অঞ্জন সেন
প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল বুকপকেট নামক একটি অন্তর্জাল পত্রিকায়। লিঙ্কটি হল http://bookpocket.net/archives/lekha/kalighat-pot
যে সব বিদেশি
উনিশ শতকে এই পট সংগ্রহ করেছেন তাঁরা অনেকেই ছিলেন ধর্মযাজক। কেউ সংগ্রহ করেছিলেন
এ দেশের দেব-দেবীর নমুনা হিসেবে আবার কেউ বা শিল্প হিসেবে। দামও ছিল অল্প। একেবারে
সাধারণ দরিদ্র তীর্থযাত্রী এগুলি অনায়াসেই সংগ্রহ করতে পারতেন দু-চার পয়সা দিয়ে।
পরে অবশ্য দাম বেড়ে এক আনা দু-আনা হয়। সে সময়ে কীরকম দাম ছিল তা ত্রৈলোক্যনাথ
মুখোপাধ্যায়ের লেখায় ও ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম বুলেটিন ১৯৮৯-এ পাওয়া যায়। কলকাতায়
ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম,
আশুতোষ সংগ্রহশালা, গুরুসদয় মিউজিয়াম ও পশ্চিমবঙ্গ
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের বেহালার সংগ্রহশালায় দেখা যাবে। অজিত ঘোষ, গুরুসদয় দত্ত প্রমুখেরা বিশ শতকের
প্রথমার্ধে অনেক পট সংগ্রহ করেছিলেন। বিশ্বভারতী কলাভবনেও কিছু কালীঘাটের পট আছে, আছে বেনারসের ভারত কলা ভবনে।
কালীঘাটের পট নানান আকারের হত, ভারত
কলাভবনে পোস্টকার্ড সাইজের কিছু পট আছে আবার বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বড়ো আকারের
পটও আঁকা হত,
শ্রী পরিমল রায়ের সংগ্রহে এরকম কিছু
পট আছে।
বাঙালি পটুয়ারা
ইংরেজ চিত্রকরদের দেখে কালীঘাটের পট আঁকতে শুরু করেছিল এরকম ভুল ধারণা কিছু কিছু
প্রবন্ধে দেখা যায়। আর্চার সাহেব তাঁর কালীঘাটের পট বিষয়ক গ্রন্থে এরকম কথা লেখার
পর কিছু কিছু ভারতীয় স্বল্প পরিশ্রমী শিল্পালোচক এ ধারণাটি আর্চারকে অনুসরণ করে
প্রচার করেন। আর্চার সাহেব তাঁর বইতে ব্রিটিশ চিত্রকর
অঙ্কিত একটি কুটিরে কালীঘাটের পট বলে যা দেখিয়েছেন তা আদৌ কালীঘাটের পটই নয়, এরকম আরও কিছু ভুল তাঁর গ্রন্থে দেখা
যায় এমনকী পরবর্তী চিত্রে লিখিত স্থান নামও ভুল। ডঃ ব্রতীন্দ্রনাথ মুখোয়াধ্যায়ের
কাছে আমরা ঋণী। তিনি তাঁর নিবন্ধে বিস্তারিতভাবে এই ভুলগুলি দেখিয়ে দিয়েছেন এবং
কালীঘাটের পটের পূর্বাভাস হিসেবে বহড়ুর দেওয়াল চিত্র (১৮২৬?) এবং আরও কিছু দৃষ্টান্ত দিয়েছেন।
বাঙালি শিল্পীরা ইউরোপীয় শিল্পীদের আগমনের আগে থেকেই শেডিং করতে পারতেন। কাগজের
ওপর ছবি আঁকা পুঁথিচিত্র ও পটে পাওয়া যায়। স্বচ্ছ গুয়াস বা টেম্পেরা দেশি শিল্পীদের
অজ্ঞাত ছিল না,
অষ্টাদশ শতকের আগে থেকেই এ সব উপাদান
বঙ্গের চিত্রকলায় এসেছে। প্রাথমিক পর্যায়ের কালীঘাটের পট একান্তভাবেই দেশীয় উৎসের, আঞ্চলিক উৎসের মৌলিক সৃষ্টি। পরবর্তী
পর্যায়ের পটুয়ারা অবশ্য ইউরোপীয় চিত্রকরদের কাজ দেখেছিলেন, তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
রাজস্থানি অনুচিত্রও পরবর্তী পর্যায়ে কালীঘাটের পটে চলে এল।
প্রাথমিক পর্যায়ে পটুয়ারা সরাসরি তুলি দিয়ে
রেখাঙ্কন করতেন তারপর রঙ লাগাতেন অর্থাৎ কোনোরকম পেনসিল ড্রইং-এ ছবিটির খসড়া করে
তার ওপর তুলি ও কালি লাগানোর প্রথা ছিল না। পররবর্তীকালে পটুয়ারা পেনসিল ড্রইং
করতেন। অর্ধসম্পূর্ন কিছু পটের নমুনা গুরুসদয় সংগ্রহশালায় আছে। এতে নিবারণ চন্দ্র
ঘোষ (১৮৩৫-১৯৩০), কালীচরণ
ঘোষ (১৮৪৪-১৯৩০) প্রমুখ পররবর্তী দক্ষ পটুয়াদের পেন্সিল ব্যবহার দেখা যায়। হারউইৎস
সংগ্রহেও এরকম কিছু পট আছে। ঘোষ ভ্রাতৃদ্বয় জাতিতে কুম্ভকার বা সূত্রধর নয়, সদগোপ। ২৪ পরগণার গড়িয়া থেকে তাঁরা কালীঘাটে আসেন।
নকুলেশ্বরতলায় তাঁদের পট বিক্রয় কেন্দ্র ছিল।
No comments:
Post a Comment