কৃঃ আপনি তাহলে বলছেন, ১৭৫৭র আগে ভারত ব্রিটেনের থেকে ভাল অবস্থায় ছিল? তখন ভারতের সাধারণ মানুষের কি অবস্থা ছিল?
ধঃ আমাদের হাতে এমন কোনো তথ্য নেই যা দিয়ে আমরা এই দুই সমাজের তুলনা করতে পারি। কিন্তু কয়েকটি তথ্য দিতে পারি যা ভারতের সমাজকে অন্য দৃষ্টিতে দেখতে চেষ্টা করবে। ১৮০৪ সালের জুলাইতে এডিনবরা রিভিউতে ভারতের কৃষি উৎপাদনের হার এবং কৃষি শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে লেখা হয়েছিল। তুলনায় দেখা গেল, কৃষি উৎপাদনের হার ব্রিটেনের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। আর যেটা ব্রিটেনের কর্তাদের স্তম্ভিত করে দিয়ে ছিল সেটা হল, ভারতের কৃষি শ্রমকদের মজুরি তাঁদের দেশের কৃষি শ্রমিকদের থেকে কয়েকগুণ বেশি।
এর থেকে আমরা একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারি, তা হল, ভারতের অর্থনীতি যখন ঢালুর পথে যাচ্ছে, সেই ১৮০০ সালেই যদি এই মজুরি হয় তাহলে তার আগে কি ছিল? বা ১৮০৬ সালে বেলারি জেলার কনজামশান প্যাটার্ন নিয়ে আলোচনা করা যাক। এই জেলার তিন ধরণের পরিবারে কনজামশান প্যাটার্ন নিয়ে বিশদে সমীক্ষা করেছিল। পরিবারের মাথাপিছু দৈনিক দানাশস্য ব্যবহার হত আধ সের। এছাড়াও ২৩টি অন্যান্য জিনিস ছিল যেমন দানাশস্য, ঘি, তেল, নারকেল, সবজি, পান, সুপুরি ইত্যাদি। প্রথম শ্রেণীর পরিবারের মাথাপিছু বছরে খরচ হত ১৭ টাকা। দ্বিতীয় শ্রেণীর ৯ টাকা, তৃতীয় শ্রেণীর ৭টাকা(তুলনা করা যাক মূল্যবৃদ্ধির ১৮২০ সালের কলকাতায় মাসে দুটাকা রোজগার করে ঠাকুরদাস, বিদ্যাসাগরের পিতা নিজেকে স্বচ্ছল ভাবছেন, এবং বাড়িতে টাকা পাঠাবার কথা চিন্তা করছেন)।
তাঞ্জোরে ১৮০৫ সালে মিরাসদার(জমির চিরস্থায়ী স্বত্ত্বধারী)দের সংখ্যা ছিল ৬২০০০, যার মধ্যে ৪২০০০ ছিল শুদ্র বা তারও নিম্নশ্রেণীর। ৬ লাখ জনসখ্যার বারামহল(আজকের সালেম) জেলায়, পারিয়া গোষ্ঠীর কৃষকদের সংখ্যা ছিল ৩২৪৭৪। ১৭৯৯ সালে চেঙ্গেলপেট্টু জেলায় মিরাসদারদের যে তালিকা হয় তার সংখ্যা ছিল ৮৩০০, কালেক্টরের ধারণা মোট সংখ্যা, যারা এর বাইরে রয়ে গেলেন তারা এর দশগুণ হবেন। মাদ্রাজের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা তৈরি করা আলেকজান্দার রিড লিখছেন হায়দ্রাবাদে বড়মানুষ আর তাঁদের চাকরদের মধ্যে পার্থক্য শুধু কাপড়ের। বড় মানুষদের কাপড় একটু বেশি পরিষ্কার।
কৃঃ আপনার আগামীতে প্রকাশ্য ভারতের ব্রিটিশপূর্ব শিক্ষাব্যবস্থায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিষয়ে আলোচনা করেছেন-
ধঃ উদাহরণস্বরূপ, ১৯২২-১৯২৫ সালে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির দেশজ শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে একটা সমীক্ষ হয়। তাতে দেখা যায় ১১৫৭৫টি বিদ্যালয় আর ১০৯৪টি উচ্চবিদ্যালয়(কলেজ) রয়েছে যেগুলির ছাত্র সংখ্যা ১৭৪১৯৫ এবং ৫৪৩১ যথাক্রমে। সেই ছাত্রদের জাতিভাগ নিয়েও অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল। তামিলভাষী এলাকায় শুদ্র এবং তার তলার জাতির ছাত্রের সংখ্যা ছিল ৭০-৮০ শতাংশ। ৬২ শতাংশ ছিল ওডিয়া ভাষী এলাকায় এবং ৫৪ শতাংশ ছিল মালায়লম ভাষী এলাকায়। মাদ্রাজের গভর্ণর এটা লেখেন, বিদ্যালয়ের যাওয়ার যাদের বয়স হয়েছে এমন ছাত্রদের ২৫ শতাংশ বিদ্যালয়ে যায় এবং বড় এক অংশ বাড়িতে পড়াশোনা করে। ২৬০০০ ছাত্র বাড়িতে পড়াশোনা করে, ৫৫০০ বিদ্যালয়ে যায়। মালাবারে বাড়িতে উচ্চস্তরের পড়াশোনা করা ছাত্রদের সংখ্যা ১৬০০। সেখানে মুসলমান বিদ্যালয়ে যাওয়া ছাত্রীদের সংখ্যা ১১২২, ছাত্রদের সংখ্যা ৩১৯৬। ব্রিটিশপূর্ব সময়ে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে যে সব ধারণা রয়েছে, সেগুলি নতুন করে ফিরে দেখার সময় এসেছে।
(পরের প্রকাশনায় শেষ হবে)
ধঃ আমাদের হাতে এমন কোনো তথ্য নেই যা দিয়ে আমরা এই দুই সমাজের তুলনা করতে পারি। কিন্তু কয়েকটি তথ্য দিতে পারি যা ভারতের সমাজকে অন্য দৃষ্টিতে দেখতে চেষ্টা করবে। ১৮০৪ সালের জুলাইতে এডিনবরা রিভিউতে ভারতের কৃষি উৎপাদনের হার এবং কৃষি শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে লেখা হয়েছিল। তুলনায় দেখা গেল, কৃষি উৎপাদনের হার ব্রিটেনের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। আর যেটা ব্রিটেনের কর্তাদের স্তম্ভিত করে দিয়ে ছিল সেটা হল, ভারতের কৃষি শ্রমকদের মজুরি তাঁদের দেশের কৃষি শ্রমিকদের থেকে কয়েকগুণ বেশি।
এর থেকে আমরা একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারি, তা হল, ভারতের অর্থনীতি যখন ঢালুর পথে যাচ্ছে, সেই ১৮০০ সালেই যদি এই মজুরি হয় তাহলে তার আগে কি ছিল? বা ১৮০৬ সালে বেলারি জেলার কনজামশান প্যাটার্ন নিয়ে আলোচনা করা যাক। এই জেলার তিন ধরণের পরিবারে কনজামশান প্যাটার্ন নিয়ে বিশদে সমীক্ষা করেছিল। পরিবারের মাথাপিছু দৈনিক দানাশস্য ব্যবহার হত আধ সের। এছাড়াও ২৩টি অন্যান্য জিনিস ছিল যেমন দানাশস্য, ঘি, তেল, নারকেল, সবজি, পান, সুপুরি ইত্যাদি। প্রথম শ্রেণীর পরিবারের মাথাপিছু বছরে খরচ হত ১৭ টাকা। দ্বিতীয় শ্রেণীর ৯ টাকা, তৃতীয় শ্রেণীর ৭টাকা(তুলনা করা যাক মূল্যবৃদ্ধির ১৮২০ সালের কলকাতায় মাসে দুটাকা রোজগার করে ঠাকুরদাস, বিদ্যাসাগরের পিতা নিজেকে স্বচ্ছল ভাবছেন, এবং বাড়িতে টাকা পাঠাবার কথা চিন্তা করছেন)।
তাঞ্জোরে ১৮০৫ সালে মিরাসদার(জমির চিরস্থায়ী স্বত্ত্বধারী)দের সংখ্যা ছিল ৬২০০০, যার মধ্যে ৪২০০০ ছিল শুদ্র বা তারও নিম্নশ্রেণীর। ৬ লাখ জনসখ্যার বারামহল(আজকের সালেম) জেলায়, পারিয়া গোষ্ঠীর কৃষকদের সংখ্যা ছিল ৩২৪৭৪। ১৭৯৯ সালে চেঙ্গেলপেট্টু জেলায় মিরাসদারদের যে তালিকা হয় তার সংখ্যা ছিল ৮৩০০, কালেক্টরের ধারণা মোট সংখ্যা, যারা এর বাইরে রয়ে গেলেন তারা এর দশগুণ হবেন। মাদ্রাজের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা তৈরি করা আলেকজান্দার রিড লিখছেন হায়দ্রাবাদে বড়মানুষ আর তাঁদের চাকরদের মধ্যে পার্থক্য শুধু কাপড়ের। বড় মানুষদের কাপড় একটু বেশি পরিষ্কার।
কৃঃ আপনার আগামীতে প্রকাশ্য ভারতের ব্রিটিশপূর্ব শিক্ষাব্যবস্থায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিষয়ে আলোচনা করেছেন-
ধঃ উদাহরণস্বরূপ, ১৯২২-১৯২৫ সালে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির দেশজ শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে একটা সমীক্ষ হয়। তাতে দেখা যায় ১১৫৭৫টি বিদ্যালয় আর ১০৯৪টি উচ্চবিদ্যালয়(কলেজ) রয়েছে যেগুলির ছাত্র সংখ্যা ১৭৪১৯৫ এবং ৫৪৩১ যথাক্রমে। সেই ছাত্রদের জাতিভাগ নিয়েও অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল। তামিলভাষী এলাকায় শুদ্র এবং তার তলার জাতির ছাত্রের সংখ্যা ছিল ৭০-৮০ শতাংশ। ৬২ শতাংশ ছিল ওডিয়া ভাষী এলাকায় এবং ৫৪ শতাংশ ছিল মালায়লম ভাষী এলাকায়। মাদ্রাজের গভর্ণর এটা লেখেন, বিদ্যালয়ের যাওয়ার যাদের বয়স হয়েছে এমন ছাত্রদের ২৫ শতাংশ বিদ্যালয়ে যায় এবং বড় এক অংশ বাড়িতে পড়াশোনা করে। ২৬০০০ ছাত্র বাড়িতে পড়াশোনা করে, ৫৫০০ বিদ্যালয়ে যায়। মালাবারে বাড়িতে উচ্চস্তরের পড়াশোনা করা ছাত্রদের সংখ্যা ১৬০০। সেখানে মুসলমান বিদ্যালয়ে যাওয়া ছাত্রীদের সংখ্যা ১১২২, ছাত্রদের সংখ্যা ৩১৯৬। ব্রিটিশপূর্ব সময়ে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে যে সব ধারণা রয়েছে, সেগুলি নতুন করে ফিরে দেখার সময় এসেছে।
(পরের প্রকাশনায় শেষ হবে)
No comments:
Post a Comment