আমলারা সাংসদ যোগেন চৌধুরীর ছবি কেনার সময় তাঁর ছবির উতপাদন ব্যয় চাইবেন তো?
বেশ বড় লেখা হবে। দয়াকরে চোখ বুলোবেন। ভাঙ্গড়ের বিপ্লবী উত্তাপে যেন এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি পিছনে চলে না যায়।
আমরা মনে করি মমতা সরকার গ্রামের বিকাশের জন্য যা করেছেন, সেই কাজ বিগত ২৫০ বছরে কোন সরকার করে নি।
অথচ সরকারের গ্রাম-লক্ষ উদ্দেশ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প - বিশ্ববাংলাকে রাস্তা ছাড়া করতে আমলারা উঠে পড়ে লেগেছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্ববাংলা বিপনী প্রকল্প শুরু করেছিলেন সরকারে আসার প্রথম বছর থেকেই। অসাধারণ ছিল সেই প্রকল্পটি - অতীতের ভুলগুলি থেকে শিক্ষা নিয়ে গ্রাম উদ্যোগীদের থেকে পণ্য কিনে বিক্রি করা।
সমস্যা ছিল। বিশ্ববাংলার দাম।
বিপনীগুলোয় পণ্য কি দামে বিক্রি হয়, তা ভুক্তোভুগীরা নিশ্চই খেয়াল করেছেন। মাস পাঁচেক আগে দীপঙ্কর(দে)দা একটা শাড়ি কিনতে গিয়ে ছিটকে বেরিয়ে এসেছিলেন।
যে দামে আমলারা পণ্য কিনতেন তার থেকে অন্তত চারগুণ দামে সেই পণ্য তাদের দোকানে বিক্রি করতেন। সেই চড়ানো দামের ভাগিদার হতেন না গ্রামীন উতপাদকেরা। এই নীতি হয়ত কর্পোরেট/ব্যক্তিগত উদ্যমের আপণে চলতে পারে, কিন্তু কেন কোনও সরকারি উদ্যমে চলবে তার কোন সদুত্তর ছিল না।
এবং গত কয়েক বছর ধরেই গ্রামীন উদ্যোগীরা তাদের পণ্যের নির্দিষ্ট দাম বাড়াবার দরবার করছিলেন। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ধুয়ো দেখিয়ে সেগুলি এড়িয়ে গিয়েছেন কর্মকর্তারা। আর দাম বাড়াবার কথা বললেই পণ্য না নেওয়ার পরোক্ষ হুমকি তো ছিলই।
এ প্রসঙ্গে বলা ভাল বিশ্ববাংলার পণ্য কেনে এবং টাকা দেয় মঞ্জুষা। সেখানে তিন/চার মাসের আগে টাকাই পাওয়া যায় না।
তবুও চলছিল। বেশ ভালই। নানান অসুবিধে মোটামুটি মেনেই নিয়েছিলেন বাঙলার গ্রামীন উতপাদকেরা।
কিন্তু গোল লাগল গত পাঁচ ছ মাস আগে।
দপ্তরের আমলারা একটা ফরমান জারি করলেন, যাতে বলা হল প্রত্যেক সরবরাহকারীকে তাদের উতপাদনের ব্যয় দপ্তরকে জানাতে হবে - এবং একটা নির্দিষ্ট দিনে সেই ব্যয়ের তালিকা নিয়ে উতপাদকেদের আমলাদের কমিটির সামনে উপস্থিত হয়ে তাদের সন্তষ্ট করতে হবে। আমলারা যদি তাদের জবাবে সন্তুষ্ট হন, তাহলে তাদের থেকে যে দামে পণ্য কেনা হচ্ছে সেই দাম বজায় থাকবে, নয়ত কমবে।
পণ্যের দাম বাড়ানোর দাবি তো খারিজই করা হল, উলটে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা হল, যাতে উদ্যমীরা দাম কমাতে বাধ্য হয়।
এই নব্য আমলাতান্ত্রিক দাম কমানোর নীতি কি আদৌ বিশ্ববাংলা তৈরির নীতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ?
সেই প্রসঙ্গে কতগুলি প্রশ্ন; সেগুলি জরুরি কি না ঠিক করবেন সরকারের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা -
১। সরকার গ্রামীন যে উৎপাদনগুলি কিনছে সেগুলির উতপাদন খরচ জানতে চেয়ে ফরমান জারি করতে পারে? এটি কতটা নীতি সাপেক্ষ? সেই বৈঠকে উপস্থিত না হলে কি তাদের কালো তালিকভুক্ত করার হুমকি দিতে পারে?
২। আমুল বা ব্রিটানিয়ারমত নামি ব্রাণ্ডের পণ্যের উতপাদন ব্যয় চাওয়া হবে তো? কোম্পানির আমলাদের জবাবে সরকারি আমলারা যদি সন্তুষ্ট না হন, তাহলে তাদের পণ্যের দাম কমাতে বলার বুকের পাটা ক'জন আমলার রয়েছে ?
২। গত চার/পাঁচবছর ধরে বিশ্ববাংলাকে এক পাটের জুতো উতপাদক(এক জোড়ার দাম মাত্র ১০০-১১০টাকা, এই দামে বাজারে অন্য কোন জুতো কিনে দেখুন) একই দামে জুতো সরবরাহ করে আসছেন।গত দু'বছর ধরে তাঁর দাম বাড়ানোর আকুতি সরকারের আমলারা প্রত্যেকবার খারিজ করে দিয়েছেন। সরকার কি মনে করে, শ্রমের মূল্য তো ছেড়েই দিলাম, এই কয়েক বছরে বাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ে নি একই আছে?
৩। একটা ৫০০ টাকার মুখোশ আর ১০টাকার পুতুলের দাম কি তার কাঁচা মাল আর শ্রমের মূল্য দিয়ে নির্ধারিত হয়, নাকি তার পরম্পরারগুণে, তার ঐতিহ্যের টানে নির্ধারিত হয়।
৪। তাহলে প্রশ্ন এবার থেকে সরকারের আমলারা, সাংসদ যোগেন চৌধুরীর ছবি কেনার সময় তাঁর ছবির উতপাদন ব্যয় চাইবেন তো?
আমরা যারা এই মানুষদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, তাদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কাছে প্রশ্ন হল, আপনার সরকার মানুষের কাছে দায়বদ্ধ, আমলারা নয়। এই আমলারাই সরকারকে পথভ্রষ্ট করার জন্য অন্যতম অনুঘটক। মন্ত্রীরা কি আমলাদের এই নীতি সমর্থন করছেন?
আমরা মনে করি গ্রামীনেরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমলাদের কাছে নয়।
No comments:
Post a Comment