Friday, February 17, 2017

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা৬ - উনবিংশ এবং বিংশ শতে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র এবং দেশজ চিকিৎসা ব্যবস্থা ১৮০০-১৯৪৭

পুনম বালা
চরক সংহিতা আটটি বিষয় ১২০টা অধ্যায়ে বিভক্ত
১। সূত্রস্থান- ৩০টি অধ্যায়ে ওষুধের ইতিহাস, সাধারণ চিকিৎসা সূত্র, তাত্ত্বিকভিত্তি ইত্যাদি
২। নিদানস্থান – ৮টি অধ্যায়ে বিভিন্ন রোগের কারণ আর তার উপসর্গগুলি আলোচিত হয়েছে,
৩। বিমানস্থান – ৮টি অধ্যায়ে বিভিন্ন উপাদানের চরিত্র আর গুণাগুন, চিকিৎসার পদ্ধতি এবং চিকিৎসকেদের চিকিৎসা করাবার নীতি এবং নির্দেশিকা সমূহ আলোচিত হয়েছে
৪। শরীরস্থান – ভ্রুণতত্ত্ব এবং শারীরবদ্যা ৮টি অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে,
৫। ইন্দ্রিয়স্থান – ১২ অধ্যায়ে রোগের পূর্বাভাষ এবং চিকিৎসা
৬। চিকিৎসাস্থান – ৩৬ অধ্যায়ে ভেষজ, পথ্য, ফার্মাকোলজি বিষয়ে আলোচনা আর আয়ুর্বেদের আরোগ্যতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা
৭। কল্পস্থান – ভারতীয় ঔষধের ফার্মাকোপিয়া নিয়ে ১২ অধ্যায়ে আলোচনা
৮। সিদ্ধিস্থান – এনিমা(ডুশ?), রেচন, মুত্রাধার বিষয়ক আলোচনা ১২টি অধ্যায়ে
অসুস্থতার কারণ হিবে ধরা হয় পরিবেশগত উপাদানগুলির কোনটা বা মিলিয়ে মিশিয়ে অসামঞ্জস্য বা আধিপত্য ঘটা। চিকিৎসা সাধারণত ভূমিপরীক্ষা বা অসুস্থ মানুষের পরিবেশ পরীক্ষা হওয়ার কথা বলে, তাহলেই রোগির সঠিক অবস্থা পরিজ্ঞাত হওয়া যায়। পরিবেশ পরীক্ষা অর্থে তার রোগে সামাজিক অবস্থা যেমন খাদ্যাভ্যাস, জীবনচর্যা, এবং অন্যান্য রীতিনীতি কি প্রভাব ফেলছের তা জানা। সুশ্রুত সংহিতাতেও সরাসরি রোগীর চিকিতসায় ইন্দ্রিয়-উপলব্ধি(সেনস-পার্সেপসন) প্রয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। মানবের শারীরিক গঠন জানতে পারলে চিকিতসা করতে সুবিধে হয়, এমন কথা বলেছে সুশ্রুত সংহিতা।
আয়ুর্বেদে চিকিতসাবিদ্যা(থেরাপিটিকস) বিকশিত হয়েছে পরিবেশের উপাদান এবং শারীরিক উপাদানের সম্মিলিত জ্ঞানের সমন্বয়ে, কেননা স্বাস্থ্য এবং রেগের চরিত্র সরাসরি নির্ভর করে পরিবেশের নানান উপাদানের ওপর। দেহের মধ্যে জাগতিক উপাদানের কিছু উপাদান প্রবেশ করলে বায়ু, কফ আর পিত্তের আলাদ আলাদা অথবা যৌথ বিকার ঘটে। চরক এগুলিকে সামান্য এবং বিশেষ, দুভাগে ভাগ করেছেন। এই দুটির ওপর নির্ভর করে আয়ুর্বেদে নিদান, ঔষধ আর চিকিৎসার প্রকরণ নির্ধারিত হয়।
আয়ুর্বেদকে বিজ্ঞান রূপে অভিধা দেওয়া যায় তার দ্বি-নিদানতত্ত্ব অনুসারে ১)আরোগ্যদায়ক(কিউরেটিভ) ২) নিবারক(প্রিভেন্টিভ)। প্রথমটি দেহের ভিতরের ও বাইরে ওষুধ দিয়ে সারাবার প্রক্রিয়া, এবং দ্বিতীয়টি ব্যক্তিগত এবং সামাজিক স্বাস্থ্যপ্রকরণ, যা দিয়ে মানুষ উজ্জীবিত বা নিরোগ হতে বা দৈহিক ক্ষয়কে পিছিয়ে দিতে পারে গাছগাছড়া ব্যবহার করে। আর শেষতম হল যোগে রোগ আরোগ্য এবং দেহ ও মনের শান্তি।
চিকিতসা স্থানের চিকিৎসাবিদ্যাগত(থেরাপিটিক) চরিত্র ব্যবহার বিষয়ে চরক সংহিতায় বলা হয়েছে, ইতি সর্ব-বিকরণম ইতদ চিকিতসম, স্থানম এতদ হি তন্ত্রস্য রহস্যম পরম উত্তমম।
চরক এবং সুশ্রুত সংহিতার মৌলিক পার্থক্য হল, এই দুটি সংহিতা চিকিৎসা শাস্ত্রের দুটি আলাদা আলাদা বিষয় নিয়ে লিখিত হয়েছে। সুশ্রুত সংহিতা ১২০টা অধ্যায় সম্বলিত ৫টি পুঁথিতে বিভক্ত –
১) সূত্রস্থান – শল্য চিকিৎসার হাতিয়ার সমূহ এবং শল্যকিচিকিতসাবিদ্যা আলোচিত হয়েছে ৪৬ অধ্যায় জুড়ে,
২) নিদান স্থান – অসুখের নিদানসূত্র আলোচিত হয়েছে ১৬ অধ্যায় জুড়ে,
৩) শরীর স্থান ১০ অধ্যায় জুড়ে শারীরবিদ্যা, ভ্রুণবিদ্যা এবং কাটাছেঁড়ার পদ্ধতি শিক্ষা,
৪) চিকিতসা স্থান ৪০ অধ্যায় জুড়ে আয়ুর্বেদিয় চিকিতসকেরা যে থেরাপিটিক পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করেন, সে নিয়ে আলোচনা,
৫) কল্পস্থান – ৮ অধ্যায়ে বিষবিদ্যা আলোচিত হয়েছে।
দুটি সংহিতাতেই উপনয়ন প্রক্রিয়া দিয়েই চিকিতসকেদের প্রশিক্ষণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তারপর সারি দিয়ে সূত্র বা শ্লোকগুলি মনে রাখার প্রক্রিয়া শুরু, এরপর আলোচনা এবং অধ্যাপকের সঙ্গে কথাবার্তা। শল্য চিকিৎসায় নির্দিষ্ট পথের নির্দেশেনা ছাড়াও সুশ্রুত কিন্তু প্রায়োগিক হাতে কলমে আর্জিত জ্ঞানের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলছেন একজন ছাত্র শিখবে, মৃত পশুর নাড়ি উন্মোচন করতে, পোকায় খাওয়া কাঠ ও বাঁশে পরীক্ষা করতে, পুতুলের ওপর বাঁধাছাঁদা প্রয়োগ করবে, নরম মাংসকে কস্টিক দিয়ে দহন এবং ছ্যাঁকা দেওয়ার কাজ করতে।২৪
(চলবে)

No comments: