ১৫% ছিল ব্রাহ্মণ আর কায়স্থ ছাত্র আর শিক্ষক। তাদের পক্ষে স্বাভাবিক ছিল না কি এই উচ্চবর্ণের 'প্রবল' চাপের তলায় মাথা নিচু করে অনিশ্চয় হয়ে বসে থাকা!
কিন্তু শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান এবং পরম্পরার সমাজ এমন একটা উৎপাদন ব্যবস্থা তৈরি করলেন, যা ক্ষমতা কেন্দ্রিক নয়, রাষ্ট্র কেন্দ্রিক বা উচ্চবর্ণ কেন্দ্রিক নয় - মূলত ছোটলোক সমাজ ভিত্তিক।
যতদূর সম্ভব বাংলার ইতিহাসে প্রথম হরপ্রসাদ শাস্ত্রী হিন্দুত্বের মোকাবিলায় বৌদ্ধ তত্ত্বের আমদানি করলেন। বিনয় ঘোষের ভাষায় তার স্পষ্টতই বৌদ্ধ বাই ছিল - যেমন নিজের ছোটলোক বাই ছিল বলে বিনয়বাবু নিজে জানিয়েছেন।
ফলে হরপ্রসাদ পড়তে গিয়ে বাংলার ক্ষমতাকে নতুন নতুন দেখার দৃষ্টি পাই প্রথম -
তা হয়ত পালটে গেছে রাস্তায় নেমে - কিন্তু ভাবনার ক্ষমতা আর দৃষ্টি তৈরি করেদিচ্ছেন
তিনি।
তাঁর লেখাতেই বুঝি মধ্যবিত্তর কেন এত বৌদ্ধ বাই। আসলে পুরো ব্যাপারটা ক্ষমতা আর রাষ্ট্র পোষিত অহিংস মতবাদের ঔপনিবেশিকতা - গৌতমে আর তার ব্যবসায়ী বন্ধুদের উত্তরাধিকারীদের ঔপনিবেশিকতা - ইংরেজি শিক্ষিত বাঙ্গালির জীবন চরম রাষ্ট্রবাদী কোম্পানি বাংলায় স্বাভাবিক ছিল - তার আশেপাশে সব কিছুই রাষ্ট্র প্রযোজিত - চাকরি, দালালি, ব্যবসা, ভাবনা, দর্শন, জীবনধারণ সবই রাষ্ট্রের মদতের ফলে উভুত - ফলে বামরাষ্ট্রবাদে ঔপনিবেশিকদের উত্তরপুরুষদের থাকতে কোন অসুবিধে হয় নি। কোম্পানির উপনিবেশে বৌদ্ধ রাষ্ট্রীয় সময়ে মানিয়ে নেওয়া ভদ্র শিক্ষিত বাঙ্গালি উপনিবেশ পরিবেশে মোটামুটি অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে - উপনিবেশ শব্দটা তার কাছে বর্জ্যনীয় নয় - বিজয় সিংহ যে সিংহলে উপনিবেশ স্থাপন করছেন এবং সেটা ভদ্র বাঙ্গালিরা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন।
বেনের মেয়ে উপন্যাস নয় বাংলা ইতিহাসের একটা নির্দিষ্ট সময়ের কাব্যিক ভাষ্য। সেখানে তিনি ডোম, বাগদীদের ক্ষমতায় থাকার কথা জোর গলায় বললেন। বললেন কিভাবে নেড়েদের উদ্ভব হল, কিভাবে বৈশ্যরা পতিত হয়ে সনাতনী ব্যবস্থায় ফিরে এলেন, বললেন মষ্করী অর্থাৎ পটুয়াদের গৌরবময় অতীতের কথা। কিভাবে ধর্ম পুজায় ডোম পুরোহিত থাকেন সেটা জানলাম - জানলাম ব্রাহ্মণ আর পুরোহিত দুটু আলাদা কম্ম - যা ঔপনিবেশিক ভদ্র বাঙ্গালিরা ভুলিয়ে দিয়েছিলেন ব্রিটিশদের প্রভাবে।
হরপ্রসাদ রবীবাবুদের গোষ্ঠীর বাইরে বাংলা বাঙ্গালির গৌরব ময় অতীতের প্রথম তাত্ত্বিক, এবং শান্তিনিকেতনের যত লেখক পুরোনো বাংলা ভারত নিয়ে লিখেছেন তারা সযত্নে তাঁকে এড়িয়ে গিয়েছেন - কেননা তিনি ১৯০০র প্রথম দশকে রবিবাবুকে চুটকি লেখক বলেছিলেন - তাতে সেই সময় মধ্যাহ্ন গগণে থাকা রবিবাবুর ভক্তরা হরপ্রসাদকে ত্যাজ্য করেন।
ফলে বাংলা সাহিত্য জগতে তাই হরপ্রসাদ একটু আলাদা। অবশ্যই স্টেটিস্ট - কিন্তু একটু অন্য রকম। এবং রবীন্দ্রনাথকে বিরোধিতা করেও বাংলায় কল্কে পেয়েছেন হরপ্রসাদ ছাড়া একমাত্র দ্বারকানাথ। এখানেই পূর্ণচ্ছেদ।
তাঁর লেখাতেই বুঝি মধ্যবিত্তর কেন এত বৌদ্ধ বাই। আসলে পুরো ব্যাপারটা ক্ষমতা আর রাষ্ট্র পোষিত অহিংস মতবাদের ঔপনিবেশিকতা - গৌতমে আর তার ব্যবসায়ী বন্ধুদের উত্তরাধিকারীদের ঔপনিবেশিকতা - ইংরেজি শিক্ষিত বাঙ্গালির জীবন চরম রাষ্ট্রবাদী কোম্পানি বাংলায় স্বাভাবিক ছিল - তার আশেপাশে সব কিছুই রাষ্ট্র প্রযোজিত - চাকরি, দালালি, ব্যবসা, ভাবনা, দর্শন, জীবনধারণ সবই রাষ্ট্রের মদতের ফলে উভুত - ফলে বামরাষ্ট্রবাদে ঔপনিবেশিকদের উত্তরপুরুষদের থাকতে কোন অসুবিধে হয় নি। কোম্পানির উপনিবেশে বৌদ্ধ রাষ্ট্রীয় সময়ে মানিয়ে নেওয়া ভদ্র শিক্ষিত বাঙ্গালি উপনিবেশ পরিবেশে মোটামুটি অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে - উপনিবেশ শব্দটা তার কাছে বর্জ্যনীয় নয় - বিজয় সিংহ যে সিংহলে উপনিবেশ স্থাপন করছেন এবং সেটা ভদ্র বাঙ্গালিরা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন।
বেনের মেয়ে উপন্যাস নয় বাংলা ইতিহাসের একটা নির্দিষ্ট সময়ের কাব্যিক ভাষ্য। সেখানে তিনি ডোম, বাগদীদের ক্ষমতায় থাকার কথা জোর গলায় বললেন। বললেন কিভাবে নেড়েদের উদ্ভব হল, কিভাবে বৈশ্যরা পতিত হয়ে সনাতনী ব্যবস্থায় ফিরে এলেন, বললেন মষ্করী অর্থাৎ পটুয়াদের গৌরবময় অতীতের কথা। কিভাবে ধর্ম পুজায় ডোম পুরোহিত থাকেন সেটা জানলাম - জানলাম ব্রাহ্মণ আর পুরোহিত দুটু আলাদা কম্ম - যা ঔপনিবেশিক ভদ্র বাঙ্গালিরা ভুলিয়ে দিয়েছিলেন ব্রিটিশদের প্রভাবে।
হরপ্রসাদ রবীবাবুদের গোষ্ঠীর বাইরে বাংলা বাঙ্গালির গৌরব ময় অতীতের প্রথম তাত্ত্বিক, এবং শান্তিনিকেতনের যত লেখক পুরোনো বাংলা ভারত নিয়ে লিখেছেন তারা সযত্নে তাঁকে এড়িয়ে গিয়েছেন - কেননা তিনি ১৯০০র প্রথম দশকে রবিবাবুকে চুটকি লেখক বলেছিলেন - তাতে সেই সময় মধ্যাহ্ন গগণে থাকা রবিবাবুর ভক্তরা হরপ্রসাদকে ত্যাজ্য করেন।
ফলে বাংলা সাহিত্য জগতে তাই হরপ্রসাদ একটু আলাদা। অবশ্যই স্টেটিস্ট - কিন্তু একটু অন্য রকম। এবং রবীন্দ্রনাথকে বিরোধিতা করেও বাংলায় কল্কে পেয়েছেন হরপ্রসাদ ছাড়া একমাত্র দ্বারকানাথ। এখানেই পূর্ণচ্ছেদ।
No comments:
Post a Comment