জগদীশ নারায়ণ সরকার
চতুর্থ পর্ব
১। মীর জুমলার নতুন করে আক্রমন
অভিযানের মাঝামাঝি সময়ে(২০ সেপ্টেম্বর ১৬৬২) যে দুর্যোগের ঘনঘটা ছেয়ে গিয়েছিল মীর জুমলার বাহিনীর ওপর সেটা পুরপুরিই কেটে গেল। দেখতে দেখতে বর্ষা চলে গেল, বন্যার জল নেমে গেল, রাস্তা নতুন করে সারাই করা হল এবং খবরাখবর আদান প্রদান হতে লাগল। দেবলগাঁও থানা তৈরি হবার পর মীর জুমলা গড়গাঁওএর সঙ্গে লাখাউএর সংযোগ তৈরির কাজটি সম্পন্ন করতে উদ্যোগী হলেন। ২৫ সেপ্টেম্বর আবুল হাসান সাইরাং এবং দেবলগাঁওএর দিকে এগোলেন দিখুর তীরে গোলাকার পাড় ঘুরলেন। অহোম পথ প্রদর্শকদের সঙ্গে নিয়ে তিনি অহোম বিদ্রোহীদের দমন করলেন গাজি খানের নেতৃত্বে সাইরাং, গজপুরে সৈয়দ আহমেদ জামাতদারের নেতৃত্বে থানা তৈরি করলেন। দেবলগাঁওতে ঢুকে তিনি তার বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। অসমের অবস্থা বর্ণনা করে সম্রাটের উদ্দেশ্যে এবং ঢাকার উদ্দেশ্যে লেখা মীর জুমলার চিঠি, দরঙ্গের রানী-ডোগারের উদ্দেশ্যে পরওয়ানা, গুয়াহাটির মুঘল ফৌজদারকে, এবং কালিয়াবরের থানাকে দেওয়ার উদ্দেশ্যে চিঠিগুলি পাঠানোর জন্য দেওয়া হল। খুব তাড়াতাড়ি ইস্তিয়াখ খানকে অসমের সুবাদার, রশিদ খানকে কামরূপের ফৌজদার করার পাদশাহের ফরমানটি পৌঁছল। প্রত্যেকেই তাদের পদ নিতে অস্বীকার করেন। যেহেতু নদী পথ তখনও সুরক্ষিত নয়, তাই নৌসেনাধ্যক্ষ্যের মার্ফত দেবলগাঁও এবং তার পরে গড়গাঁও পর্যন্ত ভূমিপথে বাহকদের সাহায্যে ব্যাপারীদের রসদ এবং পশু পাঠানো হল। সেগুলি গড়গাঁওতে পৌঁছল ২৪ অক্টোবর। আবুল হাসানের নৌবহরে করে কিছু রসদ সেখানে পৌঁছল ৩১ তারিখ। ‘দীর্ঘ দিন পরে সাম্রাজ্যের বাহিনীর প্রত্যেকের প্রত্যেকটি চাহিদা পূর্ণ হল’।
২। টিপামের উদ্দেশ্যে মীর জুমলার পভিযান
মাঠঘাট শুকনো হয়ে যাওয়ায় মুঘল সেনাবাহিনী পুরোন আমলের মত অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠল। অহোম রাজা আগের মত নামরূপের পাহাড়ে চলে গিয়েছিলেন। বাদুলি ফুকন দুদিক রেখে তার ঘুটি সাজাতে লাগল। একদিকে তিনি এবং গড়গাঁওনি ফুকন দিল্লি নদীর তীরে বাঁধ চওড়া আর জোরদার করছেন, অন্যদিকে মীর মুর্তাজা মার্ফত মীর জুমলার কাছে শান্তিবার্তাও পাঠালেন। কিন্তু মীর জুমলা অহোমদের শর্তহীন আত্মসমর্পন চান আর যতক্ষণ না ফুকনেরা তার জন্য অপেক্ষা করবে ততক্ষণ তিনি কোন শান্তিচুক্তি মান্য করবেন না। গড়গাঁওএর ২০ মাইল উত্তরপূর্বে দুদিক থেকে বাদুলি ফুকনের শিবির আক্রমন করার পরিকল্পনা নিলেন। আবুল হুসেইন ১০ নভেম্বর দিল্লির দিকে নদী বাহিত হয়ে পিছন দিক থেকে গেল আর মীর জুমলা নিজে ১৬ নভেম্বর দান্দগা এবং দিল্লি নদি হেঁটে পেরোলেন। বাদুলি ফুকন তার বিশাল এবং সুরক্ষিত গড় ছেড়ে পালিয়ে গেলেন।
২০ নভেম্বর মীর জুমলা দিহিঙ্গে পোঁছে দেখলেন বুড়াগোহাঁই সুরক্ষিত দুর্গ ছেড়ে বরকটে পালিয়ে গিয়েছেন। দক্ষিণে টাওকাক, উত্তরে দিহিং পশ্চিমে শোলাগুড়ি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা সেনানায়ক মীর জুমলার নাম শুনেই পালিয়ে গেলেন।
বহুকাল ধরে অসমজুড়ে অভিযান, মন্বন্তর-মহামারী এবং বিপ্রতীপ পরিবেশ মীর জুমলার শ্রীরের ওপর কামড় বসাতে শুরু করল। যে রোগে তিনি মারা যাবেন সেই রোগটি তাকে আক্রমন করল। শত্রুর পরিখা দেখার সময় ঘোড়া থেকে তিনি অচেতন হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন। যতক্ষণনা তার বিছানা তৈরি হল ততক্ষণ তিনি অজ্ঞান ছিলেন। দিলির খান কোলে তার মাথা নিয়ে বসে রইলেন। শিহাবুদ্দিন তালিশ দশ দিন পরে দেখতে এলেন।
৩০ নভেম্বর রাজার দ্বিচারিতা অনুভব করে বাদুলি ফুকন শিল্লিখাটোলে মীর জুমলার সঙ্গে তিন ভাইকে সঙ্গে নিয়ে দেখা করতে এসে রাজাকে ধরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন। মীর জুমলা তাকে ডেকা রাজা(ছোট রাজা) উপাধি দিলেন। পূর্ব অসমের মুঘল প্রশাসনিক প্রধান হওয়ায় গড়গাঁও থেকে নামরূপ পর্যন্ত গ্রাম এবং শহরের এবং ত্রিমোহনী পর্যন্ত পথ এবং জলসীমায় দায়িত্ব পেলেন ফুকন।
দলত্যাগী ফুকনের পথ দেখানোয় অসুস্থতা সত্ত্বেও মীর জুমলা এগিয়ে চললেন। ২ ডিসেম্বর দরবেশ বেগকে দায়িত্ব দিলেন অহোমদের তাড়িয়ে নিয়ে এসে তাদের শোয়ালগুড়ির হাতিগুলি দখল করার। ৬ তারিখে তিনি নামরূপের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে পরের দিন তিনি শোয়ালগুড়ি পৌঁছলেন। ৮ তারিখে শোয়ালগুড়ি নদী পেরিয়ে দরবেশ বাগ এবং বাদুলি ফুকনকে নিয়ে চললেন।
১০ ডিসেম্বর অসুস্থ হওয়ার এই প্রথম তিনি ধারাস্নান করলেন এবং পরিপূর্ণ খাওয়ার খেলেন, অথচ পাকস্থলীতে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করতে লাগলেন। রাতে ধুম জ্বর আর বুকে ব্যথা হতে লাগল। গিলানের ডাক্তার কারিমা তার চিকিতসা করাতে অস্বস্তি কিছুটা লাঘব হল। কিন্তু রক্ত পরীক্ষা করতে দিতে আস্বীকার করলেন রোগী। দুই বা তিন দিন পরে প্লুরিসি(ফুসফুসের রোগ) দেখা দিল।
তবুও মীর জুমলা বাদুলি ফুকনের সাহায্যে রাজাকে ধরতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু নেতার অসুস্থতায় মনভেঙ্গে যাওয়া মুঘল বাহিনী নামরূপ ঢুকতে অস্বীকার করল। এলাকা দেখে তাদের ধারণা হল সেখানে বাহিনীর সব কিছু হারিয়ে যাবে – এই এলাকার বাতাসে মৃত্যু আছে, এখানে জলস্থল বাহিত হয়ে কোন রসদ এসে পৌঁছবে না, যখন শুনল এখানে জানুয়ারির শুরুতেই বর্ষা আসে, অনদূর অতীতে মন্বন্তর-মহামারী থেকে ভুগে ওঠার, খালি পেট থাকার স্মৃতি, সাথী হারানোর স্মৃতি তখনও জ্বলজ্বল করচ্ছে প্রত্যেক সেনার মনে। নামরূপের পাহাড়ি এলাকার উঁচু পথ দেখে তাদের মনে হল, রাজাকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টার জেদে যদি তারা এই রাস্তায় ঢোকে, তাহলে হয়ত তাদের বেরিয়ে যাবার কোন পথ থাকবে না, রাজার বাহিনী তাদের চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে কচুকাটা করবে। দিহিং পেরোনোর সময়েই সাধারণ এবং সেনাপতিরা তাদের নেতাকে ছেড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল। দিলির খান তাদের শান্ত রেখে মহম্মদ বেগকে দিয়ে মীর জুমলাকে অবস্থা জানাতে খবর পাঠান।
সেনার দোদুল্যমান মনোভাবে মীর জুমলা আশ্চর্য হয়ে গেলেন। শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকল। ১৫ ডিসেম্বর যখন একটা পালকিতে তোলা হল তাঁকে তার চেহারা খুবই ভেঙ্গে পড়েছে এবং চোখে মুখে আশংকার অন্ধকার। ১৮ তারিখে মানরূপের গিরিপথের মুখের গ্রাম টিপামে শিবির ফেললেন দিহিঙ্গের অন্যান্য এলাকার সুরক্ষা মিয়ানা খানের দায়িত্বে দিলেন।
৩। শান্তির দিকে
টিপাম মীর জুমলার অসম অভিযানের যেমন শেষ বিন্দু, তেমনি এটি তার পিছিয়ে আসারও এলাকা। শান্তিচুক্তির দরকষাকষি শুরু হল। দুপক্ষই শান্তি চায়। অহোমদের দিক থেকে তাদের এলাকা বিদেশিদের কবলে গিয়েছে এবং তাদের রাজা – স্বর্গদেওকে সেই বাহিনী রাজধানী চ্যুত করেছে। ছোটখাট লড়াই দিয়ে তাদের জাতীয় অবমাননার বিচার করা যাবে না। শত্রুর হাত থেকে দেশকে উদ্ধারের ক্ষেত্রে অহোমদের কাছে কোন মূল্যই যথেষ্ট নয়। আপাতত পেশকাশ বা রাজস্ব দেওয়ার শর্তে একজটা কার্যকরী শান্তিচুক্তিতে উপনীত হতে তারা তীব্রভাবে আগ্রহী। আভ্যন্তরীণ উদ্গীরণ বা কোন বহিঃপ্রভাব যুক্ত অবস্থার পরিবর্তনের বাহানায় আগামী দিনে সেই চুক্তি উল্লঙ্ঘন করা যেতে পারে। অহোমেরা নিশ্চিত ছিল মুঘলদের সঙ্গে আরও বেশি দিন লড়াই চললে আসমের দুর্গতি আরও বাড়বে, এই বার্তা নিয়ে প্রধান সেনাপতি আতন বুড়াগোঁহাই রাজার প্রবাস প্রাসাদে দেখা করে তাকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করেন, বর্তমান অবস্থার অনুকূল প্রতিকূলতা বোঝা, এবং শেষ পর্যন্ত শান্তিচুক্তিতে রাজাকে রাজি করান। বাদুলি ফুকন এবং অন্য অভিজাত অহোমের শিবির ত্যাগ রাজাকে চিন্তায় রেখেছিল। যে সেনাপতি না হারতে এবং শেষ দেখতে দৃঢপ্রতিজ্ঞ, তার বিরুদ্ধে বেশিদিন লড়াই চালানো যাবে না বুঝেই রাজা আর তার ফুকনেরা দেশকে বাঁচাতে শান্তিকেই একমাত্র হাতিয়ার রূপে বেছে নেন, এবং মীর জুমলার উদ্দেশ্যে দূত এবং উপহারের ডালি পাঠানো শুরু করেন।
কিন্তু অহোমদের শান্তির দেখনদারির চেষ্টা মীর জুমলা বাতিল করে দিলেন(৩০ নভেম্বর)। দিন পনেরো পরে এক গুরুত্বপূর্ণ অহোম দূত দিলির খানকে রাজি করিয়ে ফেলেন মীর জুমলাকে বোঝানোর দায় নিতে। বাস্তবে সেনাপতি সব থেকে অবাঞ্ছনীয় অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। তিনি বুঝে গিয়েছেন, মুঘল সেনাবাহিনীর অসম বিজয়েও শান্তিপূর্ণ সরকার গঠন অসম্ভব। জনগনের সাহায্যে বিদ্রোহীরা সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেই যতই মুঘলেরা প্রজাদের স্বার্থে কাজ করুক। সেনা শাসিত সরকার তৈরি করা অবাস্তব এবং সেটা তার মনের কোণেও ঠাঁই পায় নি। অথচ এই বিদেশে তার একমাত্র সম্বল সেনাবাহিনীই। দুর্দশার চরমে পৌঁছে গিয়ে সেনারা দেশে জয়ের সংবাদ নিয়ে ফিরতে চায় – এবং তারা বিদ্রোহের মুখে দাঁড়িয়ে। নিজের রোগ, নিজের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়া, শান্তিচুক্তি বাতিলের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া এবং মুসলমান যুদ্ধ বন্দীদের অবস্থা আন্দাজ করে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মীর জুমলা শান্তিচুক্তিতে রাজি হতে বাধ্য হন। বাস্তবিক অবস্থা, তাকে বাধ্য করেছে শান্তিচুক্তিতে উপনীত হতে এবং এটাই এখানকার সক্কলের জন্য সব থেকে চাহিদাপূর্ণ সমাধান বলে তার মনে হল। রোগ শয্যায় শুয়ে থেকেও তিনি হারের মুখ নয়, কঠোরতাপূর্ণ মনোভাবে নির্দেশ দিলেন মুঘল বাহিনী আরও এগোতে চায় কিন্তু টিপামে শান্তিচুক্তির দরকষাকষি শুরু হোক। তার দূত রাজা ভোর মল রাজার দূত ফুকনদের মীর জুমলার মনোভাব জানিয়ে দিলেন। দিলির খানের মধ্যস্থতায় ঘিলাঝরি ঘাট, টিপামের চুক্তি সম্পন্ন হল ৯ মাঘ ১৫৮৫ শক, ২৩ জানুয়ারি, ১৬৬৩তে।
মীর জুমলা এই চুক্তির মাধ্যমে সম্মানের শান্তি দাবি করতে পারলেন। প্রাথমিকভাবে সম্রাটের সম্মান উঁচুতে থাকল এবং অহোম রাজাকেই মাথা নোয়াতে হল। সম্রাটের অধীনস্থ হয়ে জয়ধ্বজ রাজ্য চালাবার অনুমতি পেলেন। এর জন্য গুয়াহাটির মুঘল দরবারে একজন দূত এবং পাইক বাহিনী পাঠানোর শর্তে রাজি হলেন। উপযুক্ত উপঢৌকন সহ তার এক কন্যা এবং টিপামের রাজার পুত্রকে দরবারে পাঠাবার শর্তে রাজি হলেন।
দ্বিতীয়ত, যুদ্ধের বিপুল ক্ষতিপূরণ রাজার থেকে চাওয়া হল – তাকে সেই মুহূর্তে দিতে হবে ২০ হাজার তোলা সোনা, ১,২০,০০০ তোলার রূপো(রূপিয়া), ২০টি সুসজ্জিত হাতি। পরের বছর থেকে বছরে ৩ লাখ রৌপ্য(রূপিয়া), বছরে তিনবার ৯০টা হাতি। তৃতীয়ত অসম রাজ্যের চারটি বড় স্তম্ভ বুড়াগোঁহাই, বরগোঁহাই, গড়গাঁওনিয়া ফুকন(রাজসুয়ার রাজমন্ত্রী) এবং বড়পাত্র ফুকনদের একজন করে পুত্রকে দিল্লিতে জামিন হিসেবে রাখা হবে যতক্ষণনা এই ক্ষতিপূরনটির কিস্তিগুলি মুঘলদের হাতে এসে না পোঁছাচ্ছে। চতুর্থত রাজা গুয়াহাটিতে বছরে ২০টা করে হাতি উপঢৌকন হিসেবে পাঠাবে। পঞ্চমত মুঘলদের অসমের আধিকার পূর্ব দিকে বাড়বে, রাজাকে তার রাজ্যের প্রায় অর্ধেক মুঘলদের দিতে হল – উত্তরাকোলে দরং - হাতি সমৃদ্ধ, নাকটি রানী, গারো পাহাড়, বেলতলা এবং ডিমারুয়া(বা দক্ষণকোলের ডুমারিয়া পরগণা) এলাকা। পূর্ব দিকে মুঘলদের সীমান্ত মানস থেকে বেড়ে ভরালী পর্যন্ত গেল, এবং উত্তরে কলং নদী দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্রের দক্ষিণ পাড়। কামরূপের মুঘল এলাকার যুদ্ধ বন্দীসহ, গ্রেপ্তার হওয়া বাদুলি ফুকনের পরিবারকে মুক্তি দিতে সম্মত হল।
আওরঙ্গজেবকে জয়ধ্বজের আত্মসমর্পনের চিঠিটি মীর জুমলা পাঠালেন দরবারে। চুক্তি অনুমোদন এবং স্বাক্ষর করে পাদশাহ মীর জুমলাকে যথাবিহিত উপহার দিলেন।
তবে চুক্তিতে যে সব ধারার বা শর্তের কথা বলা হয়েছিল সেগুলির সব কটি রূপায়ণ হওয়া সম্ভবপর হবে না তা বোঝা গেল। মীর জুমলা অসমে থাকালীনই জামিনদার, কিস্তির পরিমান সহ হাতির সংখ্যা, সীমান্ত নিরূপন, মীর জুমলার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়া যুদ্ধবন্দী আহোমদের ছেড়ে দেওয়া ইত্যাদি নিয়ে বিরোধ বাধল। ১৬৬৩ সালের ৫ জানুয়ারি রাজা, রাজকন্যা, চাহিদামত ৩০০০০ তোলা সোনা, ৪০০০০ তোলা রূপো, ১০টা হাতি মুঘল শিবিরে পৌঁছে দিলেন। তখনও মীর জুমলা লাখাউতে পৌঁছন নি। কিন্তু মীর জুমলা জামিনদারদের হাতে নিতে ইচ্ছুক। অহোমেরা বুড়াগোঁহাইয়ের ছেলের যায়গায় ভাইপোকে পাঠাল। মীর জুমলার কঠোর দাবিতে একজন গুটিবসন্তে ভোগা ছেলে পাঠানো হল, মীর জুমলা বুড়াগোঁহাইএর অন্য সন্তান(রাজার বোনের পুত্র) দাবি করলেন। কিন্তু সে কিছুদিন আগেই মারা গিয়েছে। মীর জুমলা তখন বরফুকনের (রাজার আর এক বোনের) দুই সন্তান দাবি করলেন। কিন্তু দিলির খান এবং রাজা ভুর মলের চাপ সত্ত্বেও ফুকনেরা এই দাবি মানতে রাজি নয়, চুক্তিতে নেই যুক্তিতে। মীর জুমলার মনে হল দিলির খান যদি আরও বেশি চাপ দিতেন তা হলে হয়ত হাতবদলটা হয়েই যেত। দিলির খান নিজে সেনাপতির ঘরে এসে তার মনের বিরুদ্ধতা দূর করার চেষ্টা করলেন।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment