২০১৩র দুর্গোপুজোয় সদ্য দিল্লির পাশের উত্তরপ্রদেশের
গ্রেটার নয়ডা থেকে বাংলার কারুশিল্প প্রদর্শনী করে ফিরলাম। এই প্রেক্ষিতে কয়েকটি
অভিজ্ঞতা এবং তৎসংক্রান্ত কিছু অনুভূতি শোনানোর অনুমতি চাইছি।
২০১৩র মে মাসে গ্রেটার নয়ডায়, এশিয়ান ডেভেলাপমেন্ট
ব্যাঙ্কের মিটিং এবং এশিয়ার নানান উন্নয়নকর্মের বিরোধিতায় অংশগ্রহণ করতে
গিয়েছিলাম। ছিলাম ওয়াইএমসিএতে। সেই এলাকাটি সাজিয়েও ছিলাম পশ্চিমবঙ্গের ২০জন গ্রামশিল্পকর্মী।
পশ্চিমবঙ্গের নানান শিল্প দ্রব্যেরও প্রদর্শনী ছিল। মিছিল, মিটিং, আলোচনা এবং সেই
সঙ্গে বাংলার নানান গ্রাম শিল্পের প্রদর্শন করতে গিয়ে অন্যরকম অনুভূতি অর্জন
হয়েছিল। এলাকায় ঘুরতে ঘুরতে আলাপ হয় স্থানীয় বাঙালি সংগঠনের এক কর্মকর্তার সঙ্গে।
আমাদের সজ্জা উপকরণ এবং শিল্পীদের দেখে, গ্রেটার নয়ডার দুর্গোপুজোয় এ ধরনের একটি
প্রদর্শনী করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। চেয়েছিলাম থাকার যায়গা আর প্রদর্শনীর স্থল।
রাজি হলেন। কলকাতার ফিরে বেশ কয়েক মাস কথা চালাচালির পর ঠিক হল, আমরা ষষ্ঠী,
সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এবং দশমী এই পাঁচ দিন বাংলার শিল্পকলার ঝাঁকি প্রদর্শন করব।
পুজোর সময় প্রায় ১২ জনের দল নিয়ে পৌঁছলাম গ্রেটার নয়ডার
কালীবাড়ি। উদ্যোক্তারা খুব কিছু খারাপ ব্যবস্থা আর ব্যবহার করেন নি। শুধু কয়েকটি
সাধারণ অসুবিধে ছাড়া। আমাদের রেখে ছিলেন খুব বড় একটি ফ্ল্যাটে। বিন্দুমাত্র
অসুবিধে হয় নি। হয়েছিল গতায়াতের। সেটি মেলা স্থান থেকে অন্ততঃ ৪ কিমি দূরে। এমন এক
শহরে, যে শহরকে দেখলে মনে হয়, রাস্তায় হাঁটা কঠোরভাবে বারন আর তিন চাকা অটো ছাড়া
যে কোনও গনযান নিষিদ্ধ। প্রথমের দিকে মাঝরাতে মেলা শেষ হওয়ায় আমরা যারা প্রায়শঃই
হুব্বা বনেছি। ফিরব কি করে জানিনা। প্রত্যেকের হয় দুচাকা নয় চার চাকা বাহন। দু
চাকা কম, চার চাকা বেশী। সস্তার চারচাকা কম, দামি চারচাকা বেশী। দুচাকাওয়ালারা
কিছুটা হলেও নিম্ন শ্রেণীর বাঙালি। বাঁচিয়েছে বালুরঘাটের ২৫/২৫ বছরের ৬ ফুটিয়া
ভোলা। অটো চালায়। তার সঙ্গে আসা যাওয়ার রফা করে নিয়েছিলাম।
সব থেকে বড় দুর্ঘটনা
হল বৃষ্টিতে। মেলার কোনও দোকানের ছাদেই ত্রিপল ঢাকার ব্যবস্থা করেন নি উদ্যোক্তারা।
সপ্তমীর ভোররাতের বৃষ্টি। কাপড়ের ছাদ উপড়ে, দোকানের প্রায় সব জিনিস ভিজিয়ে দেয়। এমনকি
মূল প্যান্ডেলে প্রতিমার মাথার ছাদ চুইয়ে জল পড়ছে। আমরা অনেকেই বেঁচে গিয়েছি কেননা
আমাদের শিল্প দ্রব্য সব প্রকৃতির সন্তান। তবুও কিছুটা ক্ষতিতো হয়েইছে। আর খাবার?
একটি ঝুপড়ি ছাড়া বড়, ছোট খাবার দোকান নেই। মেলায় একটি খাবারের দোকান ছিল, সপ্তমী
থেকে। মেদিনীপুরের এক ব্যক্তির। তিনি স্থানীয় বাজারে(মানে শপিং মলে) দোকান চালান।
এগ রোল ৩৫ টাকা। সেই দামের শুরু। মাঠে সেউ পুরি আর ভেল পুরি। এক প্লেট ৩০ টাকা। মুজফফরপুরের
এক বৃদ্ধ ঝুপড়িওয়ালা আমাদের উদ্ধার করেন। মেলা স্থল থেকে যেতে হত অন্ততঃ আধ কিমিদূরে
খেতে। সকালে পাঁচ রুটি তরকারি ২৫ টাকা, আর দুপুরে ভাত, ডাল আর একটা তরকারী(পুজোর
দিন, তাই নিরামিষ) ২৫ টাকা। ডিম ভাজা ১০ টাকা। ভাত, ডাল, মাছ বা মুরগি ৫০ টাকা। গরম
গরম সব নিরামিষ খাবার বেশ তৃপ্তি করে খেতাম।
No comments:
Post a Comment