ধণী হওয়াপ পথে
সোনাধরেরা কদাচ হাঁটেন নি।
ভারতের সমবায়ী সমাজ শুধু সোনাধরই নয়, তৃণমূলের উত্পাদক অথবা ব্যবসায়ীকে সেই কাজটি
করার কদাচ অনুমতি দেয় নি। হাজার হাজার বছর
ধরে বিকশিত, সমবায়ী অএককেন্দ্রিক সমাজের নিয়ম মেনে, উত্পাদক অথবা ব্যবসায়ী নিজের
হাতে সবপুঁজি জড়ো করতে পারতেন না।
অথচ এতদিন গবেষকেরা, রাজনৈতিক কর্মীরা নানান দর্শণে জারিত হয়ে কয়েকজন মুষ্টিমেয়র হাতে,
অথবা রাষ্ট্রের সিন্দুকে পুঞ্জীভূত পুঁজিকেই সমাজপ্রগতির মহাপথরূপে ভেবে এসেছেন। তাতে সামাজিক প্রগতির বিশেষ কোনও বিকাশ ঘটেছে এমন নজির বোধহয়
আজও পাওয়া যায় নি,
কিন্তু
বিশ্বে অসাম্য দিনদিন বেড়েছে। বিশ্ব ধংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আরও তাড়াতাড়ি।
ভারতের পারম্পরিক
গ্রামীণ সমাজ এমন এক উৎপাদন এবং বন্টন ব্যবস্থা তৈরি করেছে, যেটি উতপাদকেদের হাতে
অতিরিক্ত লভ্যাংশ জড়ো হতে দেয় না। বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সঙ্ঘের
যুগ্ম সম্পাদক, চড়িদার ছো মুখোশ, নাচ এবং ঝুমুর শিল্পী নেপাল সুত্রধর বলেছিলেন,
বাবা বিশ্বকর্মা এমন একটা কল বানিয়েছেন, যাতে আমাদের মত শিল্পীরা বড়লোক(ধনী) না
হতে পারে। তা হলেই আমরা আমাদের বাপ-দাদার শেখানো কাজ ভুলে যাব। তাঁরা উৎপাদন এবং
ব্যবসা করে লভ্যাংশ লাভ করতেন ঠিকই কিন্তু সেটি এমন নয়, যা দিয়ে ধনী হওয়া যায়।
সমাজে একটি সাম্যের পরিবেশ বজায় থাকে। ধনী নির্ধনের ফারাক কম থাকে। আজ সোনাধরের
আলোচনা করলাম তাঁর মত মানুষ যে সম্প্রদায় থেকে এসেছেন, এই সম্প্রদায়ের তৈরি
গ্রামীণ দর্শন আলোচনায়। সারা ভারত এই দর্শনে হাজার হাজার বছর ধরে টিকেছিলেন নিজের
জোরে, পৃথিবীকে ধংস না করে, বিশ্ব ধাতু বাজারে প্রায় একচেটিয়া পকড় বজায় রেখেই।
নীল, আফিম, ধাতু, বস্ত্রেরমত হাজারো পণ্যে বিশ্বে একচেটিয়া ব্যবসা করলেও ভারতীয়রা
কখনও মানুষ মারা নীল বা আফিম চাষ করন নি, বিদেশের নানান শিল্প গায়ের জোরে ধংস করে,
নিজের দেশে নতুন শিল্প গড়ে তোলেন নি।
আজ আমরা যারা
শহুরেরা নিজেদের ভাল-খারাপ থাকার সঙ্গে জুড়ে নিই সারা বিশ্বের ভাল থাকা বা মন্দ
থাকার বিষয়টি, আগামীদিনের বিশ্ব কোনদিকে যাচ্ছেভেবে মাথা খারাপ করি এই সরকারি-কর্পোরেটীয়
লুঠের বাজারের মধ্যে থেকেও, তাঁদের আরও বেশি সোনাধরদের, তাঁদের সম্প্রদায়দের দর্শন
নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন এই জন্য নয় যে, তাতে অতীত ভারতের গর্বিত রূপ প্রকাশ পাবে,
এ জন্য নয় যে সোনাধরের সম্প্রদায়ের কৃতির ঝান্ডা তোলা যাবে; এই জন্য যে, ভারতের এই
গ্রামীণ দর্শন(যাকে আমরা বলছি সভ্যতা নয় গ্রাম্যতা)ই পারে সারা বিশ্বের ঈষান কোণে
ঝুলে থাকা, লুঠ, লোভের করাল ধংসের কালো মেঘের হাত থেকে, বিশ্বকে বাঁচাতে।
সোনাধরদের, তাঁদের সমাজের কৃতি স্মরণ করতে, চর্চা করতে হবে আরও গভীরে গিয়ে শুধু এই
জন্যই। বিশ্ব আজ ধংসের মুখোমুখি যে।
No comments:
Post a Comment