Chapter
2: Your Trusted Friends – বন্ধু কারা১
“Now
you can buy a Happy Meal at the Happiest Place on Earth.”
অধ্যায়টি শুরু করছেন এরিক রে এ কর্ক জাদুঘরের বর্ণনায়। এরিক সেটিতে ঘুরতে গিয়েছেন। কর্কএর জাদুঘরটিতে নানান দ্রষ্টব্য দেখলেন। পাঠকদের তার মত অমত জানালেন। এই জাদুঘরে জনগণের জন্য ঘোষণার গলাটি এরিক বর্ণনা করছেন একটি অপূর্ব শব্দে, “Disneyesque tone” ডিজনিরমত আওয়াজ। আদতে আবারও তিনি এক নতুন স্তরে পাঠকদের নিয়ে যাচ্ছেন, যেখানে তিনি বলছেন, কোনও একটি কর্পোরেট ব্যবসা নিজের জোরে চলে না, পরস্পরের হাত ধরাধরি করে, সম্পদ আদান প্রদান করে চলে। সঙ্গে দরকার হয় সরকারের অভয়হস্তও।
এরিক জানাচ্ছেন বিশ্বের দুটি অন্যতম বড় কর্পোরেট সংস্থা কিভাবে নিজেরা পরস্পরের পৃষ্ঠ কন্ডুয়ন করে চলে বিশ্বকে নিজেদের নীতিতে ঢেলে সাজাবার চেষ্টা করেছে নিয়মিতভাবে। এই দুই কর্পোরেট সংস্থার প্রধানএর সম্পর্ক বর্ণনায় তিনি কতগুলি কাকতালীয় তথ্য উপস্থাপন করেছেনঃ
১) ইলিনয়ে এই দুই ধুরন্ধর ব্যবসায়ী এক বছরের ব্যবধানে জন্ম।
২) তারা একসঙ্গে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে আম্বুল্যান্স কর্পে কাজ করেছেন।
৩) তারা দুজনেই মধ্যপশ্চিম আমেরিকা ছেড়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় এসে কর্পোরেট আমেরিকায় ইতিহাস তৈরি করেন, এবং পরের দিকে হাত ধরাধরি করে চলেছেন।
৪) দুজনেই মাঝপথে পাঠশালা ছেড়েছেন, কিন্তু তাদের কোম্পানির জন্য আমেরিকায় বিধিবদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছেন। ডিজ়নি তাদের কর্মীদের ডিজনিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন আর কর্ক শুরু করেছেন হ্যামবার্গার বিশ্ববিদ্যালয়, যেখান থেকে তিনি আগামী দিনের চেনের ম্যানেজার, আমলা এবং চেন দোকানের মালিকদের হ্যামবার্গারোলজিতে উপাধি দেবেন।
৫) এরিক বলছেন, এরা যতটা না ব্যবসায়ী, তার থেকে বেশি বেচুবাবু। তারা জানতেন শিশুদের কিভাবে তাদের কোম্পানিকে বেচতে হয়।
এই অধ্যায়ে বিশদে বর্ণনা করছেন কর্কের উত্থানের কাহিনী। কর্ক এক সময় কি বিক্রি করেন নি – কফি বিন, শিট মিউজিক, কাগজের কাপ, ঘর বাড়ি, পাউডার শেক, নানান ধরণের যন্ত্রপাতি, আয়েস্ক্রিম স্কুপ, ভাঁজকরা টেবল-চেয়ার আরও কত কিছু। ম্যাকডোনাল্ডের রেস্তরাঁয় কর্ক যেতেন মিল্ক শেক বিক্রি করতে ১৯৫৪য়। অনেকদিন ধরে তার রেস্তোরাঁ নিয়ে কাজ করার উচ্চাশা। কিন্তু ম্যাকডোনাল্ড ভাইদের খুব একটা উচ্চাশা ছিল না। দোকান থেকে বছরে ১লাখ ডলার লাভ করতেন। দুই ভাই একটা বড় বাড়ি এবং তিনটি ক্যাডিলাক নিয়ে শান্তিতে সময় কাটাতেন। ব্যাবসা বাড়াবার জন্য দেশ ঘুরতে যেতেও যেতে চাইতেন না। কর্ক দুই ভাইকে কনভিন্স করে ফেলেন তাকে ফ্র্যাঞ্চাইজ়িটি অধিকার বিক্রি করে দিতে। তার স্বপ্ন তিনি, এটিকে ছড়িয়ে দেবেন আমেরিকাজুড়ে। চুক্তি হল। কর্ক ক্রমশঃ দেশজুড়ে একটা দুটো করে ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি বিক্রি করতে শুরু করলেন। দুই ভাই ধনী হতে শুরু করলেন, সঙ্গে কর্কও। কর্ক যা দিচ্ছেন কর্ক তাতেই খুশি। কয়েক বছর পর কর্ক পুরো চেনটাই কিনে নেবেন।
ম্যাকডোনাল্ড ভাইদের সঙ্গে চুক্তি করেই কর্ক তার পুরনো চেনা ওয়াল্ট ডিজ়নির দ্বারস্থ হলেন। প্রস্তাব দিলেন ম্যাকডোনাল্ড ডিজনিল্যান্ডে খাবার বেচবে। আমেরিকায় ডিজনি তখন অতি বিখ্যাত মানুষদের অন্যতম। ডিজনিল্যান্ড তখনো তৈরি হচ্ছে। ডিজ়নি, কর্কের প্রস্তাব আমলাদের কাছে পাঠালেন। পত্রপাঠ প্রস্তাব বাতিল হল। ১৯৫৫র জুলাইতে যখন ডিজনিল্যান্ড খুলছে এবং রোনাল্ড রেগন এই ঘটনা এবিসিতে উপস্থাপনা করছেন, তখন সেখানে কিন্তু ম্যাকডোনাল্ড নেই। ভবিষ্যতে দেখব, অথচ কর্ক যেন ডিজনির সফল অনুগামী, এবং ডিজনির প্রতিটি দর্শন ধার করে নিজের ব্যবসায় কাজে লাগাচ্ছেন।
ডিজনি হলিউডে মাস প্রোডাকশন দর্শনের প্রবক্তা। তার সৃষ্টির কাজের নাম দেবেন ফান ফ্যাক্টরি। কর্ক তা অন্ধভাবে অনুসরন করবেন ম্যাকডোনাল্ডে। যে কোনও মাস প্রোডাকশন কোম্পানির মতই ডিজনি তার সব কর্মীকে একটি কাজ নানান টুকরো টুকরো অংশে ভেঙে দেবেন। যেন কোনও কর্মীর পুরো প্রকল্পএর সামগ্র ব্যাপারটা জানার প্রয়োজন নেই। এই কাজ দিয়েই ৩০ বছরের ডিজনি প্রখ্যাত হয়েছেন। ডিজনিকে ফোরডও সমভ্রম করতেন। ডিজনি বিনোদন উতপাদনেও কারখানার কনভেয়ার বেল্টে কাজেরমত নির্বিকল্প টুকরো টুকরো কাজে বিশ্বাস করতেন। বলতেন তিনি বিনোদন ম্যানুফ্যাকচার করেন। তার স্টুডিওয় “Hundreds of young people were being trained and fitted, into a machine for the manufacture of
entertainment.”
১৯৪১এ ডিজনির স্টুডিওয় ধর্মঘট হয়। ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদেরই তিনি ছাঁটাই করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডিজনিকে ধর্মঘটীদের কাছে হার মানতে হয়। তিনি কমিউনিস্টদের দায়ি করেন। এই ঘটনার পর পরে এফবিআইের গুপ্তচর হিসেবে তার গোপন জীবন শুরু হয়। ডিজনি বিশ্বাস করতেন দুর্বলের জয় হয় না। কর্মীদের প্রতি এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, “Don’t forget this, it’s the law of the universe that the
strong shall survive and the weak must fall by the way, and I don’t give a damn
what idealistic plan is cooked up, nothing can change that.”।
কর্ক হয়ত কোনোদিন এরকমভাবে বলেন নি, কিন্তু তিনি দূর থেকে ডিজনিকে দেখে নিজেকে এই ভাবেই সাজাচ্ছিলেন।
ডিজনি ডানপন্থী রিপাব্লিকান পার্টির ভোটের প্রচার পরিকল্পনা করতেন। তার একটা বড় কাজ হল, তিনি ভোট প্রচারে নেওয়া দানকে ছোট ছোট আকারে ভেঙে দিলেন, যাতে অনেক ব্যক্তি, সংস্থাই সহজে দান দিতে পারে। ১৯৭২এ কর্ক, নিক্সনের ভোট প্রচারে আড়াই লাখ ডলার দান করেন। কর্ক কিন্তু নিক্সনকে চিনতেন না। কর্কের কাছে আড়াই লাখ, এক খড় গাদায়, এক আঁটি খড়ের সমান। এই দানের বছরেই নিক্সন, চটজলদি খাবার কম্পানিগুলির আনা একটি বিল – যা পরে ম্যাকডোনাল্ড বিল নামে পরিচিত হবে, পাস হয়। বিলের বলা ছিল ১৬-১৭ বছর বয়সের কিশোর কর্মীরা, দেশের আইনে ধার্য ন্যুনতম বেতনের থেকে ২০ শতাংশ কম বেতন পাবে। এর ফলে কর্ক তার খাবারের দাম বাড়ালেন, আর কর্মীদের মাইনে থেকে ২০ শতাংশ বাঁচালেন। এ নিয়ে আমেরিকায় অনেক বিতর্ক হয়েছে। কর্ক সমালোচকদের কুত্তার বাচ্চা অভিধা দিয়েছিলেন।
এই অধ্যায়ে এরিক স্পষ্ট করে দিচ্ছেন কিভাবে কর্পোরেটরা সরকারি সুযোগ, অর্থ, বিনিয়োগ কাজে লাগিয়ে নিজেদের মধ্যে বাজার আর লাভটা বেঁটে নিতেন, মানুষের মগজ ধোলাই করতেন। সমাজতন্ত্রে চরম বিতৃষ্ণা সত্ত্বেও চারের দশকে, ব্যবসায় দয়ে পড়ে সরকারি সাহায্য নিয়ে ডিজ়নি, নিজের কোম্পানি বাঁচিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সরকারি অর্থে সামরিক বাহিনীর জন্য প্রচুর প্রশিক্ষণ এবং প্রচার ছবি তৈরি করেন যেমন Food Will Win the War, High-Level Precision Bombing, A
Few Quick Facts About
Venereal Disease.। যুদ্ধের সময়ে তিনি সামরিক বাহিনী আর চুক্তিবদ্ধ দালাল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ওতপ্রোত হয়ে কাজ করেছেন।
ঠাণ্ডা-যুদ্ধ-বিজ্ঞানেও তিনি একই রকমভাবে আমেরিকান প্রযুক্তি প্রচার করেছেন। যে সাধারণ আমেরিকান পরমানু যুদ্ধে ধংস হয়ে যাবার ভয়ে দিন গুজরান করত, তাদের জন্য তিনি আমেরিকার প্রযুক্তি যে নির্ভরযোগ্য সে তথ্য প্রচার করেছিলেন নানান তথ্যচিত্রে। যেমন ওয়েস্টিংহৌস ইলেক্ট্রিক কোম্পানির জন্য বানানো ছবির নামঃ দ্য ডন অব বেটার লাইফ। প্রযুক্তির প্রতি তার অনুরাগ প্রকাশ পেয়েছে তার থিম পার্ক ডিজ়নিল্যান্ডে টুমোরোল্যান্ড বিভাগে। তিনি এই নামেই একটা টিভি শো করতেন। থাকত স্পেস ভ্রমণ থেকে ভবিষ্যতের বাড়ির কাজের যন্ত্র পর্যন্ত সব কিছুকে রঙ্গিন চশমায় দেখার ব্যবস্থা। বেচুবাবু ডিজনির পণ্য ফেরির দর্শনই হল বিজ্ঞান ক্রেতাদের জীবন আরও মধুর করে।
তিনি ওয়ারনার ভন ব্রাউন এবং হেইনজ হাবারের মত প্রাক্তন নাজ়ি বিজ্ঞানীদের পরামর্শদাতা
রেখেছিলেন।
আইজ়েনহোয়ার সরকার সাধারনের জীবনে পরমানু প্রযুক্তি প্রচারের জন্য ডিজনিকে নিয়োগ করেন।
তিনি তখন জেনারেল ডায়নামিক্সএর খরচে Our Friend the
Atomএরমত অনেকগুলো প্রচার সিরিজ বানান।
তিনি বললেন পরমানু বিস্ফোরণ ভয়ের কিছু নয়, বরং বেশ আনন্দের।
এই কোম্পানি ডিজ়নিল্যান্ডে টুমোরোল্যান্ড বিভাগ স্পন্সর করে। মনসান্তো ডিজ়নিল্যান্ডের প্লাস্টিকের বাড়িটি বানিয়ে দেয়। জেনারেল ইলেক্ট্রিক
বিদ্যুতের কাজ করে দেয়, যেখানে দেখানো হয়, ইলেকট্রিকে তৈরি আমেরিকার এক মডেল গৃহবধূ, “a great big beautiful tomorrow” গান গেয়ে নির্দেশ করে দেন, আগামী দিনে গৃহিনীরা কি ধরণের আধুনিক রান্নাঘরএ ইলেক্ট্রিকে চলা নানান স্বপ্নের, বন্ধুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবেন।
তৈরি হয় অটোপিয়া, রিকফিল্ড অয়েলের অর্থানুকূল্যে একটি নতুন পুরনো গাড়ির স্বপ্নরাজ্য।
যেখানে ঢোকার সময় লেখা থাকে তুমি আজ এখানে, যেখানে ঢুকছ, সেটি আগামী দিনের স্বপ্নের কথা তোমায় জানাবে।
ডিজনির কোম্পানি আজও স্বপ্ন বিক্রি করে। বিনদনের মোড়কে স্বপ্ন বিক্রি করে ডিজনি তেল থেকে প্রযুক্তি সব কিছু বেচেছেন আমেরিকার ক্রেতাদের কাছে। শিশুদের সামনে যে স্বপ্নের জাল ডিজনি বুনেছিলেন ডিজনিল্যান্ডে বা তার টিভির উপস্থাপনায়, ৬০এর যুবকেরা সেই জাল ছিঁড়তে চাইছিল, বিদ্রোহী হয়ে উঠতে চাইছিল। ফলে ষাটের দশকে এই স্বপ্নকে আরও বড় আরও রঙ্গিন করে বেচতে হল তাকে। ডিজনি তৈরি করলেন আরও বড়, আরও রঙ্গিন, আরও কর্পোরেটধন্য ডিজনি ওয়ার্ল্ড। যেখানে সাধারণ মানুষের স্বপ্নের সঙ্গে করপোরেটতন্ত্র ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে।
No comments:
Post a Comment