এই বিশাল পরিমাণে লোহা উৎপন্ন হওয়ায় ইয়োরোপীয়রা এই জেলার ওপরে অত্যধিক নজর
দিতে শুরু করে। ১৮৫২র ওল্ডহ্যামের সমীক্ষার পর মেসার্স ম্যাকে অ্যান্ড কোং
ইয়োরোপীয় প্রযুক্তিতে লোহা গলানোর কারখানা তৈরি করে। এই কারখানাটি ২০ বছর ধরে চলে।
এবং এর পরে যখন এই কারখানাটি বন্ধ হয়ে যার, তখন দেখাযায় যে এই জেলার দেশিয়
পদ্ধতিতে লোহা উৎপাদন ব্যবস্থা পুরোপুরি ধংস হয়ে গিয়েছে। ওল্ডহ্যামের কিছু হাতে
আঁকা ছবি মেমোয়ার্স অব জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার অষ্টম খণ্ডে, দ্বিতীয় ভাগের
৮৭ পাতায় প্রকাশিত হয়েছে। এই চুল্লিগুলো ৭-৮ ফুট উঁচু হত। ঘেরে ৫ ফুট। এগুলি
অনেকটা ইংরেজি ডি অক্ষরের মত। চ্যাপ্টা দিকটি সামনে থাকে। একটি টুয়ারের মাধ্যমে
বাতাস ভরা হতে থাকে। হাপরগুলো অন্যান্য জেলার মতই কিন্তু আকারে বেশ বড়। তাই অনেকে মিলে
একসঙ্গে এই হাপরগুলি চালাত।
চুল্লিগুলো গভীর করে বসানো হত। চুল্লিকে ঘিরে একটি প্লাটফর্ম থাকত যেখানে
জ্বালানি আর আকরিকের মিশ্রণ রাখা হত। কারিগর এখানে দাঁড়িয়ে এই মিশ্রণ চুল্লিতে
দিতে থাকতেন। যে ফোর্জে বারবার তপ্ত করে লোহার পিন্ডকে পিটিয়ে পরিশুদ্ধ করা হত
সেটিও বেশ বড়সড় হত। ওল্ডহ্যাম তাকেও চুল্লি বলেছেন, কিন্তু তার আঁকা ছবি থেকে
পরিষ্কার যে এগুলো হার্থের পাশে রাখা নানান ধরনে মাপের শুধুই ফোর্জ।
আমি ১৮ এপ্রিল ১৯০৭
সালে দুমকার একটু দূরে কোল সমাজের লোহা তৈরির পদ্ধতি লক্ষ্য করি। ওড়িশা,
ছোটনাগপুর, সম্বলপুর বা রাজমহল পাহাড়ে যে ধরণের লোহা গলানোর পদ্ধতি রয়েছে, কোলেদের
লোহা গলানো পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে আলাদা। ছোট্ট ঢিপির তলায়, বট গাছের নিচে তারা
চুল্লি তৈরি করে। এটি মাটির তৈরি। এবং ব্যবহারের আগে খুব সাবধানে এই চুল্লিটি
শোকানো হয়। এটি পুরোপুরি চোঙাকৃতি। উচ্চতায় ৩৪ ইঞ্চি, ঘেরে ২৬ ইঞ্চি নিচে আর ওপরে
১১ ইঞ্চি। হার্থের ভেতরের ঘের ১ ফুট, মাথায় ৫ ইঞ্চি। ছুল্লির পাশে ১ফুটেরমত একটি
অর্ধগোলাকৃতি ছিদ্র রয়েছে। এটিতে ইটে ভর দেওয়া টুয়ারের নল প্রবেশ করে। টুইয়ারটির
নল দৈর্ঘে ৭ ইঞ্চি আর ঘেরে ১ ইঞ্চি, অনেকটা
শঙ্কু আকৃতির। টুইয়ার জড়িয়ে থাকে ভিজে বালু মাটি। হাপর তৈরি হয় ১৬ ইঞ্চির ঘেরের আর
৫ ইঞ্চি উচ্চতার চোঙার মত কাঠ দিয়ে। এর ভেতরটি কুরে ফাঁকা করা। মুখে একটি ছাগলের
চামড়া বসানো। কাঠের চোঙার পাশে ৩ ফুটের একটি বাঁশের নল জোড়া থাকে। এর এক দিকে একটি
লোহা নজ়ল হিসেবে লাগানো হয়। এই ধরনের দুটি হাপর তৈরি করা হয়। এই দুটি হাপরের
লোহার নজ়ল টুয়ারের মধ্যে ঢোকানো হয়। দুটি হাপরকে খুব কাছাকাছি বসানো হয় যাতে এই
দুটি বাঁশের নল টুয়ারের সমান্তরাল থাকে। চুল্লির বাইরের দিকের নিচ থেকে দুটি
বাঁশের বাঁখারি আর্ধ গোলাকৃতি হয়ে গিয়ে দুটি হাপরের ওপরে রাখা হয় এবং সেটির সঙ্গে
একটি ফিতে জুড়ে দেওয়াহয় হাপরের সঙ্গে।
একজন এবারে দুটি হাপরের ওপরে দাঁড়িয়ে পর্যায়ক্রমে দু পায়ে সে দুটিকে চালাতে
থাকে। চুল্লিটিতে শাল কাঠের কাঠকয়লা(মাটি চাপাদিয়ে শাল কাঠ পুড়িয়ে তৈরি হয়)
জ্বালানি সিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটিতে আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্রমাগত হাওয়া দেওয়া
শুরু হয়। এই সময় চুল্লিতে একটি সিন্দুর লাল ঢ্যারা লাগানো হয়। হয়ত আশীর্বাদ চাওয়ার
জন্য।
No comments:
Post a Comment