বাঙালির আত্মনুসন্ধানের ইতিহাস আমরা লিখি না - যারা লিখেছেন তাঁরা বাঙালির নমস্য সব নাম - আমরা মার্ক্সের ভাষায় আনপড়, গাঁইয়া - আমাদের তুচ্ছ কাজ ছোটলোকেদের ব্যবসা আর প্রযুক্তির ইতিহাস খুঁজে বার করা - ছোটলোক বাঙালির সম্পদ লুঠ নিয়ে কিছু খোঁজ খবর করা আর তা সবার সামনে তুলে ধরা।
যেহেতু আমি/আমরা ভদ্রশ্রেণীর মানুষ, জাগতিক ধর্ম বা আচারিক ধর্ম বা ধর্ম পরিবর্তন বিষয়ে আমার/আমাদের আগ্রহ তুলনামূলক কম - যতটা কর্পোরেট বা রাষ্ট্র সম্বন্ধে আমাদের আগ্রহ তার অনেক কম আগ্রহ ধর্ম সম্বন্ধে আলোচনায় - তার ওপর ছোটবেলাটা বামপন্থী আবহাওয়ায় কেটেছে - আমার পৈতেটাও হয় নি দিদিমার করুণ আবেদন সত্ত্বও, আমি কোন দিন পাড়ার পুজো কমিটিতেও ছিলাম না - খুব বয়স পর্যন্ত ধর্মের কোন আচারাচরণও জানতাম না। আজও জানি না খুব একটা।
ছোটবেলা থেকেই আমি মনে করি ভারতে ধর্ম মানে রেলজিয়ন বোঝানো হয় না - এটা পশ্চিমি ধারণা। আম গাঁইয়া ভারতীয়দের জন্য নৈতিকতা বা ঈমান খুব জরুরি শব্দ বা আচার - ধর্ম শব্দটা চরিত্র বোঝানোর জন্য ব্যবহার হয় - অন্তত ব্রিটিশ আসার আগে পর্যন্ত হত - যেমন শিক্ষকের ধর্ম পড়ানো বা জলের ধর্ম নিচের দিকে যাওয়া ইত্যাদি - ছোটলোকেরা এইভাবেই ধর্মটা দেখে বলেই আজও খুব বেশি দাঙ্গা হয় না এই বাংলায়, ভারতের কথা জানি না - সেই জন্যই ফকির সন্ন্যাসীরা যৌথভাবে পলাশীর পাঁচ বছর পর অস্ত্র হাতে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে নেমে পড়ে।
মানুষ কেন মরতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে যায়? ঠিক সেই জন্য মানুষ তার জাগতিক ধর্ম পরিবর্তন করে - যখন সে আতান্তরের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যায় - তার আর কোথাও যাবার থাকে না - মানসিকভাবে সে শেষ হয়ে যায় - সে মনে করে যে চরিত্রটা সে এতদিন বহন করে এসেছিল সেটা আর সে বইতে পারছে না।
আমরা উন্নাসিক নই - মানুষকে ধান্ধাবাজ বলার অধিকার আমাদের নেই - অনেক কষ্ট করে একজন মানুষ তার চেতনা বিকাশ করে - তাকে অজ্ঞান বলে দেওয়ার অধিকার আমাদের কারোর নেই - আমরা যে যতই হনু হই না কেন - আমরা যারা ব্যক্তি মানুষের ধর্ম পরিবর্তনের সমালোচনা করছি তারা কেউ কি একবারও তাঁদের কারোর পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করেছি? মমতা ব্যনার্জী যখন ধর্মতলায় অনশন করছিলেন, যখন তিনি বারবার গ্রামে গ্রামে দলের আক্রান্ত কর্মীদের জন্য ছুটে যেতেন তখন কেউ কি আমরা তাঁর পাশে থেকেছি? ঠিক তেমনি মানুষ কত খাদের পাশে দাঁড়ালে তার চেনা পরিজন, সমাজ চেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় - সে রাতের অন্ধকারে একা একা সিদ্ধান্ত নেয়, কারণ সে জানে তারপাশে দাঁড়াবার মত কেউ নেই- লুঠেরা রত্নাকরের পাশে বউ বাবাই দাঁড়ায় নি।
আমাদের মনে হয় এই বিতর্ক অনভিপ্রেত। আপনি প্রাজ্ঞ মানুষ। বিশেষ করে এই খোলা বাজারে এত ভারি বিতর্ক কোথায় যে কিসের জন্ম দেয় কে জানে? এই চর্চাটা নিজের মনের গভীর আত্মানুসন্ধানের বিষয় - অন্ধকারে ধ্যান করে উত্তর খোঁজার বিষয়।
শেষে অনুরোধ করব রিচার্ড ঈটনের রাইজ অব ইসলাম এন্ড দ্য বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার বইটা সময় করে পড়বেন, আপনি যে বিষয়গুলোর খোঁজ চালাচ্ছেন তার কিছুটার সূত্র হয়ত এখানেও পেতে পারেন -
শুভেচ্ছা রইল। ফাঁকা কলসি বেশিই আওওয়াজ করলাম।
ভাল থাকবেন।
https://archive.org/details/EatonRichardTheRiseOfIslamAndTheBengalFrontier
No comments:
Post a Comment