যারা রঘুরামের বিদায়ে বিমর্ষ হচ্ছেন, তাদের জন্য বলা যাক, এই ব্যক্তিটি ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো, বিশ্বব্যাঙ্ক, ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ড, সুইস পার্লামেন্টারি কমিশন, আমেরিকান ফিনান্স এসোসিয়েশন, আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার ইত্যাদি সংগঠনে তার কাজের স্বাক্ষর রেখে এসেছেন। ভারতের মত তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক হিসেবে বুঝতে পারি, ভারতের এবং তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের অর্থনীতির দিশা দেখাতে এই সঙ্গঠনগুলির প্রভাব কি ছিল। কিন্তু যেটা বলা হয় না, তা হল, ভারতের ব্যাঙ্কগুলির নিয়ন্তা হওয়ার আগে তার ৩০ দলের(গ্রুপ অব থার্টি) সদস্য হওয়ার তথ্য।
এবারে একটু দেখে নিই এই ৩০ দলটি কি! এটি রকফেলারদের আর্থিক এবং তাত্ত্বিক সহায়তায় চলা সংগঠন যেখানে রয়েছেন বিশ্বের তাবড় তাবড় কেন্দ্রিয় ব্যাঙ্কার এবং অর্থনীতিবিদ। এই সমিতিটির প্রধান আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান পল ভোলকার, রয়েছে ব্যাঙ্ক অব ফ্রান্স, ব্যাঙ্ক অব টোকিয়ো, ব্যাঙ্ক অব ইটালি, ব্যাঙ্ক অব ইস্রায়েল, জার্মান বুন্ডেসব্যাঙ্কের প্রাক্তন প্রধান, আর রয়েছে ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রধানও। এছাড়া এই সমিতিতে রয়েছে সিটিকর্প, জে পি মর্গান, মর্গান স্ট্যানলি, মেলিল লিঞ্চ, ডয়েশ ব্যাঙ্ক, দ্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্যাঙ্ক অব জাপান এবং দ্য রথসচাইল্ড ইন্টারন্যাশনাল আসিওরেন্স হোল্ডিংসের সদস্যরা। ছোট করে বললে, ৩০ দলের সমতিটি হল এমন এক সঙ্গঠন, যারা নির্দিষ্ট প্রকার অর্থনৈতিক দাওয়াই দিয়ে বিশ্বকে তাদের ছকে দেওয়া ছকে নিয়ে যেতে চান যাতে দেশগুলির অর্থনৈতিক পরিচালন ব্যবস্থা বকলমে তাদের হাতে ন্যস্ত হয়।
১৯৮১ থেকেই, আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডার বুঝতে পারছিল, তাদের দেওয়া শর্তানুসারে উন্নতশীল দেশগুলি আন্তর্জাতিক সঙ্গঠনগুলির ধার মেটাতে পারবে না। ফলে এই ৩০ দলের সদস্যরা মিলে এই ঋণ সঙ্কটকে নিজেদের অর্থনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে দেখে নতুন এক রণনীতি নেওয়া শুরু করল, যার মূল উদেশ্য হল দেশগুলির সার্বভৌমত্ব যতটা পারাযায় সঙ্কুচিত করা, এবং সব থেকে বড় কথা, রাষ্ট্রবিহীন-পুঁজির চলাচলে যেন কোন জাতি রাষ্ট্রই বাধা হয়ে না দাঁড়াতে পারে। এই তত্ত্বের এবং রণনীতির তৈরির দায় পড়ল আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডারের এবং কেন্দ্রিয় ব্যাঙ্কগুলির ওপর, এবং এই কাজগুলি সংযোগ রক্ষার দায় পড়ল সুইজারল্যান্ডের বাসিলের ব্যাঙ্ক অব ইন্টারন্যাশনাল সেটলমেন্টের ওপর।
রঘুরামের মত ৩০ দলের সদস্যরাই দেশে দেশে নয়া উদারীকরণের অর্থনীতির দাওয়াই দিয়ে চলেছেন, তাদের কাজ হল দেশে দেশে অর্থনৈতিক বুদবুদ তৈরি করা যাতে দেশগুলির অর্থনৈতিক ভিত্তি ধ্বংস হয়ে যায়। এঁদের অন্যতম আর্থিক সুহৃদ হল জর্জ সোরোসের সংস্থা ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন আর গোল্ডম্যান স্যাক্সের অন্যতম অংশিদার এবং রেগন প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মচারী জন হোয়াইটহেডের হোয়াইটহেড ফাউন্ডেশন।
আর পল ভোলকার হলেন সেই ব্যক্তি যিনি আমেরিকার মুদ্রাকে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড থেকে বার করে আনেন নিক্সনের রাজত্বে। এখন তার নেতৃত্ব রঘুরাম রাজন কেমন তাত্ত্বিক হয়ে উঠেছেন তা দেখাযাক। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে রঘুরাম উন্নয়ন বিষয়ে তার ধারণা ব্যক্ত করে বলেন, ‘In terms of where will growth come from, it doesn’t need to come from fancy stuff like extraordinary innovation of one kind or another. Just getting people from agriculture into services and industry itself is growth.
I think India’s medium-term future is moving people out of agriculture into industry and services. Services, you know, some extent we have a sort of a sense of what it takes. And India’s service sector is disproportionately large for a country of its income. Where we have had less success is industry, and the question is can we sort of find a way to free the path for small and medium industry, and not just keep them forever as small and medium industries but allow them to grow into large industries’।
দ্য ইকনমিক টাইমসের এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘There is a tremendous amount of value-add that can be created in services. In India, especially, financial services as also IT and others are where most value-add is created. Unfortunately, even though services account for 60% of the GDP, they don’t account for nearly as much for jobs. They account for just 15% of the jobs. What we need to focus on is perhaps thinking broadly about how we create services that will generate many more jobs’।
আর হিন্দু বিজনেস লাইনকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেন, ‘This is not surprising. As countries grow, agriculture declines. What is special about India is that the exit of people from agriculture has not kept pace (ভুল দেখছেন না বিন্দুমাত্র, আবার পড়ুন, এবং সিপিএমএর ন্যানো তত্ত্ব ভাবুন চাষার ছেলে কি চাষা হবে). Increasingly, people in agriculture are impoverished relative to those having jobs in industry or service”. “We managed to move the States together, but perhaps we need to do more on the sectoral side to move people out of agriculture into other areas’।
বলা দরকার জয়পুর সাহিত্য উতসবে রঘুরামের মত আরও একজন অর্থনৈতিক জাদুগর নামে পরিচিত, মর্গান স্ট্যানলির ইমার্জিং মার্কেটস এন্ড গ্লোবাল ম্যাক্রোর প্রধান রিচার্ড শর্মার বই ব্রেকআউট নেশন্সঃ ইন পার্সুট অব নেক্সট ইকনমিক মিরাকলসএ (http://www.amazon.com/Breakout-Nations-Pursuit…/…/0393345408) উন্মোচন হয়, যেখানে রিচার্ড তার অন্যতম বিখ্যাত বন্ধু রঘুরামের মতই বিকাশের পথ দেখিয়েছেন।
আশ্চর্যের নয় এঁরাই ফোর্বস তালিকায় ভারতীয় অর্থনৈতিক তাত্ত্বিকদের মধ্যে ওপরের সারিতে, যাদের দেশে দেশে বলানো হয়, এবং তাদের কথা মানুষ, নীতিনির্ধারকেরা মন দিয়ে দৈববাণীর মত করে শোনেন আর তাদের দেশে কাজে লাগাবার চেষ্টা করেন। আর বলা দরকার ফোর্বস পরিবার ভারতে-চীন নৈতিক, বেআইনি আফিম ব্যবসার অন্যতম কারিগর ছিলেন, এবং আফিম যুদ্ধে চিন রথসচাইল্ডদের সম্পত্তি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে হংকং হারান। হংকং ক্রমশ হয়ে ওঠে আফিম ব্যবসার অন্যতম প্রধান ঘাঁটি, আফিম ব্যবসা বাড়াতে শুরু হয় হংকং এন্ড সাংহাই ব্যাঙ্ক কর্পোরেশন। ফোর্বস এই ব্যাঙ্কের অন্যতম নির্দেশক ছিলেন।
(গত বছরের লেখা)
No comments:
Post a Comment