আবারও গৌতম ভদ্র'র ইমান ও নিশান থেকে
"... আবার পঞ্চম জর্জের রাজ্যাভিষেকের সময় মাদ্রাজের বামুন পণ্ডিতরা মজার রাজপ্রশস্তি লেখেন। সেখানে টেমস নদী হয় তমসা, ভিক্টোরিয়ার নাম হয় বিজিতার্ষা, গর্গ হন জয়ারজী ও রাণী মেরী মের্ষা। এই রূপান্তরের পাশেই উত্তর ভারতের সাধারণ লোকের মুখের ভাষায় 'প্রমিসারি নোটের' নামান্তর হয় 'পরমেশ্বরী নোট'। এইরকম লাগসই মোক্ষম নামান্তর বুঝিয়ে দেয় বোধের চরিত্রে নানা স্তরে কীভাবে ক্রিয়াশীল ছিল। এখানে মার্ক্সের একটা উক্তি আমাদের ভাবায়। প্রথম ভাষা শিক্ষার্থী সব সময় নতুন শেখার ভাষার অর্থকে তার নিজের মাতৃভাষায় অনুবাদ করে বোঝার চেষ্টা করে।
"কোম্পানির শাসনের প্রথম পর্বে ভারতীয় সমাজের নানা মানুষ কোম্পানির ও সাঙ্গপাঙ্গদের আনা ক্ষমতার নতুন অভিজ্ঞতাকে তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও ঐতিহ্যের মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করছিল, 'যুক্তিবাদ', 'উপযোগিতাবাদ', 'প্রগতি' আর 'আইনি' অধিকারকে বার বার ধরার চেষ্টা হচ্ছিল 'ইমান', 'দীন', আর 'ধর্মের' মধ্যে, কর্তব্য আর প্রথার মধ্যে, 'ইজ্জত' আর 'হুকুমতের' ধারনায়। ফলে বার বার নানা অসঙ্গতি দেখা যায়, সৃষ্টি হয় নানা ফাঁক ও জটিলতা। সেখানে সমর্পণ ও আনুগত্যের ছবিও বহুবার পাওয়া যায়। সেই ক্ষেত্রের ছকে বাজারি লাভ-লোকসান একমাত্র বিবেচ্য নয়; বরং শরণের ধারনা, পাপ-পুণ্য, ধর্মাধর্মের চৈতন্য সেখানে ক্রিয়াশীল থাকে।
"এই কথা বার বার বলা দরকার যে সরকার, সাহুকার আর জমিদারের গাঁঠবন্দীর অভিজ্ঞতাকে নিজস্বতাকে ভাষায় বুঝতে গিয়ে কৃষকরা কোন আদি মৌলে অনড়ভাবে আবদ্ধ থাকে নি, তাদের শেখার যোগ্যতা ছিল। নানা চাপের মুখে তাদের উদ্ভাবনেরও সম্ভাবনার অন্ত ছিল না। ফলে ঐতিহ্যে অনুকারিতার সঙ্গে অভিযোজন ও প্রতিসরণের সম্ভাবনাও প্রবল ছিল। যে কোন ধার্মিক ঐতিহ্যেই এই রদবদল আমরা দেখতে পাই।"
No comments:
Post a Comment