ম্যাকডোনাল্ড কলোরাডো শহরকে বেছেনেয়, নতুন ধরণের সাজসজ্জার পরীক্ষাগার হিসেবে। এখানেই সে এমন কিছু সফটওয়ার আর যন্ত্র তৈরি এবং পরীক্ষা করতে শুরু করে, যা তার ব্যবসায় নানান স্তরের বিপুল পরিমাণ কর্মীকে প্রতিস্থাপিত করতে পারে। তৈরি হল রবোটিক ড্রিঙ্ক যা নিজে নিজেই কাপ তুলে তাতে বরফ পুরে সোডা ঢালতে সক্ষম। ঠাণ্ডা আলুর ফ্রাইগুলো মোড়ক থেকে বার করে ফুটন্ত তেলে ফেলে একবার তুলে ঝাঁকিয়ে নিয়ে দ্বিতীয় বার বার কিছুক্ষন ভেজে গরম আলোর তলায় ফেলে রাখতে পারে, যাতে আলুগুলো ক্রেতার পাতে যাওয়া পর্যন্ত কুড়মুড়ে
থাকে। রান্নাঘরে মনিটর বসানো রয়েছে, যা সারাক্ষন ক্রেতাদের চাহিদা দেখায়। সেই রান্নাঘরটি চালায় একটি কম্পিউটার, যা সেদিন আর পুরনো অর্ডারের ইতিহাস ঘেঁটে সেদিনের আর কি কি চাহিদা হতে পারে তার জন্য বিভিন্ন স্তরের কর্মীকে তৈরি রাখে। এক কর্মী এরিককে জানান সেই যন্ত্র আর সফটওয়াটি একটি জাপানি গাড়ি কোম্পানি থেকে কিনে আনা হয়েছে সময় বাঁচাবার জন্য।
পরের বিভাগটি এরিক ব্যবহার করছেন চটজলদি খাবারের কম্পানিগুলোর শ্রমশক্তি বিশ্লেষণে। নানান তথ্য, তত্ব ঘেঁটে এরিক বলছেন এদের ৭৫ শতাংশ শ্রমিকই ২০ বছরের নিচে বয়স - “Instead of relying
upon a small, stable, well-paid, and well‑trained workforce, the fast food
industry seeks out part‑time, unskilled workers who are willing to accept low
pay. Teenagers have been the perfect candidates for these jobs, not only
because they are less expensive to hire than adults, but also because their
youthful inexperience makes them easier to control.”
তিনি ব্যবসা ঐতিহাসিক আলফ্রেড ডি শ্যান্ডলারের তত্ব, থরোপুটকে চটজলদি খাবারএর কোম্পানির মূলমন্ত্ররূপে তুলে ধরছেন। এই তত্বটি অতি-উৎপাদনের কারখানার(মাস প্রডাকসন) জন্য ব্যবহার হয়। এর অর্থ, এই নয় যে মোট কত জন খাটল, বা কত ভাল যন্ত্রশক্তি ব্যবহার হল, আসলে কত তাড়াতাড়ি, কত বেশি শ্রম শক্তিকে খাটিয়ে সবথেকে বেশি উৎপাদন পাওয়া যায়। যদিও ম্যাকডোনাল্ড ভাইয়েরা এই শব্দে তাদের স্পিডি সার্ভিসকে বর্ণনা করেন নি, কিন্তু এর মূল দর্শনটাই কিন্তু থরোপুটএর ভাবনাকে ভিত্তিকরেই গড়ে উঠেছিল।
তিনি বলছেন, চটজলদি খাদ্য চেন ব্যবসায় সামরিকীকরন ঘটেছে। এদের কর্মীদের সেনাবাহিনীর মত নিয়মানুবর্তিতায় খটানো হয়। কোম্পানিগুলো লিখিতভাবে বলেদেয় কোন কোন পদ্ধতিতে, ধারাবাহিকতায়, কত কম সময়ে একটি কাজ সম্পন্ন করতে হবে। তারা এমন যন্ত্র ব্যবস্থা তৈরি করেছে, যাতে কম দক্ষতায় চালানো যায়। একদিনের পুরনো কর্মী তার দক্ষতা দিয়ে যে কোনও কাজ সম্পন্ন করতে পারে। তাই সাধারণ কর্মীদের প্রশিক্ষনের জন্য আর অর্থ ব্যয় করতে হয় না।
এবং সেই জন্যই চটজলদি খাবার কোম্পানিগুলি কম বয়সী কর্মী খোঁজে, যাতে সে বেশি বেতন চাইতে না পারে, ইউনিয়ন করতে ভয় পায়। এরিকের অভিযোগ, কর্মীদের প্রশিক্ষনের জন্য কোম্পানিগুলো সরকারের থেকে বিপুল পরিমাণ অনুদান পেত। তারা সেই অনুদান আরও বেশি কর্মী প্রতিস্থাপন করা যায়, এমন যন্ত্র তৈরি করার কাজে লাগিয়েছে। এছাড়াও কর্মীদের ওপর তিনি স্ট্রোকিংএর প্রয়োগ নিয়েও আলোচনা করেছেন। স্ট্রোকিংএর অর্থ কর্মীরা যে, কোম্পানির কাছে গুরুত্বপূর্ণ তা নানা ভাবে জানানো। এরিকএর তত্ব, কোম্পানির আমলারা কর্মীদের অহংকে সুড়সুড়ি দিয়ে তাদের যথাযোগ্য বেতন দেয় না, বা বেতন বাড়ানো বন্ধ করে দেয়।
তিনি খুব গভীরভাবে দেশের এই চটজলদি দোকানগুলোসহ নানান কাজে আমেরিকার বিশাল সংখ্যক যুব সমাজের কাজে লেগে যাওয়া, তাদের কাজের নিরাপত্তা, ঝঞ্ঝাটসহ নানান বিষয় নিয়ে বিশদে আলোচনা করেছেন। এই সারসংক্ষেপে সেই আলোচনা করা সম্ভব নয়। এবং ভারতের প্রেক্ষিতে এই বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে আলোচনারযোগ্য। আমাদের অনুরোধ মূল বইটি পড়ুন এবং এই অধ্যায়টি পড়লে, যে অপচয়ের, অসম্মানের মধ্যে দিয়ে আমাদের যুবরা যাচ্ছে তা তার কলমে পড়ে মন খারাপ হবেই।
এরিক বলছেন, এই চেনগুলোতে প্রচুর ক্রাইম হয়। এই ক্রাইমএর জন্য, এই চেনগুলোতে প্রত্যেক মাসে ৪-৫জন কর্মী মারা যান। এবং অধিকাংশ ক্রাইম করে সংস্থার সাবেক কর্মীরা। এনিয়ে তিনি অনেক কথা বলেছেন।
No comments:
Post a Comment