তাঁর এই রম্য ভ্রমণ কাহিনীতে, আমাদের কাছে সবথেকে আকর্ষনীয় তাঁর লন্ডনের প্রখ্যাতদের সামনে বক্তৃতা। প্রথমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কোর্ট অব ডিরেক্টারদের সঙ্গে বৈঠক এবং পরে লর্ড মেয়র ম্যন্সন হৌসে বিপুল এক ভোজসভায় তার নতমস্তকে সাম্রাজ্যপৃষ্ঠকণ্ডুয়ন এবং সরাসরি পদলেহনকারী বক্তব্য। পার্টনার ইন এম্পাইয়ার গ্রন্থে ব্লেয়ার বি ক্লিং লিখছেন, ‘হি এক্সপ্রেসড হিজ় গ্র্যাটিচিউড ফর হস্পিটালিটি অ্যান্ড ফ্রেন্ডশিপ হে হ্যাড রিসিভড ইন ইংল্যান্ড অ্যান্ড দেন, পারসিউমিং টু স্পিক অন বিহাফ অফ হিজ কান্ট্রিমেন, এক্সপ্রেসড তেয়ার গ্র্যাটিচিউড ফর ব্রিটিশ রুল। ‘ইট ওয়াজ ইংল্যান্ড হু সেন্ট আউট ক্লাইভ অ্যান্ড কর্নয়ালিস টু বেনিফিট ইন্ডিয়া বাই দেয়ার কাউন্সেলস অ্যান্ড আর্ম। ইট ওয়াজ দ্য কান্ট্রি দ্যাট প্রোটেক্টেড হিজ কান্ট্রিমেন ফ্রম দ্য টিরানি অ্যান্ড ভিলেইনি অব দ্য মহামেডান্স, অ্যান্ড থে নো লেস ফ্রেইটফুল অপ্রেসন্স অব দ্য রুসিয়ান্স। অ্যান্ড অল দিস ওয়াজ ডান – নট ইন দ্য এক্সপেকটেশন অব আ রেকুইটাল – নট ইন দ্য হোপ অব এনিথিং হোয়াট এভার ইন রিটার্ন, বাট ফ্রম দ্য মেয়ার লাভ অব ডুয়িং গুড ... ইট ওয়াজ ইম্পসিব্ল ফর দ্য কান্ট্রিমেন টু ট্রিট দ্য ইংলিশ উইথ ইনগ্রাচিউড।’’
তাঁর কান্ট্রিমেন যদি হয় কলকাতার আলালেরা তাহলে ঐতিহাসিকমশয় সঠিক কথা বলছেন, কিন্তু কান্ট্রিমেন মানে যদি বিলিতিমতে গ্রামবাংলার তেতে থাকা মানুষ হয়, তাহলে সরাসরি বলা যাক তিনি জেনেশুনে অনৃতভাষন করছেন। অতনু বসু বলছেন, ভারতে ইংরেজদের সুসাশনের দরাজ সার্টিফিকেট পেয়ে সমস্ত হৌস তুমুল হর্ষধ্বনিতে ফেটে পড়ে। তিনি সেই ভোজসভায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে যে দরাজ প্রশংসাপত্র দিলেন, তাতে ভারতে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির সদস্যরা উত্তেজিত। আর ব্রিটেনে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির চার্লস ফোর্বস এবং জোসেফ পিজ়এরমত ঘনিষ্ট বন্ধুরা বেজায় খুশি। তারা তার বক্তৃতাকে কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে বর্ননা করলেন। স্রোতের বিপরীতে গিয়ে আজ বলা দরকার, তাঁর গুরু রামমোহন বা তাঁর এই দরকারি সাম্রাজ্য ভ্রমণের সঙ্গে, তাঁর দেশের কোটি কোটি গ্রামীণ প্রজার জীবন ধারনের বিন্দুমাত্র সম্বন্ধ ছিলনা। বরং তিনি এই কাজগুলির মধ্য দিয়ে, পরোক্ষে কলকাতার কয়েক লাখ ইংরেজি শিক্ষিত, সাম্রাজ্যের বন্ধু, উন্নতিশীল মধ্যবিত্তের চাকরি, দালালি এবং উমদোরির ব্যবস্থা করছিলেন। তাই তিনি আজও বাঙালি মধ্যবিত্তের নিত্যপুজ্য।
ভারতের আলেকজান্ডার কোম্পানির প্রাক্তন প্রধান কর্নেল জেমস ইয়ং তাকে পরিচয় করিয়ে দেন, ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির র্যাডিক্যাল নেতা লর্ড ব্রুহামের সঙ্গে। ভারতে ফেরার সময় তাকে আবারও রানীর সঙ্গে আলাপ করানো হল। এবং নাইটহুড প্রদানের জন্য ইয়ং, ব্রুহামকে প্রস্তাব করলেন। ব্রুহামের ধারনা ছিল সাম্রাজ্য তাকে ব্যারোনেট সম্মানে ভূষিত করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি ঘটে ওঠেনি।
আশ্চর্যের কথা ঐতিহাসিকেরা তার জীবনী, লন্ডনের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পদলেহনকারী এই ভাষনকে আজও অকুতোভয়ে সম্মান জানাচ্ছেন। আরেক রকম পত্রিকার উক্ত প্রবন্ধিক বলছেন, ‘তবে দ্বারকানাথের এই দরাজ ও খোলা সার্টিফিকেটের পেছনে ঐতিহাসিকেরা তাঁর প্রখর রাজনৈতিক বুদ্ধি এবং একজন সুদক্ষ কূটনীতিবিদের ছাপ খুঁজে পান।’ ঐতিহাসিকদের সাম্রাজ্যবন্ধুত্বের নিরাপত্তার বেড়াজাল আর বরাভয় বরাবরেরমত আজও তাকে বাঁচিয়ে চলেছে। অতনু বসুর প্রবন্ধ বা ব্লেয়ার বি ক্লিংএর জীবনী তাঁর উজ্জ্বল নিদর্শন। কিন্তু তিনি কি মনে করেন সেই মন্তব্য, বাসুজা বোধহয় যত্নসহকারে এড়িয়ে গিয়েছেন। কিন্তু তিনি যিদি ঐতিহাসিক হন তো সোনায় সোহাগা।
No comments:
Post a Comment