Tuesday, June 6, 2017

আজকের ভারতের গো-অনুগামীদের তুলনায় তখনকার ভারতীয়রা

১। যাদব কুলে গোপীরা যমুনায় ন্যাংটো হয়ে চান করতেন। আজ মিনিস্কার্ট আর হট প্যান্ট বুড়োদের চক্ষুশূল আর ধর্ষনকারীর ছুতো। কালিদাস বলছেন গৌড়ের আখের রস জ্বাল দিয়ে গুড় করা কন্যারা বিপজ্জনকভাবে নাভির তলায় কাপড় পরতেন।

২। দুরের ভাই বোনেদের আকছার বিয়ে হত – বাসুদেবের দূর সম্পর্কের বোন কুন্তী। কৃষ্ণ অর্জুনকে দিয়ে সুভদ্রাকে হরণ করিয়ে বিয়ে দিয়েছিলেন। দক্ষিণ ভারতের বহু অঞ্চলে এই ধরণের বিবাহ রয়েছে। এখন মুসলমান পরিবারের কাছের সম্পর্কের ভাইবোনেদের বিয়ে হলে টিটকিরি দিই।

৩। বিবাহপূর্ব যৌনতা স্বীকৃত ছিল – পরাশরের সঙ্গে সত্যবতীর বিবাহপূর্ব সঙ্গমে ব্যাসদেবের জন্ম। রাজা শান্তনুর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় তখন তিনি অক্ষতযোনি ছিলেন না। কুন্তীরও একই ঘটনা।

৪। কোন বহু বিবাহই আজ আর নেই – দ্রৌপদীর পাঁচ স্বামী ছিল আর পাণ্ডুর দুই বৌ ছিল।

৫। ঘোমটা ব্যবস্থা ছিলই না। মুসলমানেরা এদেশে আসার পরে প্রবর্তিত হয়।

৬। ১৭৫৭র আগে মেয়েরা শুধু একটা শাড়ি পরেই ঘুরত – বহু সমাজে শুধু নিচের পরিধেয়ই ছিল – ইংরেজ আমলের শুরুতেও বাংলার গ্রামে নিম্নাঙ্গের পরিধেয়টা পরতেন নারীরা – আর কিছু সমাজে ছিল দুকুল – নিচের লুঙ্গির মত কোমরবন্ধের সঙ্গে ওপরে শুধুই বুকবন্ধ – যা আজও কিছুটা দেখা যায় উত্তরবঙ্গের রাজবংশী, রাভা, মেচ সমাজের পরিধেয়তে। ব্রিটিশ রাজত্বে ভিক্টোরিয় নৈতিকতায় ব্লাউজ শাড়ি শায়া পরানো শুরু করে ইংরেজি শিক্ষিত বাঙ্গালিবাবুরা – ঠাকুরবাড়িতে যে প্রথা চালু হল।

৭। জাত বহির্ভূত বিয়ে – ক্ষত্রিয় শান্তনু জেলের মেয়ে শুদ্র সত্যবতীকে বিবাহ করেন। ওবিসি যাদব সুরসেন কন্যা কুন্তীকে বিবাহ করেন ক্ষত্রিয় পাণ্ডু। ব্রাহ্মণ মহিলা শকুন্তলা ক্ষত্রিয় শান্তনুকে বিবাহ করেন।

৮। জন্মপত্র দেখা? ছোহ, বিয়ে হত স্বয়ম্বর সভায়; মেয়েরা বেছে নিত তাঁদের বর - কালিদাসের গল্পে পাই দক্ষিণভারতের(যতদূর সম্ভব কর্ণাট) কোন এক রাজত্বের কন্যা পুরুষদের বুদ্ধি, জ্ঞান আর বিদ্যা যাচাই করে বিয়ে করতে চেয়েছিল – কালিদাস তাকে ভুলিয়ে বিয়ে করেছিলেন প্রথম জীবনে।

৯। নিয়োগ প্রথায় সন্তান জন্ম হত। ব্যাস, অম্বিকার সঙ্গে যৌন সঙ্গসর্গ করে ধৃতরাষ্ট্র, অম্বালিকার সঙ্গে মিলিত হয়ে পাণ্ডু এবং দাসীর সঙ্গে উপগত হয়ে বিদুরকে জন্ম দেন।

১০। যৌনতা একটা স্বাভাবিক বিষয় ছিল – ছোটবেলাতেই শেখানো হত। কামসূত্র(কাম মানে শুধু যৌনতা নয় – জীবনে যা কামনা কারা যায় তাঁর সব কিছু) ছিল আবশ্য পাঠ্য। খাজুরাহো বা অন্যান্য মন্দিরের ভাষ্কর্য দেখলেই বোঝা যায়।

১১। অন্তত বিখ্যাত কারোর উপাধি ছিল না – রাজা রামকে কেউ অন্তত রাম সিং, কৃষ্ণকে কৃষ্ণ যাদব বা চাণক্যকে চাণক্য মিশ্র/উপাধ্যায় বা আর্যভটকে আর্যভট বাল্মিকী ডাকত না। আর বিয়ের পরে মেয়েদের উপাধি বদলের কথা ভাবাই যেত না।

১২। নিরামিষ খাওয়া – ভারতীয়রা কবে নিরামিশ খেতে শিখল! অতিথির নামই ছিল গোঘ্ন – যাঁকে গরু মেরে খাওয়াতে হয়। সত্যবতী জঙ্গলে থাকা জেলে কন্যা ছিলেন। মাছ, হরিণ বা মোষ বা গরু খাওয়া স্বাভাবিক আহার্য ছিল। রামকে নিতে দশরথের রাজসভায় এসেছিলেন বিশ্বামিত্র – তাঁকে গোটা একটা ঝলসানো(রোস্টেড) বাছুর খাওয়ানো হয়েছিল – সূত্র রাজশেখর বসুর রামায়ণ। সেই সূত্র বলছে রাম বিবাহের পর সীতার সঙ্গে একসঙ্গে বসে মদ্যপান করতেন।



আরও অনেক কিছু বলা যায়। আগে এইটুকু সামলান। তারপরে দেখা যাবে।

No comments: